আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বরিশালে জেলায় জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। চলছে মিছিল, মিটিং ও পথসভা, উঠান বৈঠক ও মাইকিং। প্রার্থী ও তাদের নেতা-কর্মীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। নির্বাচন নিয়ে তুমুল উৎসাহ ও কৌতূহল বিরাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। জেলার ছয়টি আসনের ৩৫ জন প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারনার বিশ্লেষনে দেখা গেছে নৌকা, ট্রাক ও ঈগল মার্কার জয়ধ্বনি। জেলার ছয়টি আসনে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাঠে থাকলেও এখনও তাদের কোন জোরালো ভূমিকা দেখা যায়নি। এছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের পক্ষে এখনও শুরু হয়নি কোন প্রচার-প্রচারনা। অন্যদিকে জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে বরিশাল-১ ও ৫ আসনে আওয়ামী লীগ ও বরিশাল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেকটা বিজয়ের পথে রয়েছে। বাকি তিনটি আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আর এসব আসনের প্রবীনদের সাথে পাল্লাদিয়ে এগিয়ে নবীন প্রার্থীরা।
বরিশাল-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রভাবশালী প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এই আসনে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে তার বিজয় অনেকটা সু-নিশ্চিত। জানাযায় এই আসনে জাতীয় পার্টির সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী লাঙ্গল ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোঃ তুহিন আম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও দুই উপজেলার নির্বাচনী এলাকাতো দূরের কথা নিজ ভোট কেন্দ্রেও ওই দুই প্রার্থীর এজেন্ট দেওয়ার মতো কোন কর্মী-সমর্থক নেই।
বরিশাল-২ আসনে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিলো জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুইবারের সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত মহাজোটের সাথে আসন ভাগাভাগির কারণে ১৪ দলের শরীক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ওই আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছে। যদিও রাশেদ খান মেনন নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন। তালুকদার ইউনুস সভা করে নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেননের পক্ষে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার জন্য অনুরোধ করলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি এখনও মেনে নিতে পারেননি। ওই আসনের হতাশ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, যাকে এ আসনে নৌকা প্রতীক ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তিনি হলেন বরিশাল-৩ আসনের বাসিন্দা।
তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা করে এখানে নৌকা প্রতীক না দেয়ায় সবার মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্যদিকে এ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিতের পর ঢেঁকি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনিরুল ইসলাম এবং ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন শেরে বাংলার দৌহিত্র একে ফাইয়াজুল হক। ইতোমধ্যে বানারীপাড়ায় রাশেদ খান মেননের সভা চলাকালীন সময় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সূত্রমতে, ওই আসনের আওয়ামী লীগের বৃহত অংশের নেতাকর্মীরা নৌকা ছেড়ে ঈগল মার্কার পক্ষে কাজ শুরু করছেন। এই আসনে অপর প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা হলেন-কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী নকুল কুমার বিশ্বাস গামছা, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস লাঙ্গল, তৃণমূল বিএনপির আলহাজ মোঃ শাহজাহান সিরাজ সোনালী আঁশ ও এনপিপি’র সাহেব আলী আম।
বরিশাল-৩ আসনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরদার মোঃ খালেদ হোসেন স্বপন অনেকটা নির্বাচনী মাঠ গুছালেও বেশি দিন তা স্থায়ী হয়নি। আসন ভাগাভাগির স্রোতের কবলে তাকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে হয়েছে। আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুকে দেওয়া হয়েছে। টিপু লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন। আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীরা জানান, এখনো মহাজোটের প্রার্থী তাদের কাউকে ডাকেনি। তারা মনে করেন বিগতদিনের মত এবারও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তিনি কোণঠাসা করে রাখতে চাচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে তারা এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা মার্কার প্রার্থী না থাকায় ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য মোঃ আতিকুর রহমানের বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছেন। বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাসুম মাঝি বলেন, এ আসনে নৌকা প্রতীক না থাকায় নেতাকর্মীরা হতাশ। তাই এখানকার উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য আতিকুর রহমানের সাথে মাঠে নেমেছেন।
তবে নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন এ আসনের মুলাদী উপজেলার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, উন্নয়নের স্বার্থে দীর্ঘদিন থেকে তারা মুলাদী উপজেলার কোন বাসিন্দাকে দলীয় এমপি বানাতে চেয়েছেন। কিন্তু বরাবরেই বাবুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দাদের প্রার্থী দেয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মুলাদীর বাটামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা ড. মোহাম্মদ আমিনুল হক কবির ঈগল মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তাই তারা একজোট হয়ে ঈগল মার্কার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ঈগল মার্কার বিজয় নিশ্চিত করে তারা সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় বরিশাল-৩ আসনকে সম্পৃক্ত করবেন। তবে ভোটের মাঠে এর কোনো প্রভাব পড়বে না দাবি করে জাতীয় পার্টির বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, গোলাম কিবরিয়া টিপু এর আগেও এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এখানে জাতীয় পার্টির একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীই জয়লাভ করবে। এই আসনে অপর প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা হলেন-ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান হাতুড়ি, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আজমুল হাসান জিহাদ ছড়ি ও তৃণমূল বিএনপির শাহানাজ হোসেন সোনালী আঁশ।
বরিশাল-৪ আসনটি একসময়ের বিএনপি ও জামায়াত অধিষ্ঠিত এ আসনটি নানা কৌশলে ছিনিয়ে আনেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ। টানা দুইবারের এমপি পঙ্কজ দেবনাথ ওই আসনে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিনত করেছেন। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সাথে তার বিরোধের সূত্রধরে নানা অপপ্রচারের কারণে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয় দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদকে। শুরু থেকেই বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ বলে আসছিলেন, তিনি নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন না। কিন্তু শাম্মি আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়ার পর পরই পঙ্কজ অনুসারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা।
ফলে উপায় না পেয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনলাইনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পঙ্কজ দেবনাথ। এরপরই ভাগ্য খুলতে শুরু করে পঙ্কজ দেবনাথের। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দ্বৈত্য নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। যার প্রমান পাওয়ায় নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার এ রায়ের বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থী ইসির কাছে আপিল করেও কোন সুফল না পেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। সেখানেও নৌকার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ফলে ভাগ্য খুলতে শুরু করেছে ঈগল মার্কা নিয়ে নির্বাচনী মাঠের পাকা খেলোয়াড় বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথের। ওই আসনে জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান লাঙ্গল, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হৃদয় ইসলাম চুন্নু ছড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও তাদের তেমন কোন কর্মী সমর্থক নেই।
বরিশাল-৫ নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ১৯ ডিসেম্বরের এ রায়ের কারণে আপাতত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। যেকারনে এ আসনে অনেকটা বিজয়ে পথে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। ইতোমধ্যে প্রচার-প্রচরনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুরো নির্বাচনী এলাকা সরগরম করে রেখেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরে জাহিদ ফারুক শামীমের সহধর্মিণী মৃত্যুবরন করায় দলটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। যে কারনে দলটির পূর্ব ঘোষিত সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
এদিকে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের পাশাপাশি এ আসনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন দলের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ট্রাক মার্কার মোঃ সালাহউদ্দিন রিপন। অতীত কর্মকান্ডের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ট্রাক মার্কার প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপন। এ আসনের অপর প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা হলেন-জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস লাঙ্গল, এনপিপি’র আবদুল হান্নান সিকদার আম, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোঃ আসাদুজ্জামান ছড়ি ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহাতাব হোসেন ডাব। তবে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা ফিরে পেতে আবারও আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছেন বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবীর মাধ্যমে সাদিক আব্দুল্লাহ হাইকোর্টের আদেশের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদনটি দাখিল করেছেন। শেষপর্যন্ত সাদিক আব্দুল্লাহ তার প্রার্থীতা ফিরে পেলে পাল্টে যেতে পারে বর্তমানের নির্বাচনী মাঠের হিসেব নিকেশ।
বরিশাল-৬ আসনে টানা ২২ বছর পর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক প্রচারণার মাঠে ভোট চাচ্ছেন। তবে জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতনার পাশাপাশি বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম চুন্নু স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় এ আসনে নৌকার প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার পথটা মসৃণ হবেনা। সূত্রমতে, স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এরপর টানা ২৩ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মাঝের ২২ বছরে চারবার বিএনপি ও একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। আর ১৯৯৬ সালের পর ২০০১ সালেও বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হন। এরপর টানা তিনবার এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পাঁচবার বিএনপি, চারবার জাতীয় পার্টি ও দুইবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসনটি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, আওয়ামী লীগে ভর করেই জাতীয় পার্টিকে বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে হয়েছে। তবে টানা তিন বার জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার স্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা এই আসনের সংসদ সদস্য থাকায় তাদের অবস্থানের সাথে দলেরও অবস্থান বেশ জোরালো হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতারা। হিসেব বলছে, ভোটের দিনের আগে মাত্র একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ সংসদীয় আসনে নিজ দলের কোন্দল মেটাতে হবে নৌকার প্রার্থীকে। তা না হলে সদ্য অব্যাহতির পর ট্রাক মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুল আলম চুন্নু নৌকার প্রার্থীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কারণ ২০০৯ ও ২০১৪ সালে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় তিনি (চুন্নু) বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।
২০১৯ সালে এক যুগের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম চুন্নু বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একাংশ বলছেন, ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫১২ ভোটের বাকেরগঞ্জ উপজেলার সংসদীয় আসনের যে সীমানা, উপজেলা নির্বাচনেও একই সীমানা। তাই সেই হিসেবে শামসুল আলম চুন্নু এখন ভোটের মাঠের পাকা খেলোয়াড়। নৌকাকে জিততে হলে জাতীয় পার্টির পাশাপাশি ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল আলম চুন্নুর সাথেও হিসেবটা চুকিয়ে নিতে হবে। বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শামসুল আলম চুন্নু বলেন, দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন এবং দেবেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্ধিতামূলক করতে চাই। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিপুল ভোটে আমি বিজয়ী হবো। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এখনই কিছু বলতে নারাজ হলেও তার সমর্থকরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। অপরদিকে নৌকা মার্কার প্রার্থী আবদুল হাফিজ মল্লিক বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার সাথে আছেন এবং যারা নেই তারাও অচিরে নৌকার পক্ষে কাজ শুরু করবেন। এ আসনের অপর প্রার্থীরা হলেন-তৃণমুল বিএনপির টিএম জহিরুল হক সোনালী আঁশ, এনপিপি’র মোঃ মোশারফ হোসেন আম, জাসদের মোহাম্মদ মোহসীন মশাল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোঃ মাইনুল ইসলাম ডাব, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ শাহবাজ মিঞা ঈগল, কামরুল ইসলাম খান তরমুজ ও জাকির খান সাগর রকেট।
তবে শেষ পর্যন্ত দেখার বিষয় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ৬টি আসনে কে কোন আসন থেকে হাসবেন বিজয়ের হাসি। এটিই শুধু প্রতীক্ষার পালা!