বরিশালে পুলিশের জালে প্রতারক আরএম গ্রুপের দুই সদস্য

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

অবশেষে বরিশাল নগরীর রূপাতলী হাউস এলাকায় আরএম গ্রুপ নামের অফিস নিয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তরুন-তরুনীদের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া প্রতারক চক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই দুই প্রতারক বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।

এছাড়া অফিসের বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে আসবাবপত্র এবং চলাচলের গাড়ি ভাড়াসহ বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দেয় প্রতারক।

এমনকি বরিশালের একাধিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সেই টাকাও দেয়নি প্রতারক চক্র। গ্রেফতারকৃত কিরন ও রাজ আন্তঃজেলা প্রতারক চক্রের সদস্য।

কিরনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় ৫টি মামলা রয়েছে আর রাজের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। আমজাদ হোসেন কিরন যশোর জেলার বিবি রোড ঘোষ পাড়ার মৃত জয়নাল আবেদিনের ছেলে। রাজ রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানার আহম্মদপুর গ্রামের নওশাদ আলির ছেলে।

কোতোয়ালী মডেল থানার এসআই মীর আশরাফুল আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৫ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানের ভাড়া বাসায় প্রতারকচক্র অবস্থান করছিল। সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করে বরিশাল নিয়ে আসা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে এভাবে প্রতারনার ফাঁদ পেতে মানুষকে নিঃস্ব করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় নগরীতেও তারা প্রতারনার ফাঁদ পাতে। তবে এর সাথে আরো অনেকে জড়িত রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।

এসআই মীর আশরাফ আরো জানান, যত দ্রুত সম্ভব এ প্রতারক চক্রের সকলকে গ্রেফতার করা হবে। না হলে দেশের অন্য কোন জেলা বা উপজেলায় গিয়ে তারা আবার এ প্রতারনার ফাঁদ পাতবে।

এতে করে অনেক তরুন-তরুনীর পরিবার নিঃস্ব হবে। এ জন্য ওই প্রতারক চক্রের সকল সদস্যকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।

এ জন্য যে সকল বিজ্ঞাপন দেয়ার পর প্রার্থীদের কাছে টাকা চাইবে সে ক্ষেত্রে নিকটস্থ থানায় বিষয়টি জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আশরাফ।

তাতে করে ওই প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছ থাকলে তা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসবে। আর তারা প্রতারক হলে পুলিশ সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে।

গত ১ ডিসেম্বর বরিশাল নগরীর রূপাতলী হাউজিংয়ের হিরন পয়েন্ট-২ ভবনের ৭ম তলায় চাকরিতেভবনের ৭ম তলায় চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে প্রতারনার বিষয়টি ধরা পড়ে। হিরন পয়েন্টের মালিক হচ্ছেন সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের স্ত্রী সাবেক এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ। মাত্র ২৪ দিনের ব্যবধানে কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয় চক্রটির সদস্যরা।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা বলেন, গত ৮ অক্টোবর হিরন পয়েন্ট-২ ভবনের ৭তম তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় চক্রটি। ভবনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ভবনের ম্যানেজার আবু তালেব। মাসিক ৩৬ হাজার টাকা ভাড়া এবং অগ্রিম হিসেবে এক লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করা হয়।

৩ নভেম্বর স্থানীয় তিনটি দৈনিকে ম্যানেজারসহ ৮টি পদে জনবল চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় ওই চক্রটি। আবু তালেব বলেন, কয়েকদিন আগে থেকেই অফিসের যত মালামাল ছিল তা কুরিয়ারে টাঙ্গাইলে পাঠানো শুরু করে। ওই সময় জিজ্ঞাসা করলে নতুন ডেকরেশনের কথা বলে।

আর তাদের আচার-ব্যবহার এবং অফিসের সাজসজ্জায় কোন সময় মনে হয়নি এরা প্রতারক চক্র। বিজ্ঞাপনে সর্বনিম্ন ৯ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা বেতনের কথা উল্লেখ রয়েছে।

আকর্ষনীয় বেতনের অফার দেখে অনেকেই আবেদন করেন। পরবর্তীতে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত জামানত নেয়া হয়। ওই টাকার বিপরীতে প্রত্যেককে কোম্পানীর নামে রসিদও দেয়া হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে বেশ কয়েকটি পণ্য সরবরাহের কথা উল্লেখ করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে আরএম গ্রুপের গ্যাসটপ, আরএম এলপিজি গ্যাস, ডাব সাবান, শ্যাম্পু, ইমপেরিয়াল সাবান, নবরত্ন তেল, বিস্কুট, ২২ ধরণের চকলেট এবং বিদেশী পানীয় সামগ্রীসহ আরও অনেক পণ্য।

প্রতিষ্ঠানটি পারটেক্স গ্রুপের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার ফার্ণিচার, ওয়ালটন গ্রুপের কাছ থেকে ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নিয়েছে।

এছাড়া বেশ কয়েকটি মশার কয়েল কোম্পানীর মালামাল নিয়ে কোন ধরণের টাকা পরিশোধ করেনি। তবে এদের চেক দেয়া হয়েছিল। নির্ধারিত ব্যাংকের ওই হিসাব নম্বরে মাত্র ৩শ’ টাকা রয়েছে।

এছাড়া রুপাতলী এলাকার একটি রেন্ট এ কার থেকে তিনটি গাড়ী মাসে ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নিলেও তাদের এক টাকাও পরিশোধ করা হয়নি।

নগরীর রূপাতলী চান্দুর মার্কেট এলাকার বাসিন্দা রিয়া আক্তার বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে রিসিপসনিষ্ট পদে আবেদন করেন। এরপর তাকে অফিসে সাক্ষাতকারের জন্য ডাকা হয়।

১২ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণের কথা বলে তার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা জামানত নেয় চক্রটি। হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় একটি রশিদ।

অফিসটি এত সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো ছিল আমরা বুঝতেই পারিনি এরা এত বড় প্রতারক চক্র। উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের বাসিন্দা বেল্লালকে ম্যানেজার পদে চাকরি দেয়ার নাম করে নেয়া হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

বেল্লাল হোসেন বলেন, সংসারে অভাব অনটনের কারণে টাকা দিয়ে হলেও চাকরিটার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এভাবে প্রতারিত হবেন তা ভাবতে পারেননি। তাদের মত বহু তরুন-তরুনী এভাবে প্রতারিত হয়েছেন।