বরিশালে পানির চাহিদা মেটাতে পারছে না বিসিসি

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বছরের পর বছর গেলেও বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটছেই না। সিটি করপোরেশন থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে না পারায় নাগরিকরা ঝুঁকছেন গভীর নলকূপের দিকে।

যদিও ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই নলকূপ বসাতে গিয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। বরিশাল নগরের বাসিন্দা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন নাগরিক চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে না পারলেও তারা গভীর নলকূপ বসানোর অনুমতি দিচ্ছে।

তবে এতে একজন বাড়ির মালিককে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। যেখানে সিটি করপোরেশনের একটি পানির সংযোগের অনুমতিসহ সংযোগ নিতে ধরন অনুযায়ী ৬-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ব্যক্তিগত গভীর নলকূপ বসাতে খরচ হয় প্রায় লাখ টাকা। এছাড়া গরমের সময় পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন করতে গিয়ে ভোগান্তিও পোহাতে হয়।

বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে ২০০৯-১০ অর্থবছরে দুটি প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। জমি প্রাপ্তি ও অর্থ বরাদ্দ শেষে কীর্তনখোলা নদীর তীরে বরিশাল নগরের বেলতলায় ২০১২ সালে হাজার ১৯ কোটি টাকা ব্যয় এবং রুপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুইটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শুরু করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কথা ছিল নির্মাণ শেষে তারা প্ল্যান্ট হস্তান্তর করবে সিটি করপোরেশনের কাছে। ২০১৬ সালের জুনে কীর্তনখোলা নদীর ভাঙনের মুখে পড়ে বেলতলা প্ল্যান্ট। রাস্তাসহ পুরো প্রকল্পের প্রায় ৩৫ শতাংশ চলে যায় নদীগর্ভে।

আর পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় চালু করা যায়নি রুপাতলীর প্ল্যান্ট। এছাড়াও সেখানে শুরু থেকেই ছিলো যান্ত্রিক ত্রুটি। অথচ এ প্ল্যান্ট দুটি চালু হলে এক কোটি ৬০ লাখ করে মোট তিন কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করতে পারত।

বিসিসি প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তাদের মতে, দুটি শোধনাগারেরই নির্মাণ ত্রুটি ছিল। একই সঙ্গে স্থান নির্বাচনেও ত্রুটি ছিল। যদিও বর্তমান পরিষদ প্ল্যান্ট দুটিকে চালু করতে বরাদ্দ চেয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে।

বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. ফারুক আহম্মদ জানান, নগরীতে দৈনিক প্রায় ৬ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয় প্রায় ৩ কোটি লিটার। ফলে পানির সংকট থেকেই যাচ্ছে। পানির সমস্যা-সমাধানে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।

আর বিসিসির হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দুটি ব্যবহার উপযোগীকরণসহ ওভারহেড ট্যাংক ও পানি সরবরাহ পাইপ লাইন স্থাপন বিষয়ে ২৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে। যদিও সেই অর্থ এখনও ছাড় হয়নি।

অপরদিকে ১ শত কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল মহানগরীতে নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ৪টি ভাসমান পানি শোধনাগার ও ৫টি ওয়ার হেড ট্যাংক নির্মাণ প্রকল্প, ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প, একই এলাকায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন গভীর নলকূপ স্থাপনের প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে সর্বশেষ বাজেটে।

বরিশাল নগরীতে পানির সংকট নিয়ে বিসিসির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বরিশাল নগরে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহে বিসিসি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ লিটার । আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর দৈনিক পানি উত্তোলন ক্ষমতা ২ কোটি ৩ লাখ ৮৫ হাজার লিটার থেকে উন্নীত করে ২ কোটি ৯০ লাখ ৪৭ হাজার ৫ শত লিটার করেছি।

এছাড়া পানির চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এদিকে নির্বিঘ্ন ও নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য গ্রাহকরাও নিয়মিত পানির বিল বকেয়াসহ পরিশোধ করায় সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পানি শাখার রাজস্ব আয় গত বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছেও বলে জানান মেয়র।