বরিশালে নির্মাণ হচ্ছে অত্যাধুনিক ষ্টিল সাইলো

:
: ২ years ago
smart

দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় প্রথম বারের মতো নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক মানের ষ্টিল সাইলো। শহরের সিএসডি (ত্রিশ গোডাউন) এলাকায় ৫২০ শতাংশ জমিতে এর নির্মাণ কাজ চলছে। এরি মধ্যে ৯০ শতাংশ পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই জিরো লেভেলের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত চালের মান অক্ষুন্ন রেখে এক সঙ্গে ৪৮ হাজার মেট্রিক টন চাল সংরক্ষণ করা যাবে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় খাদ্য সংকট মোকাবেলায় এই সাইলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী খাদ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বহিঃবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে খাদ্য মজুদ রাখার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বরিশালে সাইলো নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সাইলো নির্মাণের জন্য বরিশাল শহরের বদ্যভূমি এলাকার ঐতিহ্যবাহী দিঘি নির্ধারণ করা হয়। এজন্য দিঘিটির ভরাট শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা এবং সুশীল সমাজের বাধার মুখে আটকে যায় দিঘি ভরাট। সেই সাথে আটকে যায় সাইলো নির্মাণের গতি।

পরবর্তীতে ত্রিশ গোডাউনে (সিএসডি) চত্বরে সাইলো প্রকল্প বাস্তবায়ণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য সিএসডি’র পুরানো ১১টি গোডাউন ভেঙে মোট ৫২০ শতাংশ জমিতে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর সাইলো নির্মাণ কাজ শুরু করে কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং দি জিএসআই গ্রুপ এলএলসি নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রকল্পের চুক্তি মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৩১৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত।

সাইলো নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা জানান, ‘নির্মাণাধিন সাইলোতে ১৬টি পৃথক ষ্টিলের সেল থাকবে। প্রতিটি সেলে তিন হাজার করে এক সঙ্গে মোট ৪৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য শস্য মজুদ রাখা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার কীটনাশক ছাড়াই তিন বছর পর্যন্ত খাদ্য শস্যের মান অক্ষুন্ন রাখবে।

তিনি বলেন, ‘সাইলোর জন্য কীর্তনখোলা নদীতে আলাদা জেটি থাকবে। সেখান থেকে সরাসরি বেল্ট কনভেয়ারের সাহাজ্যে খাদ্য শস্য সাইলোর ষ্টিল সেলে পৌঁছে যাবে। আবার বেল্ট কনভেয়ারের মাধ্যমেই সাইলো থেকে চাল বা খাদ্য শস্য বাহির করা হবে। সাইলোতে তিন বছর পর্যন্ত তাপমাত্র এবং খাদ্যের গুনগত মান নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

অপরদিকে, নির্মাণ প্রকল্পের কারিগরি বিশেষজ্ঞ আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ‘নির্মাণাধিন সাইলো আপদকালিন সময়ে মানুষের সহায়ক হবে এবং পরবর্তীতে ফসল না ওঠার আগ পর্যন্ত যে খাদ্য সংকট দেখা দিবে এই সাইলোর মাধ্যমে সেই সংকট দূর হবে।

তিনি বলেন, ‘আমারা চেষ্টা করছি বর্ষা মৌসুমের আগেই পাইলিংয়ের কাজ শেষ করতে। কেননা বর্ষার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাইলো নির্মাণ কাজে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এরি মধ্যে ৯০ শতাংশ পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বর্ষার আগেই জিরো লেভেলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।

পরবর্তীতে স্ট্রাকচারের কাজ শুরু করবো। এজন্য প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে দুইশত শ্রমিক কাজ করছে প্রকল্প এলাকায়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী এই কারিগরি বিশেষজ্ঞ।

এদিকে, ‘খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘বর্তমানে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় স্থানীয় পদ্ধতিতে প্রায় ৯০ হাজার টন খাদ্য শস্য মজুদ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। সাইলো নির্মাণের ফলে মজুদের ব্যবস্থা আরও ৪৮ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পাবে।

এ সংরক্ষণাগারে দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত চালের মান অক্ষুন্ন রেখে সংরক্ষণ করা যাবে। পাশাপাশি যেকোন দুর্গোগের সময় খাদ্য সংকট মোকাবেলায় এই সাইলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমনটাই আশাবাদী খাদ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।