বরিশালে দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে কীর্তনখোলা

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বরিশাল শহরের পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে কীর্তনখোলা নদী। এর পাড় ঘেঁষেই বসে শহরের সবচেয়ে পুরোনো হাট। প্রচলিত আছে, হাটে কীর্তন উৎসব হতো। সেই থেকে এই নদীর নাম হয়েছে কীর্তনখোলা।

কিন্তু অবৈধ দখলের কারণে নদীর সৌন্দর্য এখন বিলীনের পথে। শহরের পাশে অনেকেই নদীর সীমানা দখল করে নানা স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। ফলে অচিরেই কীর্তনখোলা তার চিরচেনা রূপ হারাবে বলে মনে করছেন নগরবাসী।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নদী আছে কীর্তনখোলা তার মধ্যে অন্যতম। বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার বহু মানুষ এই নদী তীরে বসবাস করেন। তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গেও মিশে আছে এ নদী।

স্থানীয়রা বলছেন, দখল আর দূষণে কীর্তনখোলা নদী দিন দিন সরু হচ্ছে। নদীকে বাঁচাতে প্রশাসন শিগগির পদক্ষেপ না নিলে এর ভয়াবহ মাশুল দিতে হবে। ফলে এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তারা।

কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী নগরের স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল জানান, কীর্তনখোলা নদীর দুইপাড়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইট, বালু, কয়লাসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

এতে দিন দিন নদীর পাড় ভরাট হয়ে দখল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নদীর তীরে চর পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা দখল করে নেন প্রভাবশালীরা। আবার অনেক সময় টিন দিয়ে নদীতে বেড়া দিয়ে তাতে বালু ভরাট করে দখল করা হয়।

আরেক বাসিন্দা শামিম জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুয়ারেজ লাইনের কারণে নদীর পানি প্রতিদিন বিষাক্ত হচ্ছে। এটা রোধ করতে না পারলে কলকারখানার বিষাক্ত পানির কারণে নদীর মৎস্যকুলেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।

কীর্তনখোলা তীরের বঙ্গবন্ধু কলোনির সত্তরোর্ধ্ব বাসিন্দা আনছার আলী মোল্লা বলেন, আমরা ছোট থেকে এই নদীতে সাঁতার কেটে বড় হয়েছি। আগে যে নদী দেখেছি তার সঙ্গে এখন রাত-দিন তফাৎ। নদীর দুইপাড়ে অবৈধ স্থাপনায় ভরে গেছে। কাছে গেলেই শুনি অমুক মিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, তমুক মিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের কাছে একটাই দাবি, যেন নদীর পাড় দখলমুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বরিশালের তথ্য মতে, এ অঞ্চলে মূল নদী আছে ২৫টি। এছাড়া শাখা নদীসহ মোট নদীর সংখ্যা প্রায় ৩৫টি। এসব নদীর মধ্যে শুধু কীর্তনখোলা নদীর দুই পাড় দখল করেছেন প্রায় ৪ হাজার ১৯২ জন দখলদার। আর ৩৫টি নদীর হিসাব করলে দখলদারের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় লাখের কাছাকাছি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বরিশালের জেলা সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবেশগত সংবেদনশীল এলাকাগুলো চিহ্নিতকরণ এবং সংরক্ষণের জন্য যা করা দরকার এখনই করতে হবে। তা না হলে সামনে আমাদের জন্য খুব খারাপ দিন অপেক্ষা করছে।

নদী খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, যে ভয়াবহতা দেখছি তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। অচিরেই নদী দখলমুক্ত করতে হবে। প্রশাসন দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে কীর্তনখোলাসহ সব নদী তার চিরচেনা রূপ হারাবে।

এদিকে, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বারবার দখলদারদের তালিকা করার উদ্যোগ নিলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, নদীর তীর দখলমুক্ত করতে যৌথ অভিযান চলছে।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও নদীবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নদীর তীর দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়। তাছাড়া অবৈধভাবে কীর্তনখোলার তীর দখলদারদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সে তালিকা অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কীর্তনখোলার তীর দখলমুক্ত করতে যৌথ অভিযান চালানো হবে।

এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যারা নদী ও খাল দখল করেছে প্রথমে তাদের চূড়ান্ত তালিকা করা হবে। এরপর বিআইডব্লিউটিএকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপথ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে কাজটি সফল হবে।