বরিশালে ডেঙ্গু আতঙ্কে মশারির কেনার ধুম

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

শামীম আহমেদ ॥ ডেঙ্গুর জীবাণুবাহক এডিস মশার ডিম শুকনো পরিবেশেও নয় মাস পর্যন্ত নষ্ট হয়না। এডিস মশা যে সিটিতে বা যে এলাকায় একবার ঢোকে সে এলাকায় আর নিস্তার নেই। কারণ এডিস মশার ডিম শুকনা পরিবেশেও নয় মাস পর্যন্ত সক্রিয় থাকে, নষ্ট হয় না। যখনই ডিমগুলো স্বচ্ছ পানির সংস্পর্শে আসে, তখন তা লার্ভা হয় এবং পরিপূর্ণ মশায় রূপ নেয়।

এমনটাই মন্তব্য করে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন বলেন-ব্যক্তি সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। পানি জমে থাকলে সেখানে এই মশা জন্ম নেয়। সেই পানি শুকিয়ে গেলেও এডিসের ডিম নয় মাস পর্যন্ত টিকে থাকে। যা ঘরের মেঝেতেও যদি থাকে তাতে পানি পাওয়ার পর সেখান থেকে লার্ভা হবে। পরিপূর্ণ মশা জন্ম নেবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে যে পরিমাণ এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিলো এবার তার তুলনায় শত ভাগের বেশি পাওয়া গেছে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন, জমে থাকা পানি ও ডাবের খোসা ইত্যাদিতে সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, জ্বর হলে ছয় ঘন্টার মধ্যে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর প্রথমবার হলে তেমন কোন সমস্যা নেই। দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার হলে সমস্যা ভয়াবহ হয়। তখন শরীরের বিভিন্ন অর্গ্যান ফেইলিউর হয়। তাই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

বরিশালে ডেঙ্গু আতঙ্কে মশারি কেনার ধুম ॥ গোটা দেশের সাথে ডেঙ্গু আতঙ্কে কাঁপছে বরিশাল নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলা। প্রতিদিনই আক্রান্ত মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে শহর ও গ্রামে সবাই যতোটা সম্ভব বাসাবাড়ি ও আঙিনা পরিস্কার রাখার চেষ্টা করছেন। ঘরের ভেতর জ্বালানো হচ্ছে কয়েল, কিংবা করা হচ্ছে মশা নিরোধক স্প্রে।

তবে এডিস মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে সবচেয়ে বেড়েছে মশারির ব্যবহার। অনেকেই দিনের বেলায়ও বাসা বাড়িতে মশারি টানিয়ে রাখছেন। যারা সারাবছর ঘরে মশারি ব্যবহার করেন না তারাও এখন বাজারে আসছেন মশারি ক্রয় করতে। ফলে মশারি প্রস্তুতকারী দোকানগুলোতে বেড়েছে বাড়তি ব্যস্ততা। দিনরাত মশারি সেলাইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দর্জি ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকা ব্যতিত জেলার দশটি উপজেলা কিংবা ছয়টি পৌরসভার কোথাও ডেঙ্গু মোকাবেলায় কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই। তাই উপজেলা ও পৌর এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে সচেতন মানুষ এডিস মশার কামড় থেকে মুক্ত থাকতে সবকিছু করছেন। এমনকি পাড়া-মহল্লার দোকানে দোকানে মশা তাড়ানোর সাধারণ কয়েল, ইলেকট্রিক কয়েল ও ব্যাট, অ্যারোসল স্প্রে থেকে শুরু করে মশা নিধন সংক্রান্ত পণ্যের পাশাপাশি মশারি বিক্রির ধুম পরেছে। এখন শুধু বিভিন্ন দোকান বা শোরুমে নয়, সুপারশপগুলোতেও হরদমে বিক্রি হচ্ছে মশারি।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডেঙ্গু আত‌ঙ্কের কারণে আগের চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশি মশারি বি‌ক্রি বে‌ড়ে‌ছে। মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও এখন সবার ভরসা মশারিতে। যারা বছরের অন্যান্য সময়ে মশারি ব্যবহার করতেন না তারাও এখন ডেঙ্গুর ভয়ে মশারি ক্রয় করছেন।

ত‌বে ক্রেতা‌দের অভিযোগ, ডেঙ্গুর আতঙ্ক ছড়িয়ে পরার সুযোগে মশারির অতিরিক্ত দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। ফলে মশারি কিনতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ। অন্যান্য সময় যে মশারির দাম ছি‌লো ২৫০ টাকা সেই একই মশারি এখন ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।