বরিশালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ২৪ হাজার

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

ডায়রিয়া রোগীর জন্য বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে শয্যা আছে চারটি। কিন্তু শনিবার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ৬২ জন রোগী। রোববার সেখানে আরও ৪১ জন ভর্তি হন। সোমবার ভর্তি হন ২০ জন।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) ভর্তি হন ২৩ জন। চারদিনে ভর্তি হলেন ১৪৬ জন। রোগীদের অস্বাভাবিক চাপে বেসামাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে হাসপাতালে রোগীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় কেউ কেউ হাসপাতালের বাইরে কাঁঠাল গাছতলায়, আবার অনেকে গেটের বাইরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

একই চিত্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। এখানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৩০ শিশুসহ ৪০ জন ভর্তি হয়েছেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর বলছে, ১৩ দিনে ২৪ হাজারের অধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শুধু যে বরিশাল শহরের দুটি হাসপাতালে এই চিত্র তা নয়; জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন।

মূলত আবহাওয়া পরিবর্তন ও মানুষের অসতর্কতায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এমনকি ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে বরিশালে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল।

গ্রাম পর্যায়ে তারা ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করছেন বলে জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

হাসপাতালে রোগীদের জায়গা না হওয়ায় বারান্দা ও সিঁড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আয়শা আক্তার জানিয়েছেন, ডায়রিয়ার প্রকোপ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের ওয়ার্ডে এমনকি বারান্দায় জায়গা দিতে পারছি না। সংকট মোকাবিলায় ওয়ার্ডের বাইরে গাছতলায় চাদর বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আয়শা আক্তার বলেন, কয়েকদিন ধরেই ওয়ার্ডটিতে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় ৬০০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

এর আগে মার্চ মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৫১ জন। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছি।

জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি মাত্র চার শয্যার।

এর মধ্যে দুটি পুরুষ এবং অপর দুটি মহিলার জন্য। যেখানে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।

অথচ আমাদের চিকিৎসক, নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। তাই এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে কিছুটা সংকট সৃষ্টি হতেই পারে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ১৫টি। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ওয়ার্ডটিতে একসঙ্গে ৪২ শিশুকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী ওয়ার্ডের দায়িত্বর সিনিয়র স্টাফ নার্স তানিয়া আফরোজ জানিয়েছেন, সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩০ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে।

এদের মধ্যে থেকে দুপুরে কয়েকজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও দুপুরের মধ্যে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪০ জন ছাড়িয়েছে। যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে; তাতে হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা মঙ্গলবার রাতের মধ্যে অর্ধশতাধিক ছাড়াতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগের ছয় জেলায় ২৪ হাজার ৩৩৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন।

তিনি বলেন, ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্য বিভাগও অনেকটা উদ্বিগ্ন। সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে সরকারের আইইডিসিআরের একদল গবেষক বরিশালে এসেছেন। তারা বর্তমানে বরগুনায় অবস্থান করছেন। তাদের প্রতিবেদন পেলে ডায়রিয়ার প্রধান কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।