বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মিলাদুজ্জাহান ইরার দায়ের করা যৌতুক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে তার স্বামী গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. টিপু সুলতান। তার বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তার ডাক্তার স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন ও গৃহে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় তার স্ত্রী আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মিলাদুজ্জাহান ইরা বাদী হয়ে অভিযুক্ত স্বামী ডা. টিপু সুলতান ও শ্বশুর বাদশা ফকিরকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে গৌরনদী থানায় মামলা করেন ইরা। পরে ওই মামলায় গৌরনদী উপজেলা গেট এলাকা থেকে টিপু সুলতানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গৌরনদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলালউদ্দিন জানান, ২০২১ সালের ১৩ আগস্ট গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া গ্রামের বাদশা ফকিরের ছেলে ডা. টিপু সুলতানের সঙ্গে কুমিল্লা জেলার কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার দৈয়ারা এলাকার মো. আব্দুল আলিমের কন্যা ডা. মিলাদুজ্জাহান ইরার সামাজিকভাবে বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকেই স্বামী ডা. টিপু সুলতান তার বাড়ির নির্মাণাধীন ভবনের কাজ সম্পন্ন করার জন্য স্ত্রী ডা. মিলাদুজ্জাহান ইরার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন।
দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রায়ই স্ত্রীকে (ইরা) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন তিনি। যৌতুকের টাকার দাবিতে গত ৩ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে ডা. টিপু সুলতান গৌরনদী এবি সিদ্দিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ৩য় তলায় অ্যানাটমি ফিজিওলজি ল্যাবের রুমের ভেতর স্ত্রী ডা. ইরাকে আটকে শারীরিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এর পর গত ৪ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে ডা. টিপু সুলতানের গ্রামের বাড়ি উপজেলার নলচিড়া গ্রামে ডা. ইরাকে আটকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে গৃহে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্বামী ডা. টিপু সুলতান।
স্বামীর বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে স্ত্রী ইরা কৌশলে পালিয়ে গত ১২ এপ্রিল দুপুরে গৌরনদী থানায় এসে স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি রুজু করা হয়।
তাৎক্ষণিক পুলিশ অভিযান চালিয়ে উপজেলা গেট এলাকা থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ডা. টিপু সুলতানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ডা. টিপু সুলতানকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালতের বিচারক তাকে (টিপু) কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর হেলালউদ্দিন জানান।
আদালতে নেওয়ার পথে মামলা আসামি ডা. টিপু সুলতান সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্ত্রী আমাকে বদলি হয়ে কুমিল্লা নিতে চাপ সৃষ্টি করেছিল।কুমিল্লা নিয়ে আমার পরিবার থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। এতে আমি রাজি না হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে।
এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়্যিদ মো. আমরুল্লাহ জানান, এ বিষয়টি বরিশাল সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে।
অতি তাড়াতাড়ি মেডিকেল অফিসার টিপু সুলতানকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে।