অবৈধ যানবাহনে মামলা ও জরিমানায় সীমাবদ্ধ থাকছেনা বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ। বিগত দিনের ধরাবাধা এই নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজেদের সক্ষমতা দেখাতে তৎপরতা শুরু করেছে এই বিভাগটি। ইতিমধ্যে প্রাক প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে বেশ কয়েকটি যানবাহন বা মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। ট্রাফিক বিভাগ চাইছে আইন লঙ্ঘনকারীদের অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে। বিশেষ করে একটি যানবাহনে মামলা থাকা অবস্থায় সেটি রাস্তায় নামানোর পর আরও একটি অপরাধ সংঘটিত করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে মালিকের বিরুদ্ধে। এমনকি সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশই মামলা দিয়ে থানা বা আদালতের বারান্দায় পৌঁছে দেবে।
বরিশাল ট্রাফিক পুলিশের এই বিশেষ অভিযানকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে পর্যবেক্ষক মহল। তাদের ধারণা, এই আইনটি কার্যকর করা গেলে অপরাধের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাও পর্যায়ক্রমে হ্রাস পাবে। যে কারণে অতিদ্রুত মোটরযান আইন সম্পর্কে আরোহীদেরও অবগত হওয়া বা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। বরিশাল ট্রাফিক পুলিশের ভেতরকার একটি সূত্র জানিয়েছে, মোটরযান আইন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশও আইন লঙ্ঘনের অপরাধে মামলা দিয়ে আরোহীদের থানায় প্রেরণের সক্ষমতা রাখে। পাশাপাশি অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে সেই মোটরযানটিও জব্দ করার এখতিয়ার রয়েছে তাদের। মূলত এই বিষয়টি সম্প্রতি নিশ্চিত হওয়ার পরে গত শনিবার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে জনি নামের এক মোটর আরোহীকে আটক পরবর্তী পুরো আইনি প্রক্রিয়ায় থানায় মামলা দিয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশের দাবি, এই মোটর সাইকেল আরোহীর বিরুদ্ধে এর আগেও আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। বিগত সময়ে আইন না মেনে চলার অভিযোগে তার মোটরযানের কাগজপত্র জব্দ অবস্থায় ছিল ট্রাফিক পুলিশের কাছে। সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে হেলমেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ইন্স্যুরেন্স না থাকার অভিযোগ ছিল। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, মামলা দিয়ে তাকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হলেও তিনি মোটেও আইন মানেননি। বরং এবারও একই অপরাধ সংঘটিত করলেন। বরিশাল ট্রাফিক পুলিশের টিএসআই নজরুল ইসলাম ও কন্সটেবল মোঃ মহসিন এই ঘটনায় তার বিরদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী।
তাদের ভাষ্যমতে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টার দিকে শহরের মুনসি গ্রেজ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই সময় বাজাজ কোম্পানির প্ল্যাটিনা মডেলের একটি মোটরসাইকেলে বেপরোয়া গতিতে বগুরা রোডের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন জনি নামের ওই ব্যক্তি। এই আরোহীর মাথায় হেলমেট ছিলনা। ফলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী ধরে নিয়ে তার গতিরোধ করা হয়। তখন বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণ জানতে চেয়ে মোটর সাইকেলটির বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বিগত সময়ে একই অপরাধের কারণে তার কাগজপত্র জব্দ ছিল ট্রাফিক পুলিশের কাছে।
মূলত: দ্বিতীয় দফা একই অপরাধের অভিযোগে তাকে মোটর সাইকেলটিসহ আটক করে ট্রাফিক বিভাগ। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের মোটরযান আইনের ১০০(২), ১৩৮, ১৪৩, ১৫৫ ধারায় অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করা হয়। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এমন বাস্তবতায় বরিশাল ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) খাইরুল আলমের ভাষ্য হচ্ছে, ট্রাফিক পুলিশ মামলা দেয়ার সক্ষমতা রাখলেও বিষয়টি কার্যকর ছিলনা।
সম্প্রতি আইন সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা করে মোটরযান আইন সম্পর্কে অবগত হয়েছেন যে- ট্রাফিক পুলিশই বাদী হয়ে মামলা দেয়ার এখতিয়ার রাখে। ফলে মোটর আরোহীর বিরুদ্ধে এটাই ট্রাফিক পুলিশের প্রথম অ্যাকশন। আগামীতে এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অভিযানের ব্যপ্তি আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সেই সাথে মোটরযান আইন সম্পর্কে আরোহীদেরও সম্যক জ্ঞান অর্জনের জন্য কর্মশালা করে প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি নিয়েও ভাবনা রয়েছে তাদের।