বরিশালে ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে শতবর্ষী শতাধিক গাছ কাটার পাঁয়তারা!

লেখক:
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

বরিশাল নগরীতে প্রায় শতবর্ষী শতাধিক গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরইমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। গাছ কাটার এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডে দাবি, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবার শঙ্কায় গাছগুলো কাটলেও একটি গাছের বিপরীতে তিনটি গাছ লাগানো হবে।

সারি বেঁধে মেহগনি, রেইনট্রি, শিশুসহ নানা প্রজাতির গাছ। ছায়াঘেরা সবুজের সমাহারে বিশুদ্ধ বাতাসের নিশ্বাস নিতে অনেকই আসেন বরিশাল নগরীর চাঁদমারি ও সাগরদী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ চত্বরে।

সম্প্রতি এখানকার বিভিন্ন প্রজাতির ১২৯টি গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রায় শতবর্ষী গাছ কাঁটতে এরই মধ্যে নিলামে তুলে তা লাল রং এ চিহ্নিতও হয়েছে। তবে এ কাণ্ডে কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী হওয়ায় পরিবেশঘাতী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে পারছেন না তারা।

তবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পাউবোর কর্মচারীরা বলেন, আমরা চাই গাছগুলো থাকুক। আমাদের চাকরি জীবনের শুরু থেকে গাছগুলো সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িত। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এমন পরিবেশঘাতী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের চাকরি হারাতে হবে। তাই কিছুই করতে পারছি না।

তারা আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির ১২৯টি গাছ কাটা বা অপসারণে নিলাম দরপত্র আহ্বান করা হলেও বাস্তব চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। বাস্তবে দুই-তিনটি গাছ বন্যায় ভেঙে গেছে এবং হেলে পড়েছে। তবে নিলামে বিক্রির জন্য রং দিয়ে নম্বর লিখে চিহ্নিত করা গাছগুলো সম্পূর্ণ অক্ষত এবং সতেজ।

বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘আমরা চাই না কোনো গাছ কাটা হোক। দেশের প্রধানমন্ত্রীও গাছ লাগানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। সেখানে যারা গাছ কাটার জন্য টেন্ডার আহবান করেছে। এ বিষয়টি তারা আরেকবার ভেবে দেখবে বলে আশা করি।

বরিশাল ক্যাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট হিরণ কুমার দাস মিঠু বলেন, ‘আমি মনে করি গাছগুলো কাটা হবে না মানুষ মারা হবে এ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। দ্রুত এ গাছ কাটা বন্ধ করা হোক।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ঝড়বাদলে এসব গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নিয়মানুযায়ী একটি গাছের বিপরীতে তারা তিনটি গাছ রোপণ করবেন শর্তেই গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছেন।

পাউবোর বরিশাল জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসাইন বলেন, ‘যেসব গাছ নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত। বড় ঝড় হলে এগুলো ভেঙে পড়ে, হেলে পড়ে আমাদের ভবনগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। তাই নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া এ বিষয়ে আমরা বন বিভাগের অনুমতি নিয়েছি। বন বিভাগ আমাদের শর্ত দিয়েছে, যে একটি গাছ কাটলে দুটি লাগাতে হবে। আমরা সেই শর্ত মেনেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি।
তবে এ বিষয়ে কোনো কথাই বলতে রাজি হননি সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তারা। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরিশাল সদর আসনের সাংসদ জাহিদ ফারুক শামীমের সঙ্গে ও যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, দুই কলোনির ১২৯টি গাছ নিলামে ৪০টির ওপর দরপত্র বিক্রি হলেও নিলামে অংশগ্রহণ করেছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান। সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২৪ লাখ টাকা।