বরিশালে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি-বিধান থাকলেও ব্যতিক্রম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর

:
: ৫ years ago

এম.এস.আই লিমনঃ সরকারি ভাবে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি-বিধান থাকলেও ব্যতিক্রম ঘটছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বরিশাল অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে।সরকারি অফিস হওয়া সত্বেও কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা তোলা হচ্ছেনা। অফিসে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর দণ্ডটি খালি পরেই থাকে বছরের প্রায় সকল কর্মদিবসগুলোতেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত-২০১০) অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানে সব কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বরিশাল অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সরকারি কার্যালয় ভবনে অফিস সময়ে জাতীয় পতাকা তোলা হচ্ছেনা।জাতীয় পতাকা শুধু একটি কাপড় নয়, এটি দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। তাই পতাকার অবস্থা ব্যবহারযোগ্য না হলে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাধিস্থ করতে হবে। আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা বা জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে ওই ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

২০১০ সালের জুলাই মাসে এই আইন সংশোধিত হয়। এই সংশোধনীতে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়। না জেনে,না বুঝে আর অতি উচ্ছ্বাসে যারা পতাকা ব্যবহারবিধি লঙ্ঘন করেন, তাদের অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে এই শাস্তির বিধান যথাযথ হতে পারে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বাণিজ্যিক কোনো প্রচারণায়, বিজ্ঞাপনে জাতীয় পতাকার ব্যবহার বিধিবহির্ভূতভাবে করে থাকে, তার জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।এ সম্পর্কে ওই আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে।

ওই ধারায় বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও অফিসে সব কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে, নৌযানে ও বিমানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবে। এ ছাড়া স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী সমমর্যাদার ব্যক্তি, বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের প্রধানের গাড়িতে ও তাদের নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, উপমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে গাড়িতে ও নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে বিশেষ দিবস ছাড়া সরকারি প্রতিদিনকার কার্যদিবস গুলোতে অফিসে বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ভবনে তারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন না। এ বিষয়ে বরিশাল অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের কার্যালয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস এম সহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি পতাকা না উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,জাতীয় বিশেষ দিবসগুলোয় পতাকা ওড়ানো সহ আলোকসজ্জায় কার্যালয় সাঁজানো হয় যথাযথ সম্মানের সাথে জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপনের জন্য।

তবে সরকারি দপ্তর কার্যালয়ে কার্যদিবসে প্রতিদিন পতাকা উত্তোলন করার নির্দেশনার বিষয়টি তার জানা নেই।সেকারনেই তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি এ বিষয়ে।গতকাল দুপুর পৌনে একটার সময় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে তার কক্ষে জাতীয় পতাকা না উত্তোলন করার বিষয় জানতে চাওয়ার আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি অফিস সহায়ক (পিওন)কে তলব করে তাৎক্ষণিক ভাবে জাতীয় পতাকা কার্যালয়ের ভবনের পতাকার দণ্ডে ওড়ানোর নির্দেশনা দেয়।সেসময় অফিস সহায়ক পিওন আঃআলিমের কাছে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সামনে তার কক্ষে বসে জাতীয় পতাকা সরকারি কার্যদিবসগুলোয় না উত্তোলন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সে বলেন,দেড় বছর যাবৎ তিনি সরকারি নিয়োগ পেয়ে কর্মরত রয়েছে।

আগের পিওন ওবায়েত মিয়া তাকে পতাকা প্রতিদিন সরকারি কার্যদিবসগুলোয় উত্তোলন করার বিষয়টি বলেন নি ফলে বিশেষ দিবস গুলো ছাড়া পতাকা উত্তোলন করা হয়নি অফিস কার্যালয়ের ভবনে। তাছাড়া অফিসের উপরস্থ কর্মকর্তারাও তাকে পতাকা উত্তোলন করার ব্যপারে অবহিত করে নি। তবে আমরা বিশেষ দিবসগুলোতে অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে আসছি।বরিশাল মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোকলেছ বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক সরকারি অফিসে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়না। জাতীয় পতাকা ব্যবহারে বিধি-বিধান থাকা সত্ত্বেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সরকারি দপ্তরের কার্যালয়ের ভবনে কার্যদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করাটা অবমাননা করার সমতুল্য।এই বিষয়ে দৃষ্টান্ত শাস্তির জন্য বরিশাল জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করনের জন্য বলবেন তিনি।

তিনি এ প্রসঙ্গের আলাপকালে দেশজনপদের প্রতিবেদককে বলেন,স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে নীল নকশা করা তৎকালীন সময়ের অনেক স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী রাজাকার এখনো সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। বিভিন্ন রাষ্ট্রদ্রোহী নানান কর্মকান্ড করে দেশের জনগনের মধ্যে দেশ প্রেম,মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর বিপরীত ভাবমূর্তি সৃষ্টি করে চলছে। এদের কঠোর দৃষ্টান্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে নিমূল করা অতিব গুরুত্বপূর্ন।বরিশালের সচেতন মহল বলেন, অফিস সময়ে কেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়না তা তারাই ভালো জানেন। তবে আমাদের মনে হয় এই বিষয়ে তাদের তেমন কোনো ধারনা নেই অথবা অবহেলা রয়েছে।কেউ যদি অবহেলা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমেই স্বাধীনতার প্রতিকের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকবে।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃঅজিউর রহমান প্রতিবেদককে বলেন,সরকারি সকল স্কুল কলেজ সহ সকল দপ্তরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। এর পরেও যদি বিধি বিধান অমান্য করে এবং অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে৷ আর জনপ্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরিশাল অঞ্চলের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার বিষয়ে অতিসত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান।