বরিশালে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ নগরীর অস্তিত্ব সংকটাপন্ন ২২ খাল

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

এইচ আর হীরা॥ কীর্তনখোলা নদীর পোর্ট রোড ব্রিজ পয়েন্ট থেকে বরিশাল নগরের মাঝ দিয়ে পশ্চিমে বয়ে গেছে জেল খাল। ‘জনগণের জেল খাল, আমাদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান’- স্লোগানে ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হাজার হাজার মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে খালটি পরিস্কার করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামানের উদ্যোগে পরিচ্ছন্ন অভিযানের আগে খালের দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তখন ২৫৫ দখলদারের তালিকা করা হয়েছিল। উচ্ছেদ এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পর কীর্তনখোলার ভরা জোয়ারে জেল খালের বুকে পানি থৈথৈ করত। তিন বছর না যেতেই ফের দখলদারদের আগ্রাসন এবং ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে খালটি এখন মৃতপ্রায়।

 

সে বছর শুধু জেল খাল নয়, নগরীর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল, লাকুটিয়া খাল, নবগ্রাম খাল, ভাটার খাল ও শোভারানীর খালসহ ২২টি খালের অস্তিত্ব উদ্ধার ও পরিচ্ছন্ন করা হয়েছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসন ওই খালগুলোর তীরে খালের নামসহ সাইনবোর্ডও স্থাপন করেছিল। এখন সেই খালগুলো আবার ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে।

 

সাইনবোর্ডগুলোর অস্তিত্বও বিলীন। অথচ এসব খাল দিয়ে এক সময় যাত্রীবাহী ও পণ্যবোঝাই নৌকা চলাচল করত। গয়নার নৌকা চলত জেলার বিভিন্ন নৌপথে। নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণ ছিল খালগুলো। দখলদারদের দৌরাত্ম্য আর ময়লা-আবর্জনায় খালগুলো এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ভারি বৃষ্টি হলেই নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মেগা প্রকল্পের আওতায় খাল খননের জন্য বরাদ্দ চেয়েছে বিসিসি। তবে অনুদান নির্ভর এই প্রকল্পের জন্য এখনও বরাদ্দ মেলেনি।

 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জোয়ার ভাটা বিদ্যমান নগরীতে এমন খাল রয়েছে ২২টি। তবে কাগজে কলমে ২২টি খালের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে ২২টি খালের অধিকাংশই এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কবলে পরে জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত খালগুলো ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। আর এর বিরূপ প্রভাব পরেছে বর্তমানে নগরীর জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে।

 

সচেতন নগরবাসীর মতে, দখলদারদের কবল থেকে খালগুলো উদ্ধার করে জরুরি ভিত্তিতে তা খনন করা না হলে অচিরেই খালগুলো অস্তিত্ব হারাবে।অস্তিত্ব সংকটে থাকা খালগুলোর মধ্যে রয়েছে -নগরীর মধ্যকার জেল খাল, সাগরদী খাল, লাকুটিয়া খাল, আমানতগঞ্জ খাল, নাপিতখালী খাল, ভাটার খাল, ভাড়ানীর খাল, শোভারানীর খাল (চাঁদমারীর খাল), ভেদুরিয়া খাল, ইছাকাঠী এবং উত্তর কড়াপুর রাস্তা সংলগ্ন খাল, কলাডেমা খাল, নবগ্রাম খাল, হরিনাফুলিয়া খাল, পুডিয়া খাল, সাপানিয়া খাল, জাগুয়া খাল, উত্তর নবগ্রামের সাগরদী খাল, টিয়াখালী খাল, কাশিপুর খাল, ঝোড়াখালি খাল ও সোলনা খাল। স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় এসব খালগুলো এখন মৃত প্রায় রূপ ধারণ করেছে।

 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বিসিসির সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাল উদ্ধার এবং সংরক্ষণের তিটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫০ কোটি টাকা। তবে অনুদান নির্ভর এ প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ মেলেনি। যেকারণে খালগুলো পূর্বের অবস্থাতেই রয়ে গেছে। আর এ কারণে অতিবৃষ্টি এবং নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নগরীতে ঢুকে পরায় পানি নামতে বিলম্ব ঘটছে।

 

এ ব্যাপারে বিসিসি’র ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান দুলাল বলেন,শুধুমাত্র আমার ওয়ার্ডের খালটিই নয়,নগরীর অন্যান্য খালগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার এবং পুনঃখননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এজন্য তিনি জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দও চেয়েছেন। এডিবির অর্থ বরাদ্দ পেলেই বিসিসি এ বিষয়ে কাজ শুরু করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।