বরিশালে চৈত্রের ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

মধ্য চৈত্রে ভ্যাপসা গরম আর থেমে থেমে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে বরিশাল নগরে অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

গত কয়েক দিন গরমে যেন পুড়ছে নগরবাসী। তার ওপর সকাল থেকে রাত অবধি কয়েক দফায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। গতকাল মঙ্গলবার বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে নগরের হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বৃদ্ধরা। চিকিৎসকেরা পানি ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা গড়াতে বরিশাল নগরের প্রধান সড়কগুলোর বেশির ভাগে মানুষের ভিড় কম লক্ষ করা গেছে।

আর দুপুরে অনেকটাই ফাঁকা ছিল নগরের আদালতপাড়া, সদর রোড, টাউন হলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান। নগরের ত্রিশ গোডাউন, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্কে মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই সীমিত।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার রায় বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বরিশালে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগের দিল সোমবার ছিল ৩৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রোববার ছিল ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। ৩১ মার্চ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান উচ্চ পর্যবেক্ষক প্রণব।

এদিকে গত এক সপ্তাহ বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েছে। মঙ্গলবারও সকালে সার্কুলার রোড, নবগ্রাম সড়কে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট দেখা দেয়।

একই ঘটনা ঘটে বিকেলেও। নগরীর প্যারারা রোডের বাসিন্দা আনোয়ারুল হক বলেন, বিদ্যুৎ-সংকট যদি না থাকে, তাহলে কেন প্রতিদিন বিভ্রাট হচ্ছে খতিয়ে দেখা দরকার।

বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের কাছে লোডশেডিংয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, হয়তো লাইন মেরামত করতে গিয়ে মাঝে মাঝে কোনো এলাকার বিদ্যুৎ কিছু সময় বন্ধ রাখতে হয়।

এদিকে বরিশাল বিভাগে বিগত দিনের চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ১০ জন বেড়েছে।

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ২৪৬ জন।

এক সপ্তাহ আগে ২৪ ঘণ্টায় ১০০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্তের পরিসংখ্যান রয়েছে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ে।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন ৮ জন রোগী। রোগীর স্বজনেরা জানান, পেটের পীড়াসহ পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের স্বজনেরা।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিলরুবা তানিম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা বেড়েছে। এ কারণে দূষণ এবং জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে।

এ জীবাণু সুপেয় পানি এবং খাবারের সঙ্গে মিশে পেটে গিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশুদ্ধ পানি পান করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃঞ্চ মণ্ডল বলেন, চৈত্র-বৈশাখে পানিবাহিত এ রোগটির প্রকোপ দেখা দেয়।

বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নদী-খালের পানি ব্যবহারকারীরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হন।

নগরের পথচারীরা গরমে শরবতসহ নানা মুখরোচক খাবার খাচ্ছেন। এতেও ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মরোগ ছড়াতে পারে।

বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক হুমায়ুন শাহিন খান জানান, প্রতি বছর এই সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এ জন্য সবাইকে খাদ্যাভ্যাসে সতর্ক থাকতে হবে।