বরিশালে গৃহবধূ’র লাশ উদ্ধার : স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি যৌতুকের বলি হলেন সুরমা?

:
: ৬ years ago

যে ট্যাবলেট মানুষের জীবন বাঁচায় সেই ট্যাবলেটই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে গৃহবধূ সুরমার জন্য। সামান্য জ্বরের কারণে নাপা ট্যাবলেট খেয়ে চিরতরে গুমিয়ে পরেছেন সে। তবে নাপা ট্যাবলেটের অন্তরালে থেকে যাচ্ছে নানা প্রশ্ন। যৌতুকের বলিও হতে পারে বাক প্রতিবন্ধী সুরমা বেগম। সুরমার স্বামীর দিকে অভিযোগ তুলেছেন মৃত্যের বাবা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বরিশাল নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, নগরীর পশ্চিম কাউনিয়ার মোল্লা মাসুমের ভাড়াটিয়া বাক প্রতিবন্ধী সুরমা বেগম (১৯) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবু হানিফ মিয়ার স্ত্রী।

মৃতের স্বামী মোহাম্মদ আবু হানিফ মিয়া জানায়, গতকাল বুধবার সুরমার গায়ে জ্বর ওঠে তাই রাতে খাবারের পরে সুরমাকে নাপা ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। পরে তারা ঘুমিয়ে পরে। ঘুমের ঘরে রাত দেড়টার দিকে হটাত স্ত্রী সুরমার গায়ে স্বামী মোহাম্মদ আবু হানিফ মিয়ার হাত পরলে সুরমার কোন সারা শব্দ না পেয়ে ঘরে থাকা মা বাবা কে ডাক দিলে তারা এসে সুরমার নিথর দেহ পরে থাকতে দেখে। পরে সুরুজ নামে এক গ্রাম্য ডাক্তার কে খবর দিয়ে বাসায় ডেকে আনে। সুরুজ ডাক্তারের মাধ্যমে তারা জানতে পারে যে সুরমা মারা গেছে। রাত ২টার দিকে সুরমার মৃত্যুর সংবাদ তার বাবা রহিম মিয়াকে জানায় আবু হানিফ মিয়ার বাবা জহিরুল ইসলাম।

তবে মেয়ের আকর্ষিক এমন মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেনা সুরমার স্বজনরা। সুরমার গ্রমের বাড়ী নোয়াখালী জেলার হাতিয়া এলাকায় থানায়। আর মোহাম্মদ আবু হানিফ মিয়ার গ্রামের বাড়ী পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানার জয়কুল গ্রামে। সুরমার মৃত্যুর বিষয়ে তার বাবা আব্দুর রহিম মিয়ার বলেন, গত ফেব্রুয়ারী আগে মোহাম্মদ আবু হানিফ মিয়া তাবলীগ জামাতের দাওয়তি কাজে হাতিয়া আসে। সেখানে বসে সুরমাকে দেখে পছন্দ হওয়ার পরে সুরমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে সুরমাকে বিবাহ করে আবু হানিফ। বিবাহের পরে সুরমাকে বরিশালে নিয়ে আসলে বাক প্রতিবন্ধী বলে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে চয়নি শশুর জহিরুল ইসলাম ও শাশুরি ছনিয়া বেগম।

বিবাহের পর থেকেই বিভিন্ন সময় সুরমার বাবা আব্দুর রহিমের কাছে ১ লক্ষ্য টাকা যৌতুক দাবী করেছিল সুরমার স্বামী আবু হানিফ মিয়া ও তার বাবা মা। আব্দুর রহিম মিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক তাই মেয়েকে সুখে রাখতে নিজের গৃহপালিত গরু বিক্রি করে জামাতাকে ব্যাবসার জন্য গত রোজার ঈদের পরে ৫০ হাজার টাকা দেয়। বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্য ৪ মাস সময় চেয়েছিল। ২ মাস পূর্বে সুরমার অসুস্থতার খবর পেয়ে বরিশালে এসে মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়েও যায় আব্দরু রহিম মিয়া।

সুরমার বাবা আব্দুর রহিম মিয়া দাবী করেন সুরমাকে তার স্বামী ও শশুর-শাশুরি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। মেয়েকে হত্যার দায়ে জামাই ও তার পরিবার বর্গের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে জানায় সুরমার বাবা আব্দুর রহিম।

এ বিষয়ে কাউনিয়া থানার ওসি মোহাম্মাদ আনোয়ার হোসেন বলেন তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। তবে মৃতের স্বজনরা যদি কোন অভিযোগ বা মামলা করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

এ বিষয়ে কাউনিয়া থানার এসি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানায়, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন এবং মৃত মহিলা বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ও তার নিকট আত্মীয় কাছে না থাকার কারনে লাশ উদ্ধার করে পোষ্ট মর্ডেম’র জন্য শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পোষ্ট মর্ডেম রিপোর্টে যদি হত্যার আলামত পাওয়া যায় তাহলে মামলা করে দোষিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।