বরিশালে খাল ভরাটে বৃষ্টি হলেই সড়কে জলাবদ্ধতা

:
: ২ years ago

বরিশাল নগরের বটতলা থেকে চৌমাথা পর্যন্ত নবগ্রাম সড়কে প্রায় সময়ই জলাবদ্ধতা থাকে। একটু বৃষ্টি হলেই পয়োনিষ্কাশনের নালা উপচে সড়কের একাংশ পানিতে তলিয়ে যায়।

বিশেষ করে নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন রাজু মিয়ার পুল এলাকা থেকে ফরেস্টার বাড়ি সড়ক পর্যন্ত প্রায়ই এ জলাবদ্ধতা দেখা যায়। এতে প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দারা ভোগান্তিতে রয়েছে।

 

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নবগ্রাম খাল ভরাট করে প্রায় এক যুগ আগে পয়োনিষ্কাশনের নালা ও সড়ক নির্মাণ করায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং করপোরেশন এ জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় হতাশ এলাকাবাসী।

 

জানা গেছে, বিসিসির প্রথম মেয়র (২০০১ থেকে ২০০৬ সাল) মজিবর রহমান সরোয়ার নগরের বটতলা বাজারের বিপরীতে খাল দখল করে মার্কেট করেন। করপোরেশনের দ্বিতীয় মেয়াদের (২০০৮-১৩) মেয়র শওকত হোসেন হিরণ পরে বটতলা থেকে চৌমাথা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার খাল ভরাট করে দ্বিমুখী সড়ক এবং সরু নালা তৈরি করেন। এরপর ওই সড়ক দুবার সংস্কার হলেও একাংশে নালার পানি আটকেই থাকে।

 

স্থানীয় ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত হোসেন খান লাবু এ বিষয়ে বলেন, ‘আপনারা মেয়র সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন। এখন নগরের সব কাজকর্ম মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ করান। এটা তো কাউন্সিলরের বিষয় না।’

 

নগরের ১৫ নগর ওয়ার্ডের মনসুর কোয়ার্টার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম আক্কাস বলেন, ‘এই এলাকায় ২৫-৩০ ফুট চওড়া নবগ্রাম খাল ছিল। এ খাল দিয়ে নৌকা চলত করাপুর দিয়ে বটতলা ঘাটে মালামাল পৌঁছাত। আমরা মাছও ধরতাম। সেই খাল ভরাট করে ৫-৬ ফুট নালা করা হয়েছে। এই নালা আবর্জনায় ভরে থাকে।

খালের কারণে সড়ক নিচু হয়ে গেছে। এতে একটু বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে যায়।’ তিনি বলেন, খাল ভরাট শুরু হয় মেয়র সরোয়ারের আমলে। শেষ করেন মেয়র হিরণ। বর্তমান সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও দেখছে, পরিষ্কার করছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা থেকে এই এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মুক্তি পাচ্ছে না।

 

মনসুর কোয়ার্টার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি জানান, সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা থাকে ফরেস্টার বাড়ি থেকে রাজু মিয়ার পুল পর্যন্ত। এর মধ্যে রাজু মেয়র পুল, আসরাফ সড়ক, মনসুর কোয়ার্টার্স, লাতু চৌধুরী সড়ক, সার্কুলার রোড, ফরেস্টার বাড়ি সড়ক এলাকায় ৪০-৫০ হাজার বাসিন্দার বাস।

এর মধ্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমের বাড়িসহ বিশিষ্টজনের বাড়িতে ঢুকতে জলাবদ্ধতার মুখে পড়তে হয়। সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম আক্কাস বলেন, দুই লেনের এই সড়ক দুবার সংস্কার হয়েছে, কিন্তু জলাবদ্ধতা দূর হয় না। এ জলাবদ্ধতা কেবল সড়কে নয়, বরং আশপাশের বাসাবাড়িতেও ঢুকে যায়।’

 

সরেজমিনে গতকাল শনিবার নবগ্রাম সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের একাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। নবগ্রাম সড়কের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এই সড়কে অধিকাংশ সময়ই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অথচ দেখার কেউ নেই।

তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর লাবুকে জনপ্রতিনিধি হতে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে আসতে হয়নি। তাই এলাকাবাসীর কষ্ট কাউন্সিলর উপলব্ধি করতে পারেন না।নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাজু মিয়ার পুলের বাসিন্দা নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল বলেন, ‘নবগ্রাম খালটি ভরাট করায় এখন জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন বাসিন্দারা। নালা পরিষ্কার থাকলে জলাবদ্ধতা দূর হতো। এই খাল মরে যাওয়ায় প্রকৃতি ধ্বংস হয়েছে।’

 

নদী খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নবগ্রাম খাল উদ্ধার করে এলাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করা দরকার। এর দায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এড়িয়ে গেলে জনগণ আগামী সিটি নির্বাচনে সমুচিত জবাব দেবেন।’

 

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি সাড়া দেননি। জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার রোহান বলেন, ‘নবগ্রাম সড়কে জলাবদ্ধতার বিষয়টি নজরে এসেছে। খাল ভরাট করে সড়ক করায় এমনটি হয়েছে। সেখানে জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবিষ্যতে কাজ করা হবে।’