বরিশালে কৈশোর বান্ধব সেবা কেন্দ্রের মান উন্নয়ন ও বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

কাজী হাফিজঃ সপ্তাহ জুড়ে সারাবেলা কৈশোরবান্ধব সেবা-কেন্দ্র থাকুক খোলা” এই স্লোগান কে সামনে রেখে মানববন্ধন করে সিরাক বাংলাদেশের বরিশাল শাখা।গতকাল শনিবার সকাল ১০ টায় বরিশালের শেরে-ই-বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে এ মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে সিরাক বাংলাদেশের বরিশাল শাখার সদস্যারা এবং শেরে-ই-বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেনর।শিক্ষার্থীরা হাতে প্লাকার্ড নিয়ে এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেণ এবং সচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ করেন। প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার – এ কথাটি সাধারন মানুষ, বিশেষ করে তরুণদের কাছে একটি লজ্জার বিষয় হিসেবেই বিবেচিত হয়।

এ বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে কিশোরী বয়সে বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে অকাল গর্ভধারণ, অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, প্রজনন স্বাস্থ্য জটিলতা, এবং সন্তান জন্মদান করতে গিয়ে প্রতিবছর হাজারো কিশোরী মৃত্যুর সাথে লড়ে, যার ফলশ্রুতিতে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর ২০১৫ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ৩৬ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরী জনগোষ্ঠী রয়েছে যা দেশের মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ এবং যাদের বয়সসীমা হল ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে।

ইউনিসেফ এর তথ্যানুসারে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী বিবাহিত ৫৩ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের মধ্যে। বাল্যবিবাহের জন্য স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। বাল্য বিয়ের উচ্চ হারের কারণে বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালেই অনেক মেয়ে গর্ভধারণ, সহিংসতা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকে। এই বয়সের ছেলে-মেয়ে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি থাকে। প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ে কাউন্সেলিং ইত্যাদির মতো বিষয়ে তারা অবগত নন। এই অবস্থার কারণে বাংলাদেশে অনেক নবজাতকের মৃত্যু হয়। আবার সন্তান প্রসবের পর মা ও শিশু রোগাক্রান্ত হন।

বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালের তিনজন মেয়ের মধ্যে একজনই রুগ্ন।আর মেয়েদের ১১ শতাংশই অনেক বেশি রোগা-পাতলা। তাদের অধিকাংশেরই জিংক, আয়োডিন ও আয়রনের মতো অনুপুষ্টির ঘাটতি রয়েছে।ইউএনএইডস (২০১০) এর সূত্রানুসারে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১৫-২৪ বছর বয়সী প্রায় ১০ লক্ষ তরুণ জনগোষ্ঠী সামঞ্জস্যহীনভাবে এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর ২০১৩ সালের তথ্য অনুসারে ৫৩ শতাংশ কিশোরী-তরুণ আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে না।

এ সমস্যা নিরসনে কিশোর বয়স থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে।সিরাকের বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক আওলাদ রাকিব বলেন, সারাদেশে জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬০৩ টি কৈশোর বান্ধব সেবাকেন্দ্র চালু করেছে যা কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুনীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য প্রাপ্তিতে সহায়তা করছে। এ সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র ২০১৭-৩০ তৈরি করা হয়েছে এবং এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হলেও সেবা কেন্দ্রসমূহের বর্তমান সময়সূচী সকাল ৯ টা থেকে বেলা ৩.৩০ পর্যন্ত হওয়ায় অধিকাংশ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এ সময়ে সেবা গ্রহণ করতে পারে না। যদি এ সময়সীমা সপ্তাহে ৭ দিন এবং বিকেল ৫ টা পর্যন্ত হয় তবে শিক্ষার্থীরা সহজে এ সেবা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

এক্ষেত্রে অতিরিক্ত দক্ষ জনবলেরও প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রতিককালে সিরাক-বাংলাদেশ এর উদ্যোগে সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের কৈশোরবান্ধব সেবা কেন্দ্রের উপর কিশোর-কিশোরীদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে জানা যায়, তারা এ সকল সেবাকেন্দ্রগুলোতে আরো বেশি তথ্য সরবরাহ, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ এবং গোপনীয়তা রক্ষার উপর জোর দেন। এছাড়াও ২০১৭ সালে পপুলেশন কাউন্সিলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে কৈশোর-বান্ধব সেবা কেন্দ্রের সময়সূচী বৃদ্ধি এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য ও সেবার পরিসর বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।