বরিশালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এর উচ্চতা ৪৪ ফুট। এই শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখানে পাঠাগার ও মিলনায়তন নির্মাণের। তবে ২০১৪ সালে কাজ শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি শহীদ মিনার সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামের নির্মাণ কাজ।

বর্তমানে ভাষার মাস ঘিরে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে শহীদ মিনারের সৌন্দর্যবর্ধন ও আশপাশের এলাকার উন্নয়ন কাজ। একুশের চেতনার রঙে শহীদ মিনার সাজানোর কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। সেইসঙ্গে শহীদ মিনারের সামনে গাড়ি পার্কিং দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

বরিশাল শহীদ মিনার সংরক্ষণ কমিটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে বরিশাল সার্কিট হাউস সংলগ্ন জমিতে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, ওই স্থানে পাঠাগার ও মিলনায়তন নির্মাণ হবে।’

শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ কীভাবে নেওয়া হয়েছিল তার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পরই শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মঞ্জুর উদ্যোগে ৫২ হাজার ১১৫ টাকা গণচাঁদা তোলা হয়। গণচাঁদা এবং বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও দাতাদের কাছ থেকে প্রায় ছয় লাখ টাকা উত্তোলন করে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে শহীদ মিনার চত্বরের বেদির পরিসর সাড়ে তিন হাজার ফুট। উচ্চতা ৪৪ ফুট। যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ মিনার।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন আরও বলেন, ‘১৯৮৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্যাপনের জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে ১৭-২১ ফেব্রুয়ারি পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে শহীদ মিনার উন্মুক্ত করা হয়।’

তবে দীর্ঘ ৯ বছরেও শেষ হয়নি শহীদ মিনার সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামের নির্মাণকাজ। পাঁচতলা এই অডিটরিয়ামের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি। ১৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কাজ শুরুর পর দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় মেয়াদের এক বছর পার হলেও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ছয় বছর ধরে কাজ বন্ধ আছে।’

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও পরে নকশা পরিবর্তন হওয়ায় মিলনায়তন নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ২৫ কোটি টাকা করা হয়। এ সময় নির্মাণকাজের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও মিলনায়তনের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ ও মোমেন সিকদার নামের দুটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করেছিল।

ভবনের কাজ শেষ হলেও ভেতর ও বাইরের সাজসজ্জার অনেক কাজ পড়ে আছে। ২০১৮ সালের পর থেকে আর কোনো কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এত বছরেও কেন কাজ শেষ করা যায়নি জানতে চাইলে ঠিকাদার মোমেন সিকদার বলেন, ‘আমার অনেক বিল বকেয়া পড়ে আছে। যতটুকু কাজ হয়েছে, তারও বিল পাইনি। সিটি করপোরেশন বিল দিলে কাজ শেষ করতে পারব আমরা। কিন্তু তারা কাজের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।’

শহীদ মিনার সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামের নির্মাণকাজের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী আবুল বাশার বলেন, ‘ঠিকাদাররা কত টাকা বিল পাবে, তা আমি জানি না। আগের মেয়রের সময়ে কাজ শুরু হয়েছিল। পরে কাজ বন্ধ করে দেয় তারা।’
শহীদ মিনারের সৌন্দর্যবর্ধন ও আশপাশের এলাকার উন্নয়নকাজের বিষয়ে প্রকৌশলী আবুল বাশার বলেন, ‘শহীদ মিনারের চারদিকে সীমানাপ্রাচীর, শিল্পীদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য রুম, জাতীয় অনুষ্ঠান প্রচারে জন্য পৃথক রুম, নারী-পুরুষদের জন্য পৃথক ওয়াশরুম এবং শহীদ মিনারের পেছনের সূর্য কাপড়ের পরিবর্তে স্টিল দিয়ে তৈরি করে তার ওপর লাল রং দেওয়া হবে।

এ ছাড়া শহীদ মিনারের সামনের জায়গা উন্নতমানের ইট দিয়ে সাজানো হচ্ছে। এর সঙ্গে থাকবে সাজসজ্জা ও লাইটিং। কাজ শেষ হওয়ার পর শহীদ মিনারটি দর্শনীয় হবে।’