আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কৃষকরা যেন ন্যায্য দামে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে কৃষকদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে মানসম্পন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা হবে। দেশের ৩১ জেলার ৬২ উপজেলার ৩ হাজার কৃষককে প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের আওতায় রাখা হবে। সরকারি অর্থায়নে ১৬০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষিবিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম)।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কৃষি উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী ও দক্ষ কৃষি বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই জন্য এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের পূর্বের সংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী দেশব্যপী বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরহ ব্যাপার ছিল। এর জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য বিদ্যমান কাঠামো পূর্ণগঠন করা হবে। আর সারাদেশে উপজেলাসহ মোট দুই হাজার ৬০৪টি পদ সৃজনের অনুমোদন পাওয়া গেছে।
নির্বাচিত প্রকল্প এলাকায় কৃষি বিপণন অতিদপ্তরের নিজস্ব কোন অবকাঠামো বা অফিস ভবন না থাকায়, শুধুমাত্র অফিস ভাড়া বাবদ প্রতিবছর সরকারের ৭১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা রাজস্ব ব্যয় হয়।
সূত্র মতে, দেশব্যপী বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা এবং বিপণন সেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর শক্তিশালীকরণ প্রয়োজন। নতুন অবকাঠামো অনুযায়ী উৎপাদক, বিক্রেতা ও ভোক্তাদের আরও উন্নত সেবা, অবকাঠামো ও লজিস্টিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কৃষি বিপণণ অধিদপ্তর আও শক্তিশালী ও কার্যকর করা প্রয়োজন। প্রকল্প এলাকায় উপযুক্ত বিপণন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজতকরণ আবকাঠামেরা অভাবে কৃষি পণ্যের কর্তনোত্তর ক্ষতি হচ্ছে।
প্রকল্পের জন্য ৩১টি জেলাকে নির্বাচন করা হয়েছে। নতুন কাঠামোনুযায়ী উৎপাদক, বিক্রেতা ও ভোক্তাদের আরও উন্নত সেবা, অবকাঠামো ও লজিস্টিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হবে। এভাবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মপরিধি অনেগুণ বৃদ্ধি পাবে।
প্রকল্পের প্রধান কর্যক্রম:
২১টি অফিস কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মান; তিন হাজার জন কৃষক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রশিক্ষণ; ১২টি জেলায় মান নিয়ন্ত্রণ মিটি ল্যাববেটরী স্থাপন; ৮৭৫ জন কর্মকর্তা ও ৭৫০ জন কর্মচারী প্রশিক্ষণ; ৫০০ টি জিরো এনার্জি কুল চেম্বার নির্মাণ; ৮ টি ওয়ার্কশপ এবং দুইটি জাতীয় সেমিনার আয়োজন; এবং ১ টি জীপ, ১টি ডাবল বেনি পিকআপ এবং ৪০ টি মোটর সাইকেল ক্রয়।
প্রকল্পাধীন জেলা:
বরিশাল, ভোলা, ঢাকা, ফরিদপুর, গাজীপুর, শরীয়াতপুর, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, চট্টগ্রাম কক্সবাজার , চাঁদপুরম ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, রংপুর, দিনাজপুর পঞ্চগর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা। মোট ৩১টি জেলার ৬২টি উপজেলায় প্রকল্প এলাকা।
প্রকল্পের উদ্দেশ্যে:
কৃষি প্রক্রিয়াজতকরণ সুবিধাগুলোর উন্নয়ন হলে ফসল উত্তোলন পরবর্তী ক্ষতি হ্রাস ও কৃষকের আয় কৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ক্রমশ উন্নয়ন ঘটছে। হ্যান্ডলিং, মজুদকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষি পণ্য মোড়কজাতকরণে প্রয়োগকৃত বেশিরভাগ প্রযুক্তি ও সুবিধাগুলো দেশজ ও বৈদেশিক ভোগের উপযোগী ও আন্তর্জাতি মানের হওয়া উচিত।
কৃষকরা যেন তাদের উৎপন্ন পণ্যেল প্রকৃত মূল্য পায় ও ভোক্তা যাতে মানসম্পনান পণ্য ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রধান প্রচেষ্টা হবে কৃষি বিপণনেরর দক্ষতা বৃদ্ধি জন্য বাজারের সমস্যা দূরীকরণ ও বিপণন ব্যয় হ্রাস করা। মান নিয়ন্ত্রণ ফাইটোস্যানিটরী বিষয়ক চাহিদা পূরনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি এ অধিদপ্তরের সক্ষমতার উন্নয়ন প্রয়োজন।
পরিকল্পণামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘কর্মাসিয়ালাইজ, পেট্রনাইজ, নতুন ফসল, ফসল সংরক্ষণ, বিপরণ, বহির্বিশে প্রেরণ। দেশের অভ্যন্তরে বিপণন, প্যাকেজিং, স্টোরেজ, এসকল বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক প্রযুক্তিগত টেকনোলজি, আধুনিক ধারণা, আধুনিক চিন্তার জন্য।
‘যারা কৃষিতে আছেন তাদের ট্রেনিং দেয়া হবে। তাদের ধারনা, যন্ত্রপাতি ও সহায়তা দেয়া হবে। এ প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা প্রশিক্ষণ পাবে। কৃষি বিপণন অধিপ্তরে যারা আছে তারাও প্রশিক্ষণ পাবে।’
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কাজ হবে হবে একদম গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদেরকে আন্তর্জাতিক বাজারসহ দেশীয়বাজারে কোথায় কি দাম আছে সেটা জানিয়ে দেয়া। কীভাবে সেখানে পণ্য পাঠাতে হবে তা সম্পর্কে জানানো। কিভাবে প্রসেস করতে হবে, এই কাজগুলো হবে প্রকল্পের আওতায়। তারা যাতে ভালোভাবে পণ্য মোড়কিকরণ করতে পারে সে ব্যপারে ট্রেনিং দেয়া।’