বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) সড়ক পরিদর্শককে মারধরের অভিযোগে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) সড়ক পরিদর্শক (রোড ইন্সপেক্টর) মো. রাজীব হোসেন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।
মামলায় আসামি হিসেবে কাউন্সিলর বিপ্লব ছাড়াও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক মো. কামরুজ্জামানের নাম রয়েছে। এছাড়া আরও তিন-চারজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাজীব হোসেন মামলায় তাকে কর্তব্য পালনে বাধা, আটকে রেখে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। মামলাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে রোববার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে নগরীর বিএম কলেজ সড়কে কাউন্সিলর বিপ্লবের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লার গাড়ি দিয়ে কাউন্সিলরের কার্যালয় সংলগ্ন সড়কে বেরিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
এদিকে কাউন্সিলর কার্যালয় ঘেরাওয়ের প্রতিবাদে বিপ্লবের সমর্থক ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকশ’ বাসিন্দা টায়ার জালিয়ে বৌদ্ধপাড়া মোড় সংলগ্ন বরিশাল-ঢাকা (মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। নগরীর আরও ৯ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সমর্থকদের নিয়ে ওই বিক্ষোভে যোগ দেন। এতে মহাসড়কের ওই অংশে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে প্রশাসনের অনুরোধে সন্ধ্যার দিকে কাউন্সিলর বিপ্লবের সমর্থকরা মহাসড়ক থেকে চলে যান। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা কাউন্সিলর বিপ্লবের কার্যালয়ে সামনে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। পরে মামলা নেওয়ার আশ্বাসে রাত ১১টার দিকে তারা চলে যান।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সড়ক পরিদর্শক (রোড ইন্সপেক্টর) মো. রাজীব হোসেন খান বলেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামান ভবন নির্মাণ করছেন। সিটি করপোরেশন থেকে প্ল্যান পাস করে ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি-না দেখতে সেখানে গিয়েছিলাম। এ সময় নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। ভবন মালিক বিষয়টি ভিন্নভাবে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবের কাছে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব আজ ফোন দিয়ে আমাকে ডেকে নেন। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের হোসাইনিয়া মাদরাসার একটি কক্ষে আটকে রেখে কাউন্সিলর বিপ্লব ও মো. কামরুজ্জামানসহ কয়েকজন আমাকে মারধর করেন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেন। এ ঘটনা জানতে পেরে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় মামলা নেওয়ার আশ্বাস দিলে করপোরেশনের কর্মচারীরা রাতে কাউন্সিলর কার্যালয়ের সামনে থেকে চলে যান।
এ বিষয়ে নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, কলেজ শিক্ষক ও তার ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামান ভবন নির্মাণ করছেন। ওই বাসিন্দা প্ল্যান মতো সব কাজ করছেন। এরপরও মো. রাজীব হোসেন খান সেখানে গিয়ে তাকে বিভিন্ন সময় হয়রানি করতেন। গত ২১ মার্চ সিটি করপোরেশনের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে একদল যুবক কলেজশিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি জানার পর রাজীব হোসেনকে ডেকে কলেজ শিক্ষককে হয়রানি বন্ধের অনুরোধ করেছি। কিন্তু রাজীব হোসেন খানকে দিয়ে একটি মহল ঘটনাটি ভিন্নভাবে প্রচার শুরু করে। আমাকে হেনস্তা করতে তারা করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে কার্যালয় ঘেরাও করেন। এসব কর্মকাণ্ড দেখে আমার ওয়ার্ডের শতশত বাসিন্দা পথে নেমে আসেন। তারা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পরে প্রশাসনের অনুরোধে সন্ধ্যায় মহাসড়ক ছেড়ে সমর্থকদের নিয়ে চলে যাই।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। উভয়পক্ষই সড়ক ছেড়ে চলে গেছেন। এরপরও যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাউন্সিলর কার্যালয়ের সামনে ও বৌদ্ধপাড়া মোড় সংলগ্ন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।