গতকাল ৩ এপ্রিল শুক্রবার দিনভর বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের নিমিত্তে জনসাধারণের গৃহে অবস্থান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরিশাল এস, এম, অজিয়র রহমানের নির্দেশনায় বরিশাল মহানগরীতে ২ টি এবং দশটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি এর নেতৃত্বে ১০টি টিম মোট ১২ টি টিমের মাধ্যমে বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এবং কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষের জন্য আহার্যের ব্যবস্থা করাসহ গুজব প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট অভিযান অব্যাহত আছে। আজ সারাদিন বরিশালে মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন বরিশালের উদ্যোগে নিন্ম আয়ের কর্মহীন খেটে খাওয়া দরিদ্র ৯২৫ টি পরিবারের মাঝে বাড়ী বাড়ী গিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং জনসমাগম করার অপরাধে জেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ৫৫ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায়, এবং নগদ টাকা বিতরণ করা হয়। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন কর্তৃক মাইকিং কার্যক্রম এবং পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শহর এবং উপজেলা সমূহের বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করা হয়।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং দ্রব্যমূল্যের বাজার পরিস্থিতি তদারকির লক্ষ্যে নগরীতে দুইটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের সামনে, সাগরদী, রুপাতলী বাস্টস্ট্যান্ড, নতুনবাজার, হাসপাতাল রোড, ফলপট্টি ও চকবাজার, পলাশপুর এলাকায় মোবাইল কোর্ট ও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে গণসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। উক্ত কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদান করেন বরিশাল জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নাজমূল হুদা ও মোঃ মারুফ দস্তেগীর। এ সময় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় সংক্রামক রোগ (নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী মোট ১১,৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এদিকে আজ বরিশালে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে অন্যান্য দিনের ন্যায় আজ ৩ এপ্রিল শুক্রবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসন বরিশালের পক্ষ থেকে বরিশাল নগরীতে ২ টি মোবাইল কোর্ট টিম অভিযান পরিচালনা করেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অধিক মানুষের সমাগম করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা পালনের পাশাপাশি গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে। জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব এস, এম, অজিয়র রহমানের নির্দেশনায় বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরিশাল মোঃ জিয়াউর রহমান এবং মোঃ সাইফুল ইসলাম। এসময় নগরীর সদর রোড, নতুল্লাবাদ, চৌমাথা ও কাশীপুর, রুপাতলী, সাগরদী এলাকায় মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে গণসচেতনতা ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। উক্ত কার্যক্রম পরিচালনায় করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরিশাল মোঃ জিয়াউর রহমান। এ সময় বিভিন্ন টি-স্টল, মুদি দোকান ও এলাকার মোড়ে মোড়ে যেখানেই জনসমাগম দেখা গেছে তা ছত্রভঙ্গ করা হয় এবং নিরাপদ দূরত্বে চলার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সবাইকে যৌক্তিক প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসতে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ আদেশ অমান্যাকরীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এসময় সাগরদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩টি অপ্রয়োজনীয় দোকান খোলা রাখার অপরাধে সংক্রামক রোগ (নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী শিকদার হার্ডওয়ার এর কর্মচারি আমিন কে ৫ হাজার টাকা। জাহিদ ট্রেডার্স এর মালিক মোঃ জাহিদুল ইসলাম কে ৩ হাজার টাকা এবং মা হার্ডওয়ার এর মালিক মোঃ শাহাদাত কে ৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পরে চৌমাথা বাজার এলাকায় দুটি পণ্যবাহী পিকাপ ভ্যানে যাত্রী পরিবহন করার দায়ে সংক্রামক রোগ (নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী দুই চালক মোঃ রেজাউল কে ৪৫০০ টাকা এবং মোঃ মন্টু কে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় পাশাপাশি ২১ জন যাত্রী কে চারশত টাকা করে মোট ৮ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়। মোট ২৮ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। প্রসিকিউসন অফিসার হিসাবে সহযোগিতা করেন এসআই ফিরোজ আল মামুন এবং এসআই রফিকুল ইসলাম। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি টিম। অপরদিকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বরিশাল মহানগরীতে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরিশাল মোঃ সাইফুল ইসলাম।
এসময় তিনি নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দায়িত্বরত সেনা সদস্যদের সহযোগিতায় সামাজিক দূরত্ব বিষয়ক সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে যাত্রী বহনকারি ঢাকাগামী দুইটি মাইক্রোবাস এবং একটি পিকআপ ট্রাক আটক করা হয়। দুটি মাইক্রো বাসে দুই পরিবারের সদস্যরা যাত্রী হিসেবে গাদাগাদি করে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে তাদের আটক করা হয়। মাইক্রোবাস চালক ও দুই পরিবারের সদস্য এবং তার সহযোগী প্রত্যেককে দন্ডবিধির ২৬৯ ধারা মোতাবেক ১৫ জনকে এক হাজার টাকা করে সর্বমোট ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পাশাপাশি প্রাণসংহারী করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধকল্পে সর্বাবস্থায় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে চলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে সচেতন করা। মোবাইল কোর্টে আইনানুগ সহযোগিতা প্রদান করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি টিম। গতকাল প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কর্মহীন নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষের জীবন যাপনের কথা বিবেচনা করে তাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে প্রশাসন। বরিশালে প্রতিদিন হাজারো কর্মহীন খেটে-খাওয়া মানুষের আহার্যের ব্যবস্থা করছে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন। আজ ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে জেলা প্রশাসক এস, এম, অজিয়র রহমান এর মুঠোফোনে একটি ফোন আসলো বলাহলো নগরীর বিবির পুকুরের পূর্ব পাড়ে আদালত পাড়ায় ১৫ টি পরিবারের ঘরে কালকে রান্না করার মতন চাল নেই। কথাটা শোনা মাত্রই কাল খেপন না করে সাথে সাথেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ১৫ টি পরিবারের ঘরে ঘরে গিয়ে ১০ কজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি ডাল এবং একটি সাবান পৌঁছে দিলেন নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাৎ হোসেন। ত্রাণ সামগ্রী পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরে ১৫ টি পরিবার। এসময় ষাটোর্ধ্ব নুরজাহান বেগম এভাবে বলেন, আজ যদি চাইল না পাইতাম তবে কাইল না খাইয়া থাকতে হইতো ডিসি সারে কইছে শেখহাসিনা চাইল ডাইল পাঠাইছে আমি তার জন্য দোয়া করি।
আজ সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ও চরবাড়িয়া ইউনিয়নে ২০০ অসহায়, দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারের মাঝে ২ মেট্রিক টন চাল সহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী এবং নগদ ১০ হাজার টাকা বিতরণ করেন সহকারী কমশনার (ভূমি) বরিশাল সদর মোঃ মেহেদী হাসান। আগৈলঝড়া উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলাম আজ উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আস্করবাড়ি ও পয়সারহাট এলাকায় ৩০ টি কর্মহীন দরিদ্র পরিবারে চালসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী এবং নগদ টাকা বিতরণ করেন। বাকেরগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাধবী রায় উপজেলার নলুয়া এবং দাড়িয়াল ইউনিয়নে ৯০ টি পরিবারের মাঝে চালসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। গৌরনদী উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান গৌরনদী পৌরসভায় ২৫ টি পরিবারের মাঝে চালসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। উজিরপুর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণতি বিশ্বাস উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নে ৫০ টি সুবিধা বঞ্চিত পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী এবং নগদ ১৭ হাজার টাকাসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কারেন। বানারীপাড়া উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ উপজেলার বন্দরবাজার এলাকার ১১০ টি দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলা কেদারপুর ইউনিয়নে করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায়, দরিদ্র ও কর্মহীন ৩০ টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন সহকারী কমশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান। এ সময় তিনি জনগণকে কোভিড-১৯ নিয়ে সচেতন হওয়ায় এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহবান জানান। মুলাদী উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভ্রা দাস স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী উপজেলার সদর ও কাজীরহাট ইউনিয়নে ২২৫ টি দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণ করেন। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিজুস চন্দ্র দে উপজেলার তুলাতলী, লতা ইউনিয়ন ও কাজীরহাট থানা এলাকায় ১০০ টি দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
হিজলা উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমীনুল ইসলাম হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর এবং বড়জালিয়া ইউনিয়নের বাউশিয়া এলাকায় কর্মহীন দিনমজুর ও অসহায় ৫০ টি পরিবারের মাঝে চালসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। জেলাব্যাপী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, মোবাইল কোর্ট এবং করোনা প্রতিরোধে গৃহীত অন্যান্য কার্যক্রম প্রতিনিয়ত তদারকি করছেন জেলা প্রশাসক বরিশাল তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন বরিশালের জনস্বার্থে সকল ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে পাশাপাশি গুজব প্রতিরোধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।জেলার কোন মানুষ যাতে না খেয়ে থাকে সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সদা তৎপর থাকবে বলে জানান তিনি।