ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টির সঙ্গে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এখনও বরিশাল নগরসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে রয়েছে।
বিশেষ করে নগরের বিভিন্ন সড়কে এখনও পানি জমে থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত বরিশাল নগরের বটতলা থেকে চৌমাথা, বগুড়া রোডের একাংশ, রাজাবাহাদুর সড়কসহ অলিগলিতে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বৃষ্টির পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুরের মধ্যে বেশির ভাগ বাসাবাড়ির ভেতর থেকে পানি নেমে গেছে। যদিও সদর রোডের বহুতল ভবনগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ডের পার্কিংয়ের ভেতরে জমে যাওয়া পানি সেচের মাধ্যমে অপসারণ করতে দেখা গেছে।
ভোগান্তির মাঝে সড়কে জমে থাকা পানিতে শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করতে দেখা গেছে। অনেকে জাল দিয়ে মাছ শিকারও করেছেন।
ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক মুনছুর বলেন, পানির কারেণে ব্যাটারি ও ইঞ্জিন চালিত যানবাহন চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। পানি লেগে বিকল হয়ে যাচ্ছে। পানির কারণে রাস্তাঘাটে মানুষজনও কম, তাই আজ আয়ও কম হয়েছে। মোটরে পানি ঢুকে সমস্যা হওয়ায় তা সারাতে পকেট থেকে টাকা গুনতে হয়েছে।
বরিশাল নগরের বটতলা এলাকার বাসিন্দা সুজন জানান, মূল সড়কে পানি কমলেও গলির পানি কমেনি। তাই বাসা থেকে বের হয়ে বাজারসহ সকল কাজই হাঁটুসমান পানির মধ্যে করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, খাল ভরাট করে সড়ক ও সরু ড্রেন তৈরি করার পর থেকেই বটতলা সড়ক সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। এ ধরনে দুর্যোগ হলে তো কথাই নেই। কবে যে পানি নামবে তাও কেউ বলতে পারছে না।
গোরস্থান রোড এলাকার বাসিন্দা রুবেল বলেন, ময়লায় আশপাশের বড়-ছোট ড্রেনগুলো আটকে রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে পানি যেতে পারছে না। তা না হলে সড়কগুলো এখনও পানিতে নিমজ্জিত থাকার কথা না।
নগরের সদর রোডের ব্যবসায়ী ভোলা বলেন, বৃষ্টি কিংবা জোয়ার যাই হোক না কেন এত পানি সদর রোডে কেউ আগে দেখেনি। সড়ক, ফুটপাত প্লাবিত হয়ে মার্কেটগুলোসহ আশপাশের ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকে গেছে। দোকানপাটে পানি ঢুকে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের উপ-সহকারী মো. মাসুম জানান, সিত্রাং কেটে গেলেও এর প্রভাবে নদীতে পানি বেড়েছে। এর সাথে অমাবশ্যার জোয়ারের প্রভাব এবং ভারী বর্ষণের কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে পানি কমবে।
বরিশাল বিভাগে ২১ লাখ ৭১ হাজার ৯ জন মানুষ ও ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩২ পশুর জন্য ৩ হাজার ৮২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র সকাল থেকে ছাড়তে শুরু করে মানুষ। সেই সাথে গৃহপালিত পশুগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০ লাখ ৩৩৬ জন মানুষ এবং ৫৪ হাজার ৮২২টি পশু আশ্রয় নিয়েছিল।