বরিশাল নগরীর ৩০নং ওয়ার্ডের গড়িয়ারপার এলাকার বাসিন্দা। ৭০ ঊর্ধ্ব এই ব্যক্তির সাথে কথা হয় বরিশালের উন্নয়ন নিয়ে। এক কথায় তিনি বলেন বরিশালের উন্নয়ন মানে ‘হিরণ’।
‘হিরণ যা করেছে বিগত বছরে এরকম উন্নয়ন আর কেউ করতে পারেনি। সে দেখিয়ে দিয়েছে উন্নয়ন কীভাবে করতে হয়।’
‘আমরা চাই এবারের সিটি নির্বাচনে আরেকজন হিরণ আসুক। যে কথা বলবে কম, কাজ করবে বেশি’ ভোট নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা বললেন ফরাজী।
২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করা শওকত হোসেন হিরনের শূন্যতা অনুভূত হচ্ছে বরিশালে। মেয়র আহসান হাবিব কামাল গত পাঁচ বছরে কিছু করে দেখাতে সফল না হওয়ার পর হিরনের কাজ আরও সামনে উঠে এসেছে।
পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে অবশ্য হিরনের কাজের মূল্যায়ন করেনি বরিশালবাসী। তার চেয়ে কামালই বেশি প্রিয় ছিল তাদের। তবে এবার নির্বাচন আসার পর থেকেই প্রয়াত মেয়রের গুরুত্ব তারা বুঝতে পারছেন। আর নির্বাচনী প্রচারে হিরন ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সাবেক মেয়রকে অবশ্য এখন কেবল স্মরণই করা যাবে। কারণ, ২০১৪ সলে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।
নগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের সিকদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা মাসউদ সিকদার বলছিলেন, ‘সাবেক এই মেয়র রাত দিন এই নগরীতেই ঘোরাঘুরি করতেন। কখনো বর্ধিত এলাকাগুলোতে, কখনওবা নগরীর আনাচে কানাচে। সার্বক্ষণিক খোঁজ নিতেন নগরবাসীর।…তার কিছু কাজের মধ্যেও ত্রুটি ছিল। তবে সেই ত্রুটিগুলো ঢাকা পড়ে যায় তার উন্নয়নের কাছে।’
‘আমরা চাই হিরণের এই অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করুক আগামীর নগর পিতা। যে প্রতিশ্রুতির বাক্স না দিয়ে নিঃস্বার্থে নগরবাসীর পক্ষে কাজ করবে।’
নগরীর ১নং ওয়ার্ডের কাউনিয়া বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো, কামরুজ্জামান জানান, ‘আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে নয়, ব্যক্তি হিরণকেই সবাই পছন্দ করতাম। এই নগরীর জন্য তার মতো একজনকে দরকার।’
প্রয়াত মেয়রের জন্য বরিশালে যে ‘আফসোস’ উঠেছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছেন হিরনের দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বলছেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেই উন্নয়ন হয়। সেটি ২০১৩ সালে বরিশালবাসী না বুঝলেও এখন বুঝছেন। কারণ, তারা দেখেছেন বিএনপিকে ভোট দিলে কী হয়।
বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার অবশ্য ভোটে কখনও হারেননি। সংসদ বা সিটি করপোরেশন নির্বাচন-প্রতিবারই জয়মাল্য উঠেছে তার গলাতেই। ভোটের প্রচারে দাবি করছেন, বরিশালে উন্নয়নের ভীত তিনিই রচনা করেছেন। ফলে নগরীকে এগিয়ে নিতে তার বিকল্প নেই। আর জনগণ এটি বুঝে দাবি করে সরোয়ার বলেন, তিনিই জয়ী হবেন ৩০ জুলাইয়ের ভোটে।
বরিশালের শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের সাংগঠনিক সম্পাদক প্লাবন সাহা বলেন, ‘নগরীতে প্রতিটি ক্ষেত্রে হিরণের শূন্যতা ভোগ করছে মানুষ। কেননা স্বল্প বৃষ্টিতে নোংরা পানি পার হয়ে চলাচল করতে সাধারণ মানুষদের। রাস্তাঘাটের খানা খন্দ ভোগান্তি আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলছে। ফলে এবারের নির্বাচনে এর একটি প্রভাব পড়বে।’
জাতীয় কবিতা পরিষদ বরিশালের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ‘সফল মেয়র ছিলেন হিরণ। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক নেতার বাইরেও তিনি প্রকৃত অর্থে জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তার শূন্যতা ঘুচাতে পারেননি বর্তমান মেয়র। এ কারণে পৃথিবীতে না থেকেও চলতি নির্বাচনে হিরন প্রাসঙ্গিক।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘হিরণের আমলের ঝলমলে নগরী এখন মৃত প্রায়। জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা চাই আগামীর নগরপিতা প্রয়াত মেয়রকে অনুসরন করুক। তাহলে এই নগরীর উন্নয়ন দ্রুত গতিতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও লেখক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, ‘ভোটারদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে হিরণের অসমাপ্ত উন্নয়ন যিনি করতে পারবেন এবং নগরবাসীর জন্য যে ভাববে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন আপনারা।