নতুন বছরের প্রথম দিনেই বিনা মূল্যে নতুন বই পেয়ে উচ্ছাসিত দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সোয়া ২ কোটি শিক্ষার্থীরা। ১ জানুয়ারি বুধবার সকাল থেকে দিনভর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পাঠ্য বই তুলে দেয়া হয়। আর এই বই উৎসবকে ঘিরে প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল গুলোতে উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যে বুধবার ১ জানুয়ারারি সকাল ১১টায় বরিশাল সরকারি জিলা স্কুলে বই উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম-এমপি।
এসময় প্রধান অতিথি’র বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় ভাবেন স্কুলে যাতে গরীব ও ধনীদের মধ্যে কোন পার্থক্য না থাকে। ধনীদের সন্তানদের হাতে বই থাকবে আর গরীবের ছেলে-মেয়েদের হাতে থাকবে না তা হবে না। এ কারণেই জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বছরের প্রথম দিনেই সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্য বই তুলে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেই নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের দিকে নজর দিয়েছেন। তাই এখন আর সন্তানের বই কেনা নিয়ে বাবা-মাকে ভাবতে হচ্ছে না। তাছাড়া বছরের প্রথম দিনে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে এক হাজার কোটি টাকার নতুন পাঠ্য বই তুলে দেয়া একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্যই সম্ভব হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা পড়া-শুনায় দিকে মনোযোগী হও। সেই সাথে খেলাদুলার মাধ্যমে নিজেদের শরীর ও মন সুস্থ রাখতে হবে। তোমাদের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে পড়া-লেখার প্রতি মন বসবে না। অভিভাবকদেরও বলবো, সম সময় সন্তানদের লেখা-পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি মনোযোগী করে তুলবেন।
প্রতিমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমরা আগামী দিনের ভবিষৎ। তোমরাই একদিন এই দেশ পরিচালনা করবে। তাই সেই মানষিকতা নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি সন্তানদের দুর্নীতি এবং অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ^জিৎ সাহা’র সভাপতিত্বে বই উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন, বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশান্ত কুমার দাস, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আকরাম হোসেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান পরবর্তী বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে পাঠ্য বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম-এমপিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। পরে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন তারা।
অপরদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উৎসবের উদ্বোধন করেন বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
এর আগে সকাল ৯টায় নগরীর বটতলা এলাকাধিন নব আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, সকাল ১০টায় রূপাতলী হাউজিয়ে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত উচ্চ বিদ্যালয়ে, সকাল ১১টায় কাউনিয়ায় শহীদ আরজুমনি সরকারি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, সকাল সোয়া ১১টায় বটতলা হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর বটতলা আদম আলী হাজী লেনে গ্লোবার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
উল্লেখ্য, বছরের প্রথম দিনে বরিশাল বিভাগে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ইবতেদায়ীসহ সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে ২ কোটি ২২ লাখ ৭২২ কপি নতুন বই বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৯ কপি বই এবং মাধ্যমিক স্তরে ১ কোটি ৬৮ লাখ ১৩ হাজার ৭২২ কপি।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় উপ-পরিচালক এসএম ফারুক জানান, ‘বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা ও ভোলা জেলায় প্রাক-প্রাথমিকে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৮৫ কপি, প্রাথমিক পর্যায়ে (১ম-৫ম শ্রেণি) বাংলা ভার্সনে ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ১৮৫ এবং ইংরেজি ভার্সনে ৭ হাজার ৪৪৯ কপি, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩০ লাখ ৮২ হাজার ৯৩০ কপি, এসএসসি ভোকেশনালে ৪৮ হাজার ৮৩৫ কপি, দাখিল পর্যায়ে ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩০০ কপি ও দাখিল ভোকেশনাল স্তরে ৩ হাজার ৭০০ কপি, ইবতেদায়ীতে ৪ লাখ ২১ হাজার ৯০০কপি, ইংলিশ ভার্সনে ৬ হাজার ৭৩১ কপি, কারিগরি স্তরে (ট্রেড) ১৮ হাজার ৪৮৪ কপি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ৪৮১ কপি নতুন বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।