বরিশালে উত্তাল নদীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ঠেসে পারাপার

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বরিশালে। দিনভর গোটা জেলায় দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলের নদীগুলোও এখন অনেকটা উত্তাল। কিন্তু এমন ঝড়-ঝঞ্ঝায়ও বরিশালে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট ছোট নৌযান। নৌকা, ট্রলার কিংবা স্পিডবোটে যাত্রী ঠেসে বড় নদী পাড়ি দিচ্ছে।

 

এ অঞ্চলে ১৫ মার্চ থেকে টানা ৭ মাস ছোট নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিআইডব্লিউটিএ। অথচ নদীর তীরবর্তী হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদী, বাকেরগঞ্জ, সদর উপজেলার অধিকাংশ খেয়াঘাটে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। এতে বিভিন্ন সময় বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা।

 

অবশ্য নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, ঝড়ের মৌসুমে নৌপথের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। রোববারের ১৫টি নৌযান জব্দ করে মালিকদের থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।

 

মেহেন্দীগঞ্জের চর একরিয়া ইউনিয়নের চরলতা তাজুয়ার খেয়াঘাট থেকে জয়নগর ইউনিয়নে যাওয়ার পথে গজারিয়া নদীতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে চলছে পারাপার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় এ নৌপথে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

 

গত রোববার বিকেলেও ২০-৩০ জন ধারণক্ষমতার একটি ট্রলারে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়েও বসেছিল আরও যাত্রী ওঠার অপেক্ষায়। অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানোর বিষয়ে ট্রলার মালিক মাসুদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি।

 

এর আগে গত ৮ এপ্রিল গজারিয়ায় জেলে-নৌকায় পারাপারের সময় চারজন নিহত হন। দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রিন্টু দেওয়ান বলেন, গজারিয়া নদীতে বেশ কয়েকটি খেয়াঘাট আছে।

 

এগুলো হচ্ছে দড়িরচর-মাঝেরচর, নতুনহাট-মাঝের চর, পাশের জয়নগর ইউনিয়নের নলবুনিয়া-পোলতাতুলি, রহমানের হাট-পোলতাতলি।

 

যাত্রীবাহী ট্রলার এবং নৌকাও উত্তাল নদীতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এ জন্য প্রশাসনের কোনো নজরদারিও নেই।

একই উপজেলার দাতপুর গ্রামে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে পারাপার চলছে। এ ছাড়া লালখারাবাদ থেকে লতা ইউনিয়ন, মেঘনার উলানিয়া লঞ্চঘাট থেকে গোবিন্দপুর, চরমহিষা থেকে জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে খেয়া পারাপার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী বলেন, ছোট ট্রলার, ছোট নৌকা এই মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে চলতে পারবে না।

 

তাঁরা রুট পারমিট দেন না। এগুলোর বৈধতাও নেই। এসব দেখার জন্য নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডও রয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ অঞ্চলের সব নদীতে চলমান খেয়াঘাটের ট্রলারের অবস্থা খতিয়ে দেখবেন।

এদিকে মেঘনাঘেরা হিজলা উপজেলার পুরোনো হিজলা থেকে একতা বাজার খেয়া এবং পুরোনো হিজলা থেকে আলীগঞ্জ মেঘনা নদীতে খেয়া পারাপার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

 

এ রুটে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, স্পিডবোট অহরহ চলছে। বাকেরগঞ্জের দুধল ইউনিয়নের শর্শী খেয়াঘাট এবং ডিসি রোডের কবাই-ফরিদপুর কারখানা নদীতে খেয়া পারাপারও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার নৌপথেই এমবি শ্রেণির মোটর বোট চলতে পারবে না।

 

এদিকে দুর্যোগপূর্ণ মৌসুমে বরিশাল নগরীসংলগ্ন ডিসি ঘাট এবং লাহারহাট থেকে কয়েক শ স্পিডবোট অবৈধভাবে চলাচল করছে।

 

বিআইডব্লিউটিএ বলেছে, স্পিডবোট চলাচলের কোনো বৈধতা নেই। এরপরও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মেঘনা পাড়ি দিয়ে ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জ ছোটে স্পিডবোটগুলো।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, ঝড়ের মৌসুমে নৌপথের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

রোববারের অভিযানে সার্ভে সনদ ও প্রশিক্ষিত নাবিক না থাকা, অতিরিক্ত পণ্য ও যাত্রী বোঝাই, অপর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম রাখার দায়ে ১৫টি নৌযানকে জব্দ করা হয় হয়। পরে আটক নৌযানের মালিকদের ৪ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ মৌসুমে উত্তাল মেঘনা, কীর্তনখোলা, গজারিয়াসহ বিভিন্ন নদীতে যেসব ইঞ্জিনচালিত ট্রলার অবৈধভাবে চলছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে নৌপথে শৃঙ্খলা ফেরাতে অভিযানও করেছেন।

অশনির প্রভাব

সোমবার বরিশালে বেলা ১১টার পর প্রথমে গুঁড়িগুঁড়ি ও পরে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়। প্রায় ১ ঘণ্টা এ অবস্থা চলার পর সারা দিনই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রের বরিশালের উপপরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বরিশাল নদীবন্দরে সোমবার ২ নম্বর সতর্ক সংকেত ছিল। ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত উঠলে প্রশাসন জরুরি ব্যবস্থা নেবে।