বরিশালে ঈদযাত্রায় স্লিপের সান্ত্বনা নিয়ে ফিরছেন লঞ্চযাত্রীরা

:
: ২ years ago

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ঈদে বাড়ি ফেরার আমেজ ছিল না গত দুই বছর। এবারের ঈদুল ফিতরে তাই স্বজনদের কাছে যেতে আগ্রহ বেশি। বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে এরই মধ্যে বাড়ি ফেরার আগাম তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

তাই এই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা লঞ্চ সার্ভিসেই আগ্রহ বেশি যাত্রীদের। বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে টিকিট পেতে দেওয়া হচ্ছে স্লিপ নামের সান্ত্বনা।

এদিকে লঞ্চে এ বছর যাত্রীদের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও ঈদযাত্রায় তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

গতকাল সোমবার ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর বরিশাল নগরের বুকিং অফিস ঘুরে দেখা গেছে ঈদের টিকিট পেতে যাত্রীদের আনাগোনা।

সুন্দরবন ও সুরভী লঞ্চে টিকিট পেতে আগেভাগে নাম-ঠিকানা লিখে স্লিপ জমা দেওয়ার নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সেখানে কথা হয় সোনিয়া আক্তার নামের এক তরুণীর সঙ্গে। স্বজন আসবে, তাই স্লিপ জমা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই স্লিপে আদৌ টিকিট পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।

জানতে চাইলে এমভি সুন্দরবন লঞ্চের বুকিং অফিস ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, টিকিটের জন্য তাঁরা স্লিপ নেওয়া শুরু করেছেন।

স্লিপ অনুযায়ী যাত্রীদের টিকিট দেওয়ার চেষ্টা করবেন। ইতিমধ্যে স্লিপও জমা পড়েছে অনেক। তিনি বলেন, সরকার লঞ্চযাত্রীদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করলেও ডেকের যাত্রীদের ক্ষেত্রে কীভাবে তা নিশ্চিত করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

নগরের প্যারারা রোডে সুরভী লঞ্চের বুকিং অফিসের একাধিক কর্মচারীকে স্লিপ দেওয়ার নোটিশ দেখিয়ে যাত্রীদের প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। সুরভী লঞ্চে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্লিপ নেওয়া হবে। ঈদে বাড়ি ফিরতে ঢাকা থেকে বরিশালের টিকিট স্লিপের আওতায় থাকবে ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে।

আবার ঈদের পর বরিশাল থেকে ঢাকা টিকিট স্লিপের আওতায় থাকবে ৩ থেকে ১০ মে পর্যন্ত। অন্যান্য বড় লঞ্চগুলোর টিকিটও এভাবেই বণ্টন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেহেদী হাসান জানান, এই যে স্লিপ আবার এনআইডি, এত ঝামেলা কি সাধারণ যাত্রীরা বোঝেন। তিনি বলেন, ঈদের আগে টিকিট পেতে এখনই চেষ্টা করছেন।

ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যাত্রী ওঠানো কি সম্ভব হবে? এটি বাস্তবায়ন কঠিন হবে।

তিনি বলেন, ঝড়ঝঞ্ঝার এ মৌসুমে নদীতে ঢেউ মারাত্মক। তাই সাবধানে লঞ্চ চালানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও নিয়ম মেনে কয়জন চলতে পারেন।

লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সুন্দরবন লঞ্চের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, করোনায় দুই বছর অনেকই বাড়ি যেতে পারেননি।

তাই এবার যাত্রী বেশি হবে। তাঁদের কমপক্ষে ২২টি লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে ডাবল ট্রিপ দেবে। সোমবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে লঞ্চমালিকদের বৈঠকে ঝড়ঝঞ্ঝার মৌসুমে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, গত রোববার নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বৈঠকে লঞ্চে উঠতে যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের কথা বলেছেন। কিন্তু সভায় রিন্টু বলেছেন, যত দূর সম্ভব যাত্রী পরিচয়পত্র নিশ্চিত করবেন।

কেননা, ডেকের যাত্রীকে এই নিয়মের আওতায় ধাপে ধাপে আনতে হবে। ইতিমধ্যে তাঁরা টিকিটের জন্য স্লিপ নেওয়া শুরু করেছেন। ঈদে যাত্রীর চাপ নিয়ন্ত্রণে গার্মেন্টস

বরিশাল নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক দেওয়ান নীলু বলেন, স্লিপ প্রথা থাকলেও বাস্তবে ওই পন্থায় টিকিট পাওয়া যায় না। এটা একধরনের সান্ত্বনা।

ঈদ এলেই একশ্রেণির কালোবাজারি টিকিট হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে লঞ্চে যাত্রা করার নিয়ম একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। দেশের নাগরিক কেন পরিচয়পত্র নিয়ে ঘুরবে।

সরকার তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। ১৮ এপ্রিল ঈদে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ১২ দফা দাবিতে নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দেবে।

বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঈদে যাত্রীদের নিরাপত্তায় তাঁরা শিগগিরই মালিক, শ্রমিকদের নিয়ে বসবেন।