বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী প্রিন্সিপ্যাল হাফেজ মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর চায়না প্যালেস রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১৬টি ইশতেহার তুলে ধরেন। তবে আসন্ন বিসিসি নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থী প্রিন্সিপ্যাল হাফেজ মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এর আগে খুলনা ও গাজীপুরে দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এই নির্বাচনে কারচুপি দেখে সবাই হতাশ হয়েছি। এর ফলেই বরিশাল সিটি নির্বাচনেও গভীর শঙ্কা কাজ করছে। কিন্তু ভোটের দিন কোন অনিয়ম হলে জোর প্রতিবাদ জানানো হবে।

হাফেজ মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব আরো বলেন, আমি দুর্নীতি ও দুর্দশাগ্রস্থ বরিশাল নগরবাসীকে একটি মডেল সিটি উপহার দিতে চাই। যেখানে সন্ত্রাস-দুর্নীতি-চাঁদাবাজ ও পার্সেন্টিসজীবীগণ নেতৃত্বে থাকবেনা। আর নগরবাসী এমন একজন ব্যক্তিকেই মেয়র হিসেবে দেখতে চায়। তাই আমি আশাবাদী যে সর্বস্তরের বরিশালবাসী আমাকেই নির্বাচিত করবে। এসময় তিনি নগরীতে ইসলামী আন্দোলনের অনেক ভোট রয়েছে দাবি করে আরও বলেন শান্তিপূর্ণ ভোট হলে এই সিটিতে তাদের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এজন্য তিনি গনমাধ্যম কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর ও বরিশাল মহানগর সভাপতি মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (পীরে কামেল চরমোনাই)। এসময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচনে আমাদের প্রাপ্ত ভোট এবং এতদিনে আমাদের জনশক্তি বৃদ্ধিও হিসাব করে আমরা আশা করছি এ নির্বাচনে অবশ্যই বিজয়ী হবো।

তিনি আরো বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জনগণের সাথে সবচেয়ে বেশী সম্পৃক্ত একটি রাজনৈতিক দল। কেননা দেশের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে আমাদের শাখা সংগঠন রয়েছে। আমরা ছাত্রদের নিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, যুব সমাজের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলন, শিক্ষক মহলে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম, শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন, আইনজীবিদের নিয়ে ইসলামী আইনজীবি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মদের নিয়ে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ, ওলামায়ে কেরামদের সমন্বয়ে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ গঠন করেছি। এদের মাধ্যমে আমরা সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছি। তাই আমরা বিজয়ী হয়ে জনগণের ভালবাসার প্রতিদান দিতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত ১৬ টি ইশতেহার গুলো হলো, নগরীতে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মৌলিক অধিকারবঞ্চিত সকল নাগরিকের মাঝে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। নগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর ও মনোরম রাখার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব ধরনের কলকারখানা স্থাপনের জন্য জনসাধারণকে উৎসাহিত করা। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল সড়ক ও লেন পর্যায়ক্রমে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নগরীর সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও তা দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে নগরপরিকল্পনাবিদ, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী পরিকল্পনাবিদ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সিটি প্লানিং টিম গঠন করা ও তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া এবং বাজেট প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদগণের মতামত গ্রহণ করা। সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নবীন-প্রবীনদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন করা। সিটি কর্পোরেশনের সকল কার্যক্রম আধুনিকায়নের লক্ষ্যে যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহার করা। (যাতে নগরবাসী প্রয়োজনীয় সংবাদ, পেপার্স সময়মত পেয়ে নগর ভবনের সাথে সংশ্লিষ্ট লেনদেন আদান-প্রদান করতে পারে) । দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এ কাজের উৎস খুঁজে বের করা, গডফাদারদের চিহ্নিত করা, অতপর ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, কাউন্সিলর ও প্রশাসনের সমন্বয়ে যৌথ টিম গঠন করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভুতি ও বিবেকবোধ জাগ্রত করা ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমনের চেষ্টা করা। বিদ্যুতের সুব্যবস্থার লক্ষ্যে দৃষ্টিনন্দন সাশ্রয়ী সড়কবাতি স্থাপন করা ও নগরীর অন্ধকার দূরীকরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। সংখ্যালঘু ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়নে প্রশাসনের সহযোগিতায় সকল প্রকার নাগরিক অধিকার, মানবিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। সকল ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় শিক্ষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ প্রদান করা। অসহায় এবং আশ্রয়হীন পথশিশু ও মহিলাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা। বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। ভোলা থেকে বরিশাল নগরীতে গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে নগরবাসীকে গ্যাস ব্যবহারের সুবিধা প্রদানের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য মনিটরিং সেল শক্তিশালী করা, প্রয়োজনে নতুন টিম গঠন ও এর আধুনিকায়ন করা। নিরাপদ সড়ক গঠন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার, ফুটপাতবিহীন রাস্তার ফুটপাত তৈরি করা, বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোড়াখুড়ি বন্ধ করা ও যানজট নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পয়:নিষ্কাষণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে নিয়মিত ড্রেন পরিস্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ২৪ ঘন্টা সুপেয় পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নাগরিকদের জন্য অভিযোগ ও পরামর্শ বক্স স্থাপন করা এবং তাদের বিভিন্নমুখী অভিযোগ ও পরামর্শের ভিত্তিতে নগরীকে সার্বিকভাবে সুন্দরকরে গড়ে তোলা। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতী সৈয়দ আবুল খায়ের, বরিশাল মহানগর সেক্রেটারী মাওলানা জাকারিয়া হামিদী, জেলা সেক্রেটারী উপাধ্যক্ষ মাওঃ সিরাজুল ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারী উপাধ্যক্ষ মাওঃ জামিলুর রহমান, মহানগর জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওঃ আবুল খায়ের ইসলামী যুব আন্দোলন মহানগর সভাপতি মাওলানা শফিকুল ইসলাম, জেলা সভাপতি মাওলানা কাজী বেলাল হাসান, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন মহানগর সভাপতি- কে এম শরীয়াতুল্লাহ, জেলা সভাপতি মুহাম্মাদ ইবরাহীম হুসাইন, প্রার্থীর বড় সাহেবজাদা মাওলানা আতিক উল্লাহ প্রমুখ।