বরিশালে ইমামের মাথায় মল ঢেলে নির্যাতনের পর এবার প্রাণনাশের হুমকি

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বরিশালের বাকেরগঞ্জে মাদ্রাসার কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক ও ইমাম মাওলানা মো. আবু হানিফার শরীরে মল ঢেলে দেয়ার ঘটনার রেশ না কাটতেই তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী মাওলানা আবু হানিফা ও তার ছেলে মো. মহিবুল্লাহ এমন অভিযোগ করেছেন।

মহিবুল্লাহ বলেন, লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি চেপে যেতে চাইলেও ঘটনার ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এরপর রোববার ওই ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের পর দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিপক্ষের লোকজন তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

ভুক্তভোগী ওই ইমামের ছেলে বলেন, সোমবার রাতে গ্রেফতার হওয়া জামায়াত নেতা (পদবি বলতে পারেননি) এজাহারভুক্ত আসামি এনামুল হাওলাদারের ভাই হাবীব মুন্সী বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাকে ও আমার বাবাকে প্রাণে শেষ করে দেবেন বলে হুমকি দেন। এজন্য তিনি প্রয়োজনে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করবেন বলেও ঘোষণা দেন।

নির্যাতনের শিকার মাওলানা আবু হানিফা বলেন, ‘জামায়াতের লোকগুলো সংঘবদ্ধ হয়ে আমার পথরোধ করে এভাবে ঘৃণ্য কায়দায় লাঞ্ছিত করেছে। আমি এর বিচার দাবি করছি।’

তিনি বলেন, এর আগেও জামায়াতের সাবেক আমির শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আলমগীর হোসেনের (বর্তমানে পটুয়ালী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক) নির্দেশে জামায়াতের এসব লোকজন আমাকে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তাদের সংগঠনের মতাদর্শ ও আকিদাগত দ্বন্দ্বের কারণে। এরাই আমাকে সমাজে হেয় করা জন্য এমন ঘৃণিত কাজটি করেছে।

আবু হানিফা আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর মামলা করলে গ্রেফতার হওয়া জামায়াতের লোক (পদবি জানাতে পারেননি) মো. এনামুল হাওলাদারের ভাই হাবীব মুন্সী সোমবার সকালে বাড়িতে এসে হুমকি প্রদান করেন মামলা তুলে নেয়ার জন্য।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি তেমন গ্রামের বাড়িতে যাই না। আর এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। তবে ফেসবুকে দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন তিনি (আবু হানিফা)। আমি জামায়াতের সঙ্গে কোনো কালেই জড়িত ছিলাম না। আর যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারাও জামায়াতের সঙ্গে জড়িত না।’

ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, ওই মাদ্রাসায় আমাদের এবং আবু হানিফাদের জমি রয়েছে। আবু হানিফার ওপর এমন ঘটনার নিন্দা জানান তিনি।

রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. বশির উদ্দিন জানান, মাদ্রাসার কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে জামায়াতের লোকজন মাওলানার ওপর এমন অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে। এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তিনি।

এদিকে জামায়াতের লোকজনের এই কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ আলেম সমাজ ও স্থানীয়রা। তারা বিচারের দাবিতে আগামী বুধবার মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।

রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুচ্ছুন্নাত দাখিল মাদ্রাসাটি। এই মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মো. আবু হানিফা।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন হয়। আবু হানিফা সভাপতি প্রার্থী এইচ এম মজিবর রহমানের পক্ষ নেন। নির্বাচনে মজিবর রহমান বিজয়ী হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার আবু হানিফার উপর ক্ষুব্ধ হন।

কমিটির সভাপতির পদে হেরে গিয়ে প্রতিপক্ষ জামায়াত-শিবিরের লোকজন শুক্রবার সকাল ৭টায় আবু হানিফার মাথায় ও শরীরে মল ঢেলে উল্লাস করে। এরপর ধারণ করা ভিডিও রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

পরে মাওলানা আবু হানিফা বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা করে বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

অভিযুক্তরা হলেন- জাহাঙ্গীর খন্দকার, আবু হানিফার ছোট ভাই জাকির হোসেন জাকারিয়া, মো. মাসুম সরদার, মো. এনামুল হাওলাদার, মো. রেজাউল খান, মো. মিনজু, সোহেল খন্দকার ও মিরাজ হোসেন।

বাকেরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবদুল হক জানান, মামলা দায়েরের পরপরই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।