বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নেয়ার পথে পুলিশকে বাধা দেয় তার স্বজনরা। আসামি বহনকারী পিকআপ ভ্যানের পথরোধ করেন তারা।
আসামির মা ও স্ত্রীর অভিযোগ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে এবং হেফাজতে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। তবে অভিযোগ নাকচ করেছে র্যাব ও পুলিশ। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক লোকমান হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসামিকে পরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে বুধবার সন্ধ্যায়।
আসামির নাম সজিব সরদার। গত সোমবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ তাকে আটক করে র্যাব। মঙ্গলবার অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দিয়ে তাকে হস্তান্তর করা হয় থানায়। বুধবার আদালতে তোলা হলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মনিরুজ্জামান সজিবকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে নেয়ার পথে সজিবের মা ও স্ত্রীসহ কয়েকজন পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরে।
সে সময় নারী কনস্টেবলরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করলে হট্টগোল বাঁধে। পরে থানা পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। স্ত্রী নওরীন জাহান মৌয়ের দাবি, সজিব ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে আশিক আব্দুল্লাহর অনুসারী তিনি।
মৌ বলেন, ‘সোমবার রাতে হঠাৎ করে আমাদের বাসায় আসে র্যাব। আমাদের জানায় যে তারা ঘর সার্চ করবে। আমাকে ও আমার স্বামী সজিবকে এক পাশে সরিয়ে দিয়ে ঘর সার্চ শুরু করে। এর মধ্যে দেখি র্যাব সদস্যরা একজন আরেকজনের কাছে শুটার গান দিচ্ছে এবং বলছে আমার বিছানার নিচ থেকে পাওয়া গেছে। তারপর নিজেদের পকেট থেকে ইয়াবা বের করে বলছে আমার স্বামীর প্যান্টের পকেটে পাওয়া গেছে।
‘এভাবে আমার স্বামীকে ফাসানো হয়েছে। আমি এ সময় প্রতিবাদ করলে আমাকে র্যাব সদস্যরা বলেছে, বেশি কথা বললে আমার স্বামী ও দুই সন্তানের ক্ষতি হবে। তারপর আমার স্বামীকে নিয়ে যায় ও থানায় যোগাযোগ করতে বলে। থানায় গেলে বলেছে র্যাবের কাছে আছে আর র্যাবের কাছে জিজ্ঞাসা করলে বলেছে থানায় আছে। মঙ্গলবার রাত ১০টায় জানতে পারি সজিবকে থানায় নেয়া হয়েছে শোয়ানো অবস্থায়। হাঁটতে পারছে না সজিব। তাকে র্যাব সদস্যরা কোন আইনে নির্যাতন করলো বুঝতে পারছি না।’
সজিবের মা নাসরিন জাহান বলেন, ‘থানায় সজিবকে নেয়া হয়েছে অচেতন অবস্থায়। সজিবের দুই হাটু থেকে ব্লিডিং হচ্ছিল। হাতের দুই কনুই ফুলে গেছে। আমার ছেলের কোনো সময় শ্বাসকষ্ট ছিল না। তারপরও ইনহেলার নিতে দেখেছি থানায়। চারবার বমি করেছে। বরিশালে সজিবকে আনার পর আদালতে চিকিৎসার জন্য আবেদন জানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তা পারিনি।
‘কিছুদিন আগে একটা মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। আমরা ভেবেছি সেই ঘটনায় সজিবকে ধরতে এসেছে র্যাব। সজিব সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। র্যাব এসে একটি বিছানার নিচ থেকে অনেক কিছু পেয়েছে দেখিয়েছে, কিন্তু আমার ছেলের বউ বরিশালে সাংবাদিকদের কাছে কোরআন শরীফে হাত রেখে বলেছে ওই বিছানার নিচ প্রতিদিন পরিষ্কার করে সে। ওখানে কিছুই ছিল না।’
নাসরিনের দাবি, সজিবের শরীরে তিনি আঘাতের একাধিক চিহ্ন দেখেছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে র্যাব ৮ এর সিপিসি-১ এর কমান্ডার মেজর মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা যে অবস্থায় আসামি গ্রেপ্তার করেছি, সেই অবস্থাতেই আগৈলঝাড়া থানায় সোপর্দ করেছি।’
থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার জানান, মাদক-হত্যাসহ ৫ মামলার পলাতক আসামি সজিব। তার বাসায় অভিযান চালানোর সময় কিছু ধস্তাধস্তি হয়ে থাকতে পারে। সে থেকে কিছুটা আহত হতে পারে। সে কারণে র্যাব চিকিৎসাপত্রও দিয়েছে। থানায় কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি। আসামি নিজেকে বাঁচানোর জন্য অভিনয় করছেন।