শামীম আহমেদ ॥ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার চেয়ারম্যান, পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা গঠণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে উজিরপুর, আগৈলঝাড়া ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যানদের পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
নয়টি উপজেলার অধিকাংশস্থানে পরিবর্তন করা হয়েছে বর্তমান পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ মনোনয়ন বঞ্চিতরা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রমতে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ শেষে প্রাথমিকভাবে এককভাবে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা গঠণ করেছেন।
সূত্রমতে, নয়টি উপজেলায় ৭২জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা প্রতীক পেতে আবেদন করেছিলেন। এছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৭ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। প্রতিটি উপজেলা থেকে তিনজন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানোর কথা থাকলেও ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় একজন করে চেয়ারম্যান, একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড।
চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন-বরিশাল সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বানারীপাড়ার বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ফারুক, মুলাদী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম খান মিঠু, হিজলা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ টিপু, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সামসুল আলম চুন্নু, গৌরনদী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী।
এছাড়া উজিরপুর, আগৈলঝাড়া ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পরিবর্তন করে নতুন মুখের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেন-উজিরপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবালের পরিবর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের পরির্বতে কাজী ইমদাদুল হক দুলাল এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম মোর্তুজা খানের পরির্বতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোনয়ন বঞ্চিত একাধিক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলেন, কেন্দ্র থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হলে কোন আপত্তি ছিলোনা। তৃণমূল পর্যায়ে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও জেলা মনোনয়ন বোর্ড থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে যারা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন তাদেরকে কিভাবে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী করা হয়েছে তাও প্রশ্নবিদ্ধ। তাই তারা আবেদনের সাথে জমা দেয়া নগদ টাকা ফেরত চেয়েছেন।
তারা আরও বলেন, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান আসন্ন নির্বাচনে নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। উজিরপুর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল দলীয় মনোনয়ন না পেলেও আসন্ন নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা। মুলাদী উপজেলার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ৪৭ জন নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করে বর্তমান বহুল বির্তকিত উপজেলা চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম খান মিঠুকে পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থী দেয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দর কাছে আবেদন করেছিলেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবিকে উপেক্ষা করে পূর্ণরায় বিতর্কিত তরিকুল ইসলাম মিঠুকে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ফলে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে বিভাগের ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়া উপজেলাবাসী আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদেয়া বহুল বির্তকিত বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া সিকদারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বলেন, গোলাম কিবরিয়া সিকদারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীদের শায়েস্তা করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, দেশব্যাপী আলোচিত সাংবাদিক এইচএম বাদলকে প্রকাশ্যে নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, টিআর, কাবিখা, জিআর, এডিবি, এলজিএসপি প্রকল্প, কর্মসৃজন প্রকল্প, ইজারার নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা, চাকরি বাণিজ্য, নদী খননের নামে আত্মসাতসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বহুল বির্তকিত বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া সিকদারকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দর কাছে জোর দাবি করেছেন।
সূত্রমতে, কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নতুন প্রার্থী হিসেবে দিনরাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তরুন সিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ্যাডভোকেট এমএ জলিল ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির।
দলীয় সূত্রমতে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে চূড়ান্ত হয়েছেন যারা-উজিরপুরে বর্তমান পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান অপূর্ব কুমার বাইন রন্টু, বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান সীমা রানী শীল ওয়ার্কার্স পার্টির সমর্থক হওয়ায় এখানে দলীয় ভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিউটি খানমকে। বাবুগঞ্জে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইকবাল আহম্মেদ আজাদ, তৃণমূলের জনপ্রিয় বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান রিফাত জাহান তাপসীকে পরিবর্তন করে দলীয় ভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে ফারজানা বিনতে ওহাবকে। গৌরনদীতে শুধুমাত্র বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সাহিদা আক্তারকে পরিবর্তন করে দলীয়ভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে জিনিয়া আফরোজ হেলেনকে। আগৈলঝাড়ায় বর্তমান পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান জসিম সরদারকে পরিবর্তন করে দলীয়ভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে রফিকুল ইসলাম তালুকদারকে। মনোনয়ন বঞ্চিত পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস জানান, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। তার আগে তৃণমূল থেকে তিনজন করে প্রার্থীর একটি তালিকা কেন্দ্র থেকে চাওয়া হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলার তিনজনের প্যানেল চূড়ান্ত করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়েছে। যে উপজেলাতে সকল প্রার্থীরা একমত হয়ে একজনকে সমর্থন জানিয়েছেন সেখানেই কেবল একক প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।