বরিশালে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুতে সন্ধা নামনেই ঘুটঘুটে অন্ধকার, মৃত ল্যাম্পপোস্ট

:
: ৬ years ago

বরিশাল নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া ) সেতু । সেতুটির সাথে বরিশাল থেকে সংযুক্ত ঢাকা, বরিশাল , পটূয়াখালী ,বরগুনা , ভোলা, সহ ,নলছিটি বাকেরগঞ ছাড়াও উপজেলার একাধিক রুট। তাই বরিশাল থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা হাজারো সাধারন জনগন ও ভারী যানবাহন সেতুটির উপর দিয়ে চলাচল করে। পুনরায় পটূয়াখালী ,বরগুনা , ভোলা, ,নলছিটি,বাকেরগঞ সহ অন্যন্য উপজেলা ,ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন গ্রামঞ্চল থেকে বরিশালের উদ্দেশ্য হাজারো যাত্রী ও যানবাহনের চলাচল এ সেতুটির মাধ্যমে । কিন্ত হাজারো যাত্রী ,যানবাহন ও স্থানীয়দের এ চলাচল নিয়ে সকাল থেকে সন্ধার হওয়ার ঠিক পুর্ব কোন অভিযোগ না থাকলেও সন্ধ্যা হওয়ার পরই এই মহাসড়কের সেতুটি থেকে জনসাধারনের চলাচলে নানান অভিযোগ যেন তীব্র আকারে ধারন করে ।

কারন সন্ধা নামার পর পরই দপদপিয়ার এই পুরো সেতুটিকে জুড়ে যেন এক ভুতুড়ে থমথমে পরিবেশ তৈরী হয়। ঘন অন্ধকারে নির্জন রাস্তায় পরিনত হয়।এরকম থমথমে পরিবেশ যেন সন্ধ্যা থেকে সুর্য উঠার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত বিরাজ করে। কিন্ত এই অন্ধকার দুরীকরনে সেতুটিতে পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট দেয়া হলেও দু একটি বাদে সবগুলোই এখন অচল। যার দরুন সাধারন জনগন এই সেতু দিয়ে চলাচল করলে নিত্য নতুন বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। ছিনতাই , মাদক সেবীদের আড্ডার নিরাপত্তা স্থান এখন এই সেতুটি বলে দাবী করেছেন স্থানীয়রা। সেতুটিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়তই ঘটছে ছিনতাই, রাহাজানি, চুরি, অপহরণসহ নানা দুর্ঘটনা। অন্ধকারে বাড়ছে সন্ত্রাসীদের রাজত্ব। আর নাগরিকদের এই ঘুটঘুটে অন্ধকার সাধারন জনগনের সেতুর উপর দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত কি পরিমাণ দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে তা বলে শেষ করার মত নয়। সাধারন জনগনের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ল্যাম্পপোস্ট লাগানো হলেও আলো না জ্বলায় বর্তমানে তা সেবার বদলে অভিশাপে পরিণত হয়েছে । বর্তমানে বর্ষাকাল আসায় সমস্যা যেন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রাস্তার এসব বাতির দুই একটি বাদে বাকিগুলো নষ্ট থাকলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগের উদাসীনতার কারণে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘ তিন থেকে চারমাস ধরে এই ল্যাম্পপোস্ট গুলো রাতের আধারে নিরাপত্তার জন্য কোন উপকারেই আসছে না । দুই একটি বাল্ব জ্বললেও তা আবার নিভে যায় । পুরো সেতুটির এপার ওপার পর্যন্ত পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও তা এখন মৃত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে । রাতের আধারে সেতুটি থেকে চলাচল জনসাধারনের জন্য এখন যেনো চ্যালেঞ্জের মুখে পরিনত হয়েছে। এলাকাবাসি জানায়, সেতুটি থেকে হেটে এপার থেকে ওপারে যেতে প্রায় পনেরো মিনিট সময় লাগে । কিন্ত সন্ধ্যা নামলেই ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও না জ্বলার কারনে নিজস্ব লাইট জ্বালিয়েই যাতায়াত করতে হয়।এছাড়াও গভীর রাতে একা একা যাতায়াত করলে অন্ধকারে পড়তে হয় ছিনতাইকারীদের কবলে ।নিঃস্ব হয়ে ফিরে যেতে হয়।যার উদাহরন সরুপ সম্প্রতিও কিছু আপত্তিকর ঘটনা ঘটেছে যার সাক্ষী ভুক্তভুগী ও স্থানীয়রা। অনুসন্ধানে গিয়ে চোখে পড়ে চাঞ্চল্যকর আরো কিছু গুরুত্বপুর্ন বিসয় , লক্ষ্য করা যায়, শুধুমাত্র সেতুটি ব্যতীত সেতুর সাথে সংযুক্ত অন্যন্য রুটগূলোর ল্যাম্পপোস্ট গুলোকে সন্ধার পরপরই ভালভাবেই জ্বলতে দেখা যায় কিন্ত সব ঠিক মত থাকলেও সেতুটির ল্যাম্পপোস্ট নিয়েই যত সড়ক ও জনপদ বিভাগের উদাসীনতা । শুধুমাত্র তাদেরে এই উদাসীনতার জন্য এখন সাধারন পথচারীদের জান ,মাল ,ইজ্জত ঝুকিপুর্ন অবস্থানে ।

এছাড়াও স্থানীয়, পথচারীসহ পাশাপাশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একাধিক শিক্ষার্থীরা জানায়,আমরা সারাদিন ক্লাস শেসে ক্লান্তি দুরীকরনে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হই কিন্ত অন্ধকার সেতুটিতে যেতেই যেন বুকের মধ্য ভয়ে গ্রাস করে ।কারন অন্ধকারে সেতুটিতে ভদ্র মানুসের মুখোসে ছিনতাইকারিসহ কুচক্র মহলের আনাগোনা থাকে।যার প্রমান হিসেবে প্রায়সই অন্ধকারে ঘটে চলেছে নানা অপকর্ম। তাই আর রাতে অন্ধকারে ব্রীজে পা না বাড়িয়ে কলেজ ক্যম্পাসের আশেপাশেই থাকি। তবে যদি ল্যম্পপোস্ট গুলো ঠিকভাবে জ্বলতো তাহলে সাধারন জনগন থেকে শুরু করে যানবাহন চালক, শিক্ষার্থীদের তেমন কোন সমস্যাই হতোনা । ওই এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন জানায়,সন্ধার পর যেমন অন্ধকারে পথচারী,শিক্ষার্থী,যানবাহন চালক,ও স্থানীয়দের ভয়ানক সমস্যা তেইরী হয় ঠিক তেমনী কিছুদিন পর পরই ঘটে বাস, অটো, মোটর সাইকেল সহ নানাবিধ দুর্ঘটনা। যদি ল্যাম্পপোস্ট গুলো ঠিক ভাবে জ্বলতো তাহলে এসব অনাকাংক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।

এছাড়াও শাহীন,জয়, জহিরুল সহ স্থানীয় একাদিক বাসিন্দারা জানায়, বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা পার্ক ,বেলস পার্ক,ত্রিশ গোডাউন,শিসু পার্কে, লেগ ভিউ ইত্যাদি বিনোদন কেন্দ্র গুলোর মত দপদপিয়া এই সেতুটি নির্মিত হওয়ার পরে ওই বিনোদন কেদ্রগুলোর সাথে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে যুক্ত হয়েছে দপদপিয়া সেতু ।দূর দুরান্ত থেকে ঘুরতে আসে বিভিন্ন শ্রেনীর বিনোদন প্রেমীরা। তাই এখানেও বিকেল গড়ালেই বিনোদন প্রেমীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়।

কেউ কেউ আসেন মুক্ত আবহাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে। কিন্ত লক্ষ্য করা যায়,এখানে আসলেই যেন ছিনতাইকারীদের সাথে সাক্ষাত হয়ে যায় আর নিঃস্ব হয়ে ফিরে যেতে হয়।সোহেল নামে ঘুরতে আসা এক যুবক জানায়, ভাই কি আর বলবো কিছুদিন পুর্বে একা এখানে একটু ঘুরতে এসেছিলাম কিন্ত নির্জন অন্ধকার ব্রীজ পেয়ে কিছু ছিনতাইকারী চক্র আমাকে ব্রীজ থেকে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়ে সাথে থাকা মোবাইল ফোন ,ঘড়ি, ও টাকা নিয়ে মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায়। যদি আলো থাকতো তাহলে আর এই ঘটনা আমার সাথে ঘটতোনা এবং ছিনতাইকারীরাও ক্ষতি করার সাহস পেতো না।এছাড়াও এখানে ঘুরতে আসে আধুনিক সমাজের প্রেমীক যুগল। তবে কিছু প্রেমীক যুগল নিজেদের শারিরিক চাহিদা মেটাতে নির্দিস্ট স্থান হিসেবে বেছে নেয় সন্ধার পরে আলোবিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত এই সেতুটিকে ।

একাধিক স্থানীয় ও পথচারীরা এদেরকে অন্তরঙ্গো অবস্থায় প্রায়ই দেখে থাকেন বলেও অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেতুটিতে যদি ল্যাম্পপোস্ট গুলো ঠিক ভাবে কাজ করতো তাহলে আর ছিনতাই,চুরি,দুর্ঘটনা, সহ আপত্তিকর এসকল দৃশ্য আর দেখা যেত না। এছাড়াও সেতু পেড়িয়ে যেতে হচ্ছে বৃহৎ জাহাজ ও লঞ্চ। ব্রিজের নিচে কোন সংকেত বাতিও নেই যার ফলে প্রায়সই দুর্ঘটনা ঘটে। দপদপিয়া এ সেতুটির দৈর্ঘ্য ১.৩৯ কিলোমিটার।এ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এ সেতুটির দেখবালে শুরু থেকেই যেন কর্তপক্ষের গাফিলতা দেখা দেয় ।

বাতি গুলো দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকার কারন জানতে চাইলে দপদপিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগ(সওজ) ২ এর দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী, শাখাওয়াত হোসেন জানান,বর্সাকাল আসলেই বৃস্টির কারনে বাতিগুলো নস্ট হয়ে যায় । কিন্ত তাতক্ষনীক তা সংস্কার করা হয় তবে দীর্ঘ তিন থেকে চার মাস ল্যম্পপোস্ট গুলো অকেজো হয়ে আছে বিসয়টি তাদের দায়িত্ব অবহেলা কারনে হয়েছে স্বীকার করে বলেন আমি অফিসিয়াল কাজে চট্রগ্রাম এসেছি বরিশাল ফিরেই দ্রুত ল্যম্পপোস্ট গুলো সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহন করবো।এ সম্পর্কে রুপাতলী পাওয়ার হাউজে দায়িত্ব প্রাপ্ত (ওজোপাডিকো) ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান,বৃস্টি,লোডশেডিং কিংবা দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের অভাবে এই বাতি গুলো নস্ট হয়ে যায় তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে রাস্তার বাতিগুলো জ্বললেও সেতুটির ল্যম্পপোস্ট অকেজো হয়ে দাড়িয়েই থাকে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২২- শে ফেব্রয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দণিক্ষাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ।১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের মাধ্যমে দণিাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ।