বরিশালে আধিপত্য বিস্তারে ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বরিশালের মুলাদী উপজেলার প্রত্যন্ত একটি বাজারে প্রতিপক্ষের হামলায় দুই জন নিহত হয়েছেন। তাদেরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ঘটনার পর থেকে আরও একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সূত্রে জানা গেছে।

সোমবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর উপজেলার বাটামারা ইউনিয়ন পরিষদের চাকলা বাজারে ঘটনাটি ঘটে।

 

নিহতরা হলেন- আটমারা ইউনিয়নের তয়কা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম বেপারী ছেলে হেলাল বেপারী (৪০) ও সফিপুর ইউনিয়নের বালিয়াতলী এলাকার জলিল কবিরাজের ছেলে আলমগীর কবিরাজ (৫০)।

নিখোঁজ ব্যক্তির নাম কামাল বেপারী। তিনি হেলাল বেপারীর ভাই।

বাটামারা ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন অশ্রু বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এলাকার হাজী ও আকন গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। হাজী গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আসতে পারেনি। গতকাল সন্ধ্যায় হাজী গ্রুপ এলাকায় আসে। এরপর দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে হেলাল ও আলমগীর নিহত হয়েছেন। কামাল নিখোঁজ রয়েছেন।

 

ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের মহল্লাদার আবু বক্কর খান জানান, নিজ বাড়ির পেছনের একটি বিল থেকে আলমগীর কবিরাজের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আলমগীর কবিরাজ সফিপুরের কবিরাজ গ্রুপের লোক। আর নিহত হেলাল বেপারী বাটামারার আকন গ্রুপের লোক। সফিপুরের কবিরাজ গ্রুপের সঙ্গে আকন গ্রুপের সখ্যতা রয়েছে, দুইগ্রুপ মিলে একটি পক্ষ বলা যায়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মজিবুর রহমান সরদার জানান, আধিপত্য নিয়ে স্থানীয় বাটামারা ও সফিপুরের কবিরাজ, আকন, হাওলাদার ও হাজী গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই চারটি গ্রুপ আবার দুটি গ্রুপে বিভক্ত। যার মধ্যে কবিরাজ ও আকন গ্রুপ মিলে একটি পক্ষ আর হাওলাদার ও হাজী গ্রুপ মিলে অপর একটি পক্ষ।

তিনি আরও জানান, দাদন হাওলাদারের ভাই আনিস হাওলাদার কয়েক বছর আগে খুন হন। ওই ঘটনায় মামলা হলে অনেক বছর এলাকা ছাড়া ছিলেন হেলাল বেপারী ও কামাল বেপারী। ১০-১৫ দিন আগে তারা ফিরে আসেন। গতকাল সোমবার সকালে দাদন হাওলাদারের পক্ষের কিছু লোক হেলমেট পড়ে ঢাকা থেকে লঞ্চ যোগে গৌরনদীর টরকি হয়ে এলাকায় আসেন। শুনেছি এলাকায় আসার আগে পুলিশের সহায়তাও চেয়েছিলেন তারা।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। পরে হেলাল বেপারী ও আলমগীর কবিরাজের লাশ উদ্ধার করা হয়। আর হেলাল বেপারীর ভাই কামাল বেপারী নিঁখোজ রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মাহিমা বেগমের স্বামী আলী হোসেন জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৭/৮ বছর আগে হাজী গ্রুপ ও আকন গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে হাজী গ্রুপের আনিস নামে একজন নিহত হন। এরপর থেকে এলাকায় আসতে পারেনি হাজী গ্রুপের ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলম বেপারীসহ তার লোকজন।

মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, মাদারীপুরের কালকিনি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার এক আসামী গ্রেপ্তার করতে যান। এ সময় এক গ্রুপ এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে।

বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, মুলাদী উপজেলার বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নে দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। একটি গ্রুপ এলাকার বাইরে থাকলেও রামজানে তারা এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। রাতে হেলাল নামে একজনের এবং ভোরের দিকে আরও একজনের লাশ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহতও হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য রয়েছে। হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।