:: ঝুলে আছে ডিআইজি প্রিজনের কার্যালয় ও বাসভবন নির্মাণ কার্যক্রম
:: কারা স্টাফদের আবাসন সমস্যা সমাধান ও রাজস্ব আয়ের সুযোগ
এম.কে. রানা, বরিশাল ॥
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের বাহিরে থাকা নগরীর কাউনিয়া এলাকায় প্রায় ৪ একর জমি দীর্ঘদিন যাবত অবহেলায় পড়ে রয়েছে। যদিও ওই জমির একাংশে কিছু কারারক্ষী ঘর তুলে বসবাস করছেন এবং কিছু অংশে বিভিন্ন ফসলাদি চাষ করছেন। অথচ গত ২০/৩০ বছর পূর্বেও কারাগারের এ জমিতে নানা ফসল উৎপাদন করতো কারা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে থাকায় ওই জমিতে আগাছায় ভরে গেছে। ওই সম্পত্তির প্রাচীর ঘিরে ভাসমান দোকানপাট এবং ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। অথচ বর্তমানে কাউনিয়া এলাকার অবকাঠামোগত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় ওই জমি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন, কারারক্ষীদের জন্য আবাসন নির্মাণ ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে লাভবান হতে পারে সরকার। আর ওই জমিতে বিভাগীয় কারা উপ-মহাপরিদর্শক এর কার্যালয় এবং বাসভবন নির্মাণের কথা জানা গেলেও এখনো তা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
সূত্রমতে, বিভাগীয় শহর বরিশালের প্রাণকেন্দ্রে ১৮২৯ সালে জেলা কারাগার হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ মার্চ এটিকে জেলা কারাগার হতে কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তর করা হয়। কারাগারটির মোট জমির পরিমাণ ২১.২০০৭ একর। কারাগারের অভ্যন্তরে জমির পরিমাণ ৯.৬০০ একর, কারা বহিঃস্থ জমির পরিমাণ ৭.৬৮২৬ একর (বাসা বাড়ি, মাঠ ও পুকুর) এবং নগরীর কাউনিয়া বাগানবাড়ি এলাকায় জমির পরিমাণ ৩.৯১৮১ একর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৪ একর জমির মধ্যে ২ একর জমির মধ্যে বৃহৎ একটি পুকুর রয়েছে। এছাড়া ১০-১২টি পরিবার (কারা স্টাফ) ঘর তুলে বসবাস করছেন। এছাড়া প্রস্তাবিত কারা উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জমিতে কিছু ফসলাদি চাষ করছেন কারা কর্তৃপক্ষ। আর বাকি প্রায় ২ একর জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজ থেকে ২০ বছর পূর্বেও কারাগারের ওই সম্পত্তিতে বিভিন্ন ফসলাদি উৎপাদন করা হতো। যা কয়েদীদের খাবার যোগানে সহায়তা করতো। স্থানীয় বাসিন্দা সত্তরোর্ধ খাদেম শরীফ জানান, প্রায় ৩০-৪০ বছর পূর্বে কাউনিয়ায় কারাগারের এ সম্পত্তিতে কারা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ফসলাদি উৎপাদন করতেন।
যা কয়েদীদের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয়দের মাঝেও বিক্রি করা হতো। আরেক বাসিন্দা মাছুম তালুকদার জানান, একটা সময় কারাগারের এ জমিটি স্থানীয় যুবকরা খেলার মাঠ হিসেবেও ব্যবহার করতো। তখন পুরো মাঠ-ই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতো।
তবে বেশ কয়েক বছর পূর্বে ওই জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করায় তা এখন আর ব্যবহার হচ্ছে না। এতে ওই জমিতে আগাছা জমে পরিবেশ নোংরা হওয়ার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। অবশ্য কারাগারের এ সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশংকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ছোয়া বরিশাল নগরীতেও লেগেছে। ৩০ বছর পূর্বের কাউনিয়ায় অবকাঠামোগত আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে কারাগারের ওই জমি থেকে মাত্র কয়েকশ’ গজ দূরেই বরিশাল ক্ষুদ্র ও কুটি শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) অবস্থিত। যেখানে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প কারখানা।
সেদিক বিবেচনা করে কারাগারের ওই জমি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে মত প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, ওই সম্পত্তির সীমানায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (ছোট ছোট স্টল) গড়ে তুলতে পারলে একদিকে যেমন কারাগারের সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশংকা কমতো, অন্যদিকে রাজস্ব আয় হতো কারা কর্তৃপক্ষের।
এব্যাপারে কথা হয় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমারের সাথে। তিনি বলেন, কারাগারের সম্পত্তি পরিত্যক্ত বলা যাবে না। এটি যাতে বেহাত না হয় এজন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরাপত্তা বিষয়ক একটি টিম আছে যা হেডকোয়াটার নিয়ন্ত্রণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ওই টিম শীঘ্রই একটি প্রজেক্টের মধ্যে উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে আসা হবে। এজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা আর এটা বাস্তবায়িত হলে আবাসন সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব খাতে আয় হবে বলেও জানান তিনি।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com