সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বরিশাল জেলার মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এবার ৬ শতাধিক মণ্ডপে পূজা হবে। অধিকাংশ মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই। কয়েক দিন বাদেই প্রতিমার গায়ে পড়বে রঙ-তুলির আঁচড়।
বরিশালে সবচেয়ে বেশি পূজামণ্ডপ তৈরি হচ্ছে আগৈলঝাড়া উপজেলায়। এ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ১৪৭টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। তাই প্রতিমা তৈরিতে এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন আগৈলঝাড়ার মৃৎশিল্পীরা।
উপজেলার উত্তর শিহিপাশা গ্রামের পাল পাড়ার প্রতিমা নির্মাণ শিল্পী গৌরাঙ্গ পাল, সুদেব পাল ও কৃষ্ণ পাল জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই তারা বিভিন্ন সময়ে প্রতিমা নির্মাণসহ বিভিন্ন মেলায় খেলনা সামগ্রী ও তৈজসপত্র নির্মাণ করে আগুনে পুড়িয়ে হরেক রকমের রঙ করে তা বিক্রি করে আসছেন। তাদের গ্রামে ১৭টি পরিবার রয়েছে। এ ১৭টি পরিবারের মধ্যে ৪০ জন পুরুষ শিল্পী ও অন্তত ৩০ জন নারী শিল্পী রয়েছেন। প্রত্যেক পরিবারের নারীদের শিল্প কাজে রয়েছে দক্ষতা। তাই পুরুষ শিল্পীদের পাশাপাশি পাল পাড়ার প্রত্যেক নারী মাটির তৈরি শিল্প কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত রয়েছেন। বিশেষ করে প্রতিমার মুখমন্ডল তৈরির কাজে নারী শিল্পীরা খুবই দক্ষ।
গৌরাঙ্গ পাল বলেন, এবছর তারা কুয়াতিয়ারপাড় ছাড়াও কালুরপাড়, ছবিখার পাড়, ফুল্লশ্রী, আস্করসহ মোট ছয়টি প্রতিমা নির্মাণ করেছন। এসব প্রতিমায় ৫০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেবেন তারা।
সুদেব পাল ও কৃষ্ণ পাল জানান, শুভদিন হিসেবে শ্রাবণ মাসে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসবের দিন থেকেই তারা প্রতিমা নির্মাণের কাজে হাত লাগান। এর পর মূল প্রতিমায় মাটির প্রলেপের কাজ করেন মনসা পূজার পর থেকে। পাল পাড়ার শিল্পীরা ইতোমধ্যে দেবীর প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ করেছেন। এখন চলছে সর্বশেষ মাটির প্রলেপের কাজ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস জানান, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ১৪৭টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে রাজিহার ইউনিয়নে ৪৩টি, বাকাল ইউনিয়নে ৩৫টি, বাগধা ইউনিয়নে ২২টি, গৈলা ইউনিয়নে ২৩টি ও রত্নপুর ইউনিয়নে ২৪টি পূজা মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন কর জানান, এবার আগৈলঝাড়া উপজেলায় ১৪৭টি মণ্ডপ, উজিরপুরে ১১১টি, গৌরনদীতে ৮২টি, বাকেরগঞ্জে ৭২টি, বানারীপাড়ায় ৫৮টি, মেহেন্দিগঞ্জে ২৪টি, বাবুগঞ্জে ২৩টি, মুলাদীতে ১১টি, হিজলায় ১৪টি এবং বরিশাল সদর উপজেলায় ২১টি মণ্ডপে পূজা হবে। এছাড়া বরিশাল নগরীতে সার্বজনীন ৩৩টি মণ্ডপে এবং পাঁচটি ব্যক্তিগত মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।