বরিশাল মহানগর ও জেলার ১০টি উপজেলা নিয়ে ৬টি সংসদীয় আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এসব আসন থেকে অর্ধশতাধিক নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। এতে করে এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বরিশাল আওয়ামী লীগের অভিভাবক হিসেবে তার ওই আসন থেকে অন্য কোনো দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেই বলে তার অনুসারীরা দাবি করছেন।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান, কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম স্বজল।
এছাড়া বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতা ও সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপনের নাম আলোচনায় আছে। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এককভাবে নির্বাচন করলে এ আসনে সম্ভাব্য প্রর্থী তালিকায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির গৌরনদী উপজেলার সভাপতি ইউনুস বেপারী এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার সভাপতি সরদার হারুন রানা।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। তবে তিনি বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) থেকেও মনোনয়ন চাইতে পারেন।
ইউনুস ছাড়াও দলের সমর্থন পেতে প্রার্থিতার দৌড়ে আছেন আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতা। সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলম, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বলরাম পোদ্দার, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও বানারীপাড়া পৌর মেয়র সুভাষ চন্দ্র শীল, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য হাবিবুর রহমান খান এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজুর নাম মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য সরফুদ্দিন সান্টু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস খান এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রওনক ইসলাম টিপু, সংস্কারপন্থী নেতা সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল এবং দুলাল হোসেন।
জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থিতা নিয়ে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ও উজিরপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মিজানুর রহমান।
জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ও উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদলও ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী এ আসন থেকে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি ও সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক অভির নামও এলাকায় আলোচনায় আছে।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব সিরাজউদ্দিন আহমেদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বলরাম পোদ্দার, বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী এমদাদুল হক দুলাল ও মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ বারী।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব ছাবি উদ্দিন। এছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
জোটভুক্ত নির্বাচন হলে এ আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান এমপি জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ব্যক্তিগত সহকারী আতিকুর রহমান আতিক।
তবে এ আসনে নিজেদের প্রার্থী দিতে মরিয়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু, জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা মুন্সী ও মুলাদী উপজেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল্লাহ হারুন।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান এমপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহেব আহম্মেদ।
এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন বরিশাল জেলা (উত্তর) বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, যুবদলের সাবেক নেতা নূরুর রহমান জাহাঙ্গীর, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবদুল খালেক হাওলাদার ও অ্যাডভোকেট এম এ হেলাল।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়ন পেতে লবিং করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এছহাক ভূঁইয়া ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহকারী সম্পাদক হারুন আর রশিদ।
জোটবদ্ধভাবে জামায়াতে ইসলামীর বরিশাল পূর্ব জেলার মজলিশে শূরার সদস্য সাইফুর রহমান মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং করছেন।
বরিশাল-৫ আসন (মহানগর-সদর) বিশেষ মর্যাদার বলে সমাদৃত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমান গুরুত্ব দিচ্ছে আসনটি নিজেদের ঘরে নিতে। ক্ষমতাসীন দল থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচিতরা হলেন বরিশাল সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের সহধর্মিণী জেবুন্নেছা আফরোজ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ (বীরবিক্রম), মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল ও আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান খান।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত নব্বইয়ের দশক থেকেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার সদর আসনে বরাবরের মতো বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী। যদিও গুঞ্জন রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁনও সদর আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) বরিশাল জেলার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে আভাস দিয়েছেন। এ ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি এবং চরমোনাইর পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সদর আসনে প্রার্থী দেবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এ দলের প্রার্থী হয়েছিলেন দলের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। আগামী নির্বাচনেও তিনি এ আসনে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম সদর আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল আবদুল হাফিজ মল্লিক (অব.), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল হক চুন্নু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া, সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুর রশীদ খান, প্রয়াত সাবেক এমপি মাসুদ রেজার সহধর্মিণী জেলা পরিষদ সদস্য আইরিন রেজা ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মঞ্জু।
এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল হোসেন খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শহীদ হাসান, বিএনপির সাবেক বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজন, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, উপজেলা বিএনপির সদস্য আবদুস শুকুর বাচ্চু নেগাবান ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার হোসেন (অব.)।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম সদস্য বতর্মান এমপি নাসরিন জাহান রত্না আমিন। জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করলেও এ আসনে প্রার্থী হবেন তিনি। এ ছাড়া ১৪ দলীয় জোটভুক্ত নির্বাচন হলে এ আসনে জোটের মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় জাসদ নেতা মো. মহসীন।
অন্যদিকে চরমোনাইর পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৬টি সংসদীয় আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোর জন্যই বিএনপির প্রস্তুতি আছে। বিএনপি যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ এগিয়ে রাখা হচ্ছে। তবে দলের নেতাকর্মীদের পদে পদে ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসন বাধাগ্রস্ত করছে। হামলা, মামলা ও হয়রানি বন্ধ হয়নি এখনও। তাই নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের বিকল্প দেখছে না বিএনপি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি জাগো নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ বৃহৎ একটি দল। তাই দলে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি। তবে জনসমর্থন, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে কেন্দ্র। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।