কেন্দ্রীয় পুলিশের নির্দেশনা পেয়ে মাদক প্রতিরোধে হার্ডলাইনে রয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। প্রতিটি থানার আওতাধীন মাদক ব্যবসায়িদের তালিকা হাতে নিয়ে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। গতকাল সোমবার (২১ মে) রাত পর্যন্ত ৩ দিনের অভিযানে তালিকাভুক্ত অন্তত ২৮ মাদক ব্যবসায়িকে আটকের খবর দিয়েছে।
অবশ্য তালিকা অনুযায়ি বাকিদের গ্রেফতারেও তৎপরতার কমতি নেই। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়িদের বাসাবাড়িতে সকাল বিকেল কিংবা রাতে তাদের হানা দিচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রণয়ন করা ৩ শতাধিক মাদক ব্যবসায়িকে টার্গেট করে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু গত শনিবার বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নসহ সারা দেশে ২০ মাদক ব্যবসায়ি নিহতের খবরে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সেই ঘটনার পর বরিশালের অনেক মাদক ব্যবসায়ি লাপাত্তা হয়েছেন। এমনকি বরিশালের মাদকের জোন হিসেবে চিহ্নিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুরেও মাদকের রমরমা বাণিজ্য থেমে গেছে।
নিশ্চিত হওয়া গেছে- সেখানকার মাদক সম্রাট মনিরসহ অনেককেই এখন আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে রসুলপুরে। একই পরিবেশ বিরাজমান শহরের প্রতিটি এলাকায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কড়াকড়ি আরোপে গোটা বরিশাল অনেকটা মাদক ব্যবসায়িদের আনোগোনামুক্ত।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে- মেট্রোপলিটন পুলিশ মাদক বিক্রেতার একটি তালিকা সাম্প্রতিকালে প্রণয়ন করে ঢাকা হেডকোয়াটার্সে পাঠায়। ওই তালিকা থেকে সেবীদের বাদ দিয়ে ২৬৭ জনের একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন বরিশাল পুলিশে আসে এবং সেই চিহ্নতদের গ্রেফতারে নির্দেশ দেয় হেডকোয়ার্টাস।
মূলত সেই তালিকাটি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪ টি থানায় পাঠিয়ে স্ব স্ব এলাকার মাদক ব্যবসায়িদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয় পুলিশ। যদিও তালিকার বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতারে সফলতাও পেয়েছে। সর্বশেষ সোমবার রাতে শহরের বিসিক এলাকা থেকে চিহ্নিত মাদক সম্রাট বিসিক বাবুলকে গ্রেফতার করে কাউনিয়া পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে এই বাবুলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে মাদক সংক্রান্ত। এর আগে রোববার রাতে শহরের ফকিরবাড়ি রোড থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করে কোতয়ালি পুলিশ।
পুলিশের এই ধরপাকড় ও বন্দুকযুদ্ধ আতঙ্ক মাদক বিক্রেতাদের প্রাণবিয়োগের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। যে কারণে গত শনিবার সারাদেশে বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ি নিহত হওয়ার পরপরই তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলছেন- পুলিশের এই ঘোষণা দিয়ে ধরপাকড়ে বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেড়েছে চিহ্নিতরা। ফলে বরিশালের বড় বড় মাদক ব্যবসায়িরা আগে ভাগেই কেটে পড়েছেন। এখন যাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তারা খুঁচরো ব্যবসায়ি।
এমতাবস্থায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারি কমিশনার (এসি-ডিবি) নাসির উদ্দিন মল্লিক বলছেন- মাদকনির্মুল না হওয়া পর্যন্ত অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। বরিশালে তাদের তালিকায় ২৬৭ জন বিক্রেতা রয়েছেন। গত ৩ দিনের অভিযানে ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছেন। উদ্ধার হয়েছে ৮৯১ পিস ইয়াবা ও ৬‘শ গ্রাম গাঁজা।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন- বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও কাজ করছে। এদিকে গত ৪ মে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পরপর র্যাবও বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সেই সাথে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য।
সর্বশেষ ১৯ মে র্যাবের অভিযানে বাবুগঞ্জ উপজেলা থেকে যুবলীগ নেতা শাহিন রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বরিশাল র্যাবের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন- তাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।