বরিশালের ২১টি আসনের আ.লীগের ১৬ প্রার্থী চূড়ান্ত, বাদ পড়তে পারেন সমালোচিত ৪ এমপি

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

অনলাইন ডেস্ক// বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৬টি আসনে নিজেদের প্রার্থীতা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। তবে কোন কোন আসনে কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারী সে বিষয়ে এখনো কারও সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দলটির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩২টি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে আ.লীগ। বাকি ৬৮টি আসন শরিকদের জন্য ছাড় দিয়েছে। ওই ৬৮ আসনের মধ্যে ৫টি আসন রয়েছে বরিশাল বিভাগে। গত শুক্রবার থেকে শুরু করে গত রবিবার পর্যন্ত তিনদিনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। মঙ্গলবার থেকে মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে।

মনোনয়ন তালিকায় বরিশাল বিভাগের মনোনয়নে বিশেষ কোন চমক থাকছে না। ভোলা, বরিশাল জেলার সংসদ সদস্যরা তাদের দলীয় মনোনয়ন টিকিয়ে রাখতে পারলেও পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের একজন করে সমালোচিত সংসদ সদস্য বাদ পড়ছেন বলে শোনা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে বাদ পরতে পারেন সংসদ সদস্য আ.খ. জাহাঙ্গীর হোসেন। এই সংসদ সদস্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাদ পড়েছিলেন সংস্কার ইস্যুতে। আর পিরোজপুর-১ আসনের সাংসদ এ.কেএম আউয়াল নেতাকর্মীদের বিদ্রোহের কারণে বাদ পরতে পারেন। ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন বাদ পরতে পারেন রেইনট্রি কেলেংকারীতে। এছাড়াও সংসদীয় আসনে সাংবাদিক নির্যাতনসহ দলে বিভাজন কাল হচ্ছে এই সাংসদের জন্য। বাদ পরার তালিকায় রয়েছেন বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনও। দলের নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা না থাকাসহ রাজাকার ইস্যুতে তিনি রয়েছেন বেকায়দায়।

ওদিকে বরিশাল বিভাগে জোটের জন্য এবার আরও একটি আসন বেশি ছাড় দেওয়া হতে পারে। পিরোজপুর জেলার তিনটি আসনের মধ্যে ২টি আসনই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে মহাজোটের শরিকদের জন্য। পিরোজপুর-২ দেয়া হচ্ছে জাতীয় পাটি (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জন্য, পিরোজপুর-৩ দেয়া হচ্ছে এরশাদের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ডা: রুস্তুম আলী ফরাজীকে। আর বরিশাল-৩ আসনটি শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়ে জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টিকে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ওদিকে মনোনয়ন বোর্ডে বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় যেসব প্রার্থীদের নিয়ে তারা হলেন, বরিশাল-৪ আসনের সাংসদ পঙ্কজ নাথ, বরগুনা-২ আসনে শওকত হাচানুর রহমান রিমন, বরিশাল-২ আসনে অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, ঝালকাঠি-১ আসনে বজলুল হক হারুন (বিএইচ হারুন), পিরোজপুর-১ আসনে এ কে এম এ আউয়াল। এরমধ্যে, রাজাকার ইস্যুতে সমালোচিত হয়েছেন বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কোনঠাসা করে রাখা, মুক্তিযোদ্ধাদের কটুক্তি করায় সমালোচিত হয়েছেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ, স্থানীয় প্রার্থীতার দাবী এবং সংসদীয় আসনে নেতাকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক না থাকার দায়ে সমালোচিত হয়েছেন বরিশাল-২ আসনের সাংসদ এ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, ঢাকায় হোটেল রেইনট্রি’তে টক অব দ্যা কান্ট্রি ‘ধর্ষণ’ ইস্যুতে সমালোচিত হন ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন, পিরোজপুর-১ আসনের এ কে এম এ আউয়াল নিজস্ব বাহিনী গঠন, টেন্ডারবাজী, আধিপত্য কোন্দল এবং স্বীয় ভাইদের বিরোধীতার কারণে সমালোচিত হন। ওদিকে জনবিচ্ছিন্নতার কারণে আলোচনায় ছিলেন বরিশাল-৫ আসনের সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানিয়েছে নানা কারনে সমালোচনায় থাকার পরেও প্রার্থীতার ক্ষেত্রে বেশীরভাগ আসনেই তেমন একটা হেরফের করা হবে না। কারন হিসেবে ওই সূত্র দাবি করছে জয়ের ক্ষেত্রে যাদের পাল্লা ভারী অথচ সমালোচনাও আছে তারা এবারের মতো মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে পার পেয়ে যেতে পারেন। মনোনয়ন প্রাপ্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে কেবলমাত্র পিরোজপুর-২ আসনে নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে মর্মে আভাস মিলেছে। পাশাপাশি পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনে ক্ষমতাশীন দল ও বর্তমান এমপি ডা: রুস্তুম ফরাজীর মধ্যকার বিরোধ নিরসনে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

এ বিভাগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে শীর্ষে অবস্থাকারীদের মধ্যে রয়েছেন, বরগুনা-১ আসনে অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, পটুয়াখালী-২ আসনে আ.স.ম ফিরোজ, পটুয়াখালী-৪ আসনে মাহবুবুর রহমান তালুকদার, ভোলা-১ আসনে তোফায়েল আহমেদ, ভোলা-২ আসনে আলী আজম মুকুল, ভোলা-৩ আসনে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা-৪ আসনে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, বরিশাল-১ আসনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল-২ আসনে অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, বরিশাল-৪ আসনে পংকজ দেবনাথ, বরিশাল-৫ আসনে জেবুন্নেছা আফরোজ, ঝালকাঠি-২ আসনে আমির হোসেন আমু। তবে যেসমস্ত এমপি বাদ পরার তালিকায় রয়েছেন বলে শোনা যায় সে সমস্ত আসন যেমন বরগুনা-২, পটুয়াখালী-৩, ঝালকাঠি-১ ও পিরোজপুর-১ রয়েছে। বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে পটুয়াখালী-১, বরিশাল-৩, বরিশাল-৬, পিরোজপুর-২ ও পিরোজপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ কাউকে প্রার্থী করেনি। এ পাঁচটি আসনের মধ্যে পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান, বরিশাল-৬ আসনে জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রতœা, পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টি’র (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও পিরোজপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ডা: রুস্তুম আলী ফরাজীর নাম ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোটের তালিকায় রয়েছে। উল্লেখিতরা সকলেই দশম জাতীয় সংসদের সদস্য।