শামীম আহমেদ ॥ সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল পানি বন্যা বরিআল অঞ্চলের মেঘনায় ঢুকতে শুরু করেছে। সেই সাথে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে মেঘনার চাঁদপুর মোহনায় হয়ে হিজলা উপজেলার মেঘনা। ইতি মধে বেপরোয়া ভাঙ্গতে শুরু করছে। হিজলার বিভিন্ন এলাকায় পাণি প্রবেশ করে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম। হিজলার মেঘনা পাড়ের সাধারণ মানুষের মনে সর্বক্ষণ আতংক বিরাজ করছে।নদীর পাড় নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই যে টুকু আছে সে জমিটুকু কখন চোখের পলকে মেঘনার গর্ভে চলে যায়।
সরকারিভাবে হিজলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস নেই। এখানকার মানুষ জানে না পানি বৃদ্ধির সংবাদ, আগে ভাগে জানতে পারে না তারা নদী ভাঙার খবর। ইতি মধ্যে মেঘনায় পানি বৃদ্ধির কারণে হিজলা উপজেলার পার্শ্ববর্তী মেঘনা এলাকা বেপরোয়া ভাবে ভাঙ্গনের শুরু হয়েছে। ধিরে ধিরে একের পর এক বাড়ি এখন মেঘনার নদী গর্ভে বিলিন হতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মেঘনা ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেছে কিনা তা জানে না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা পরিষদের খুব কাছে প্রমত্তা মেঘনা।
সময় মতো মেঘনার ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে পাশ্ববর্তী জেলা শরিয়তপুরের “নরিয়া উপজেলার” ন্যায় নদীগর্ভে বিলীন য়ে যেতে পারে। এমনিভাবে মতামত প্রকাশ করেন মেঘনাকুল বাসিন্দারা। বিগত বছরে মেঘনার মুল মোহনা পুরাতন হিজলা লঞ্চঘাট থেকে বাউশিয়া হয়ে দড়িচর-খাজুরিয়া (বামনেরচর) পর্যন্ত বেপরোয়া ভাবে ভাঙ্গন শুরু হয়। হিজলার একের পর এক গ্রাম, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, বাজার মেঘনার গ্রাসের মুখে সব শেষ হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের কারনে হিজলা উপজেলার মানচিত্র বদলে দেয়েছে প্রমত্তা মেঘনা।
বর্তমানে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে পানি বন্য শুরু হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ, মাদারিপুর,শরিয়তপুর তলিয়ে গেছে। আঘাত হানছে শরিয়তপুর লাগোয়া হিজলার মেঘনায়।
২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বাউশিয়া স্থান পরিদর্শন করলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুরাতন হিজলা লঞ্চ ঘাট এখন গাছে বাঁধা, একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দাড়িয়ে আছে মেঘনার পাড়ে। ইতি মধ্যে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ৫ (পাঁচ) একর জায়গার সিংহভাগ নদীগর্ভে বিলীন।
প্রস্তাবিত হিজলা- মেহেন্দিগঞ্জ ফেরিঘাট-কোরবানের রাস্তার মাথার স্থাপনা এখন আর নেই। বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার জন্টু হাওলাদার জানান, দক্ষিণ বাউশিয়া, দক্ষিণ পশ্চিম বাউশিয়া, মধ্যবাউশিয়া সরকারি প্রাঃবিঃ, একটি ব্রিজ, হাফেজি মাদ্রাসা রয়েছে হুমকীর মুখে। এগুলো নিরাপদে সরানোর জন্য চেয়াম্যানের সাথে পরিষদে মতবিনিময় হয়। প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা জানান, আমরা বিগত বছর থেকে ঝুকিতে রয়েছি।
এ বছরের কথা জানি না, কর্তৃপক্ষকে অবগত করছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার আঃ গাফফার জানান, তিনি নিজে ঐ স্থান পরিদর্শন করেন। নদী আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই সাথে বাস করছে। বলতে গেলে উপজেলাইতো ঝুকির মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় এমপি সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেব নাথের সাথে আলোচনা চলছে।
উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন টেকের বাজার এখন মেঘনা পাড়েই রয়েছে। হুমকীর মুখে খান পরিবার, ফকির বাড়ি, সরদার বাড়ি, মোল্লাবাড়ি, হাওলাদার বাড়ি। ইতোমধ্যে সালাউদ্দিন খানের বাড়ি সহ ১০/১২টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় রফিক খান, কাইয়ুম খান এখন নদীর মধ্যে বসবাস করছেন, কোথায় যাবেন তা এখনও নিশ্চিত করতে পারছে না তিনি। তাদের অভিযোগ জনপ্রতিনিধিরা তাদের দিকে মুখ তুলে তাকাচ্ছে না। ঐতিহ্যবাহী ফকিরবাড়ির ঐতিহ্য শুপারির বাগান নদীতে গিলে খাচ্ছে। মনের ভিতর হাহাকার বিরাজ করছে ঐ শতবছরের পুরাতন বাড়ির মালিকদের।
রুস্তুম ফকির আক্ষেপ করে জানান, এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বড়জালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এরা কেউ তাদের দিকে তাকাচ্ছে না। ঐ স্থানও এখন মেঘনার পেটে। নামকাওয়াস্তে বাউশিয়া অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা বিগত বছরেই মেঘনা তার পেটে নিয়ে গেছে। এখন আবার ভাঙ্গতে শুরু করছে। পুরাতন হিজলা বাজার আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ৬ হাজার ভোটারের গ্রাম বাউশিয়া এখন স্মৃতি। সব মেঘনার পেটে। এখন বর্ষা, আবারও ভাঙ্গতে শুরু করেছে। হিজলার একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় “হিজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” এখন মেঘনার পাড়ে। উপজেলা প্রশাসনিক ভবন, উপজেলা পরিষদ, টেকের বাজার এখন ভেঙ্গে নেয়ার জন্য মেঘনা। রাক্ষুসে মেঘনার পেটে পুরো বাউশিয়া গ্রাম।
বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পন্ডিত শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ জানান, বাউশিয়া, বাহেরচর গ্রাম তিনটি রাক্ষসী মেঘনার হাত থেকে রক্ষার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে মোটেও সম্ভব না। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন স্থান পরিদর্শন করেন। নতুন বছর হিজলা উপজেলা পরিষদকে কতটুকু নিরাপদ মনে করছেন, এমন প্রশ্নে তিনি জানান- মোটেও নিরাপদ না।
এবিষয়ে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমীনুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,ইতি মধ্যে নতুন করে পাণি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে ভাঙ্গন দেখা দেয়ার কারনে আমরা ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপজেলার কোথায় কিধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেব্যাপারে রিপোর্ট পেলে আগামী সপ্তাহে জেলা প্রশাসক বরাবর রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।
এছাড়া উপজেলার নদী রক্ষা বাঁধ নির্মানের জন্য ৩শ’৭৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
এবিষয় আগামী সপ্তাহে মাননীয় সংসদ সদস্য তিনি এলাকায় আসলে তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এব্যাপারে বরিশাল পাণি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল কুমার সেন এর সাথে মুঠো ফোনে খথা হলে তিনি বলেন, আমরা হিজলা উপজেলাকে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য ৫শ’কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করে অনুমোদনের জন্য প্রেরন করা হয়েছে।
এছাড়া আপাতত আপদকালীন সময়ের জন্য ২কোটি ৮৪ লক্ষ টাকার কাজের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে অনুমোদন পাওয়া গেলে সেখানে ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ শুরু হবে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com