শামীম আহমেদ. ॥ বিনা পরীক্ষায়,বিনা অক্সিজেনে,বিনা চিকিৎসায় কোন মৃত্যু আমরা চাই না এই দাবী নিয়ে বরিশালে করোনা টেষ্ট দীর্ঘসূত্রিতা ও হয়রানী বন্ধ, পিসিআর ল্যাব বাড়িয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০০ টেস্ট, করোনা রোগী পরিবহনের জন্য বিশেষ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু সহ ৮ দফা দাবী বাস্তবায়নের দাবিতে নগরের প্রাণকেন্দ্র সদররোডে এক ঘন্টা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা আহবায়ক কমিটি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ই) জুন সকাল ১১ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যপি নগরের প্রাণকেন্দ্র জনবহুল সড়ক সদররোডের সড়ক পথ দুই প্রান্ত বন্ধ করে আষাঢ় মাসের প্রচন্ড রৌদ্র উপেক্ষা করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা সহ দাবী আদায়ের সমাবেশ করা হয়।
সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন কালে বরিশাল বাসদ জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী প্রশাসনের সকল দপ্তরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন আজকের এই সড়ক অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে বরিশালবাশীর দাবীগুলো দ্রুত পুরন করা না হলে আগামীতে হরতাল পালন সহ কঠোর কর্মসূচি দিয়ে বরিশাল সহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে বজ্র কন্ঠে জানান দেয়।
জেলা বাসদ আহবায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবীব রুমনের সভাপতিত্বে অবরোধ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জাসদ বরিশাল বরিশাল মহানগর সাধারন সম্পাদক আসাদুল হক মুন্না, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বরিশাল জেলা সম্পাদক অধ্যাপক দুলাল মজুমদার। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বাসদ শ্রমীক ফ্রন্ট নেতা শহিদুল ইসলাম,জোহরা রেখা,বরিশাল বে-সরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান সোনার গাঁও টেক্সটাইল মিল শ্রমীক নেতা নুরুল হক প্রমুখ।
বাসদ বরিশাল জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী বলেন, দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে করোনা চিকিৎসায় বরিশাল রয়েছে সর্ব নিম্নস্থানে।
সরকারী তথ্য সূত্রে দেখা যায় ঢাকায় করোনা পরিক্ষার জন্য ল্যাব ৩৮টি,চট্রগ্রামে ৯টি,সদ্যোজাত বিভাগ রংপুর- ময়মনসিংহে ২টি।
অপরদিকে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার কোটি মানুষের চিকিৎসা ভরসাস্থল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার পরিক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব মাত্র ১টি।
অন্যদিকে এই ১টি ল্যাবে রয়েছে না না সমস্যা । সেখানে দক্ষ টেকনোলজিস্ট না থাকার কারনে নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগীরা হচ্ছেন চরম হেনস্থার শিকার।
এসময় তিনি ১জন নমুনা পরীক্ষর্থী রোগীর উদাহারন দিয়ে বলেন ২৩ই জুন সে নমুনা টেস্টের স্যাম্পল দিতে দিতে গিয়েছিলেন তাকে পরীক্ষা করানোর সিরিয়াল দেয়া হয় ১৫ই জুন।
এছাড়া করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার দিক থেকেও বিভাগীয় শহর বরিশাল সর্বনিম্নে রয়েছে। শের-ই-বাংলায় আইসিইউতে বেড ১৮টি হলেও সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ১জন।
মনীষা আরো বলেন, বরিশাল নগর ও জেলায় সরকারী-আধাসরকারী ও বেসরকারী প্রায় ৩০টি ক্লিনিক হাসপাতাল থাকার পরও সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। একমাত্র ভরসা শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আরো অভিযোগ করে বলেন, বরিশালে স্বাস্থ্যখাতে রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসাক্ষেত্রের অপ্রতুলতা ফুটে উঠেছে। অপরদিকে প্রশাসন-সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ বিভাগের মধ্যে রয়েছে কাজের সমন্বয়হীনতা।
বরিশালে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে করোনা রোগীদের জন্য কোন এ্যাম্বুলেন্স সেবা আজ পর্যন্ত চালু করতে পারেনি।
এমনকি বরিশাল নগরের বিভিন্নস্থানের বয়স্ক,অসুস্থ্য রোগীদের জন্য করোনা পরীক্ষার স্যাম্পল সংগ্রহের কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করার কারনে চোখে ফুটে উঠেছে স্বাস্থ্য বিভাগ,সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের কাজে রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতা।
মনীষা আরো বলেন এই মহামরী প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ করোনা দূর্যোগকালীন সংকট মুহুর্তে সময়ে ১টা পিসিআর ল্যাব দিয়ে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার কোটি সাধারন মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
একই সময়ে করোনাকালে সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক,পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের স্বাস্থ্য সু-রক্ষা দেয়া আর্থিক প্রনোদনা দেয়ার দাবী জানান অবরোধ কর্মসূচি থেকে।
পরে অবরোধ নিধর্িিরত কর্মসূচি পালন শেষে নগরীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে পুনরায় ফকিরবাড়ি রোডস্থ দলীয় কার্যলয়ে গিয়ে শেষ করেন।
এর পূর্বে গত ৮ই মার্চের পর এই প্রথম শহরের প্রাণকেন্দ্রে একযোগে একধিক পুলিশ বাহিনী সদর্যা সদ্য করোনা মুক্ত হয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি তদন্ত এম আর মুকুল সহ বেশ কিছু পুলিশ একত্রিত হয়ে আজকের এই সড়ক অবরোধ কর্মসূচি উপলক্ষে সড়কের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের দায়ীত্ব পালন করতে হাজি হয়েছিলেন।