বরিশালের সন্তান নাসার গবেষক

:
: ৬ years ago

এক ছেলে আমেরিকার উত্তর ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জৈব ইলেক্ট্রনিক্সের বিভাগীয় প্রধান ও আরেক ছেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএসডি করছেন। অপর সন্তান বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। এ অবস্থায় সন্তানদের নিয়ে গর্বিত পিতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এমএইচ মন্টুসহ বরিশালবাসী। বড় ছেলে বরিশালের কৃতি সন্তান ড. মাসরুর এম নাহিদ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক (রিসার্চ-ফেলো) জৈব ইলেক্ট্রনিক্সের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট ছেলে ফাহমিদ মোর্শেদ ফাহিদ দেশ সেবা বুয়েট উপাধী পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশীপে(শতভাগ) কম্পিউটার সাইন্সে এ পিএসডি করছেন। আর এমএইচ মন্টু’র একমাত্র মেয়ে প্রত্যাশা জুয়েনা প্রান্তি বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত রয়েছেন।

ড. মাসরুর এম নাহিদ ঃ ছেলেবেলা থেকেই অত্যান্ত মেধাবী এই তরুণ বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ড. মাসরুর এম নাহিদ ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম হন। এর পরে স্কলারশিপ নিয়ে সুইডেনের উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করেন। এরপরে অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকা আসলে দেশের অন্যতম ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের পক্ষ থেকে তার একান্ত সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন নিউ এইজ’র সিনিয়র সাংবাদিক শাইখা শুহাদা পানজিরী। তিনি বরিশালের তরুণ মেধাবী গবেষক ড. মাসরুর এম নাহিদ জৈব ইলেক্ট্রনিক্সের গবেষণার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানান, গত ৪০ বছর বা তারও বেশী সময় ধরে, জৈব ইলেক্ট্রনিক্স সংক্রান্ত গবেষণা একটি দীর্ঘ পথ পেরিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক (রিসার্চ- ফেলো) ড. মসরুর এম নাহিদের মতে ভবিষ্যতমুৃখী ইলেকট্রনিক্সকে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সাথে একিভূত করা প্রয়োজন। সঠিক ভাবে গবেষণা এবং বা¯তবায়ন করা হলে জৈব ইলেক্ট্রনিক্সের প্রচুর ব্যবহারিক সম্ভাবনা রয়েছে। নাহিদের গবেষণা ক্ষেত্রের অন্যতম বিষয় জৈব ইলেক্ট্রনিক্স। এটি এমন একটি কাটিং-এজ (যুগোপোযুগী) প্রযুক্তি, যা ইতিমধ্যে প্রদর্শন (ডিসপ্লে) ডিভাইসগুলোতে প্রয়োগ করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ওলেড (ড়ৎমধহরপ ষরমযঃ-বসরঃঃরহম ফরড়ফব/ঙখঊউ) টিভি এবং স্মার্টফোন পর্দার কথা বলা যেতে পারে। স্বল্প-পুরুত্বের এবং বাঁকা স্ক্রিন সম্পন্ন ডিভাইসের উদ্ভাবন এবং প্রয়োগ এই চমকসৃষ্টিকারী প্রযুক্তির মাধ্যমেই শুধুমাত্র সম্ভব।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গত চার দশক ধরে এই পরিবেশ-বান্ধব, সাশ্রয়ী এবং খুব কম খরচে ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির গবেষণা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। জৈব সৌর কোষের প্রোটোটাইপ ইতিমধ্যেই বাজারে একটি আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে। কম-পুরুত্বের ট্রানজিষ্টর : জৈব ইলেক্ট্রনিক্সে থিন-ফিল্ম (কম-পুরুত্বের অত্যন্ত পাতলা) প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও প্রয়োগ নি:সন্দেহে একটি বিশাল লাভ ও সুবিধাজনক প্রক্রিয়া। জৈব ইলেক্ট্রনিক্সে থিন-ফিল্ম হচ্ছে ’দ্রবন-প্রক্রিয়াজাতকরণ’ উৎপাদন প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এ প্রক্রিয়ায় যে কোন বস্তুকেই দ্রবীভ’ূত করে ব্যবহার উপযোগি করা যেতে পারে। মূলত কম-পুরুত্বের অত্যন্ত পাতলা ফিল্ম জাতীয় প্রযুক্তির প্রয়োগ সুবিধা হচ্ছে তা সহজেই দ্রবীভূত-করা বা হওয়ার মতো। অর্থাৎ এগুলো এমন উপায় ও উপকরণে তৈরী যা সহজেই দ্রবীভূত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ক্লোরোফরম হচ্ছে একটি সহজে দ্রবীভূত হওয়ার মতো জৈব-দ্রাবক। একটি কম-পুরুত্বের ডিভাইস বা পাতলা ফিল্ম তৈরী করতে এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। শিল্প ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা ব্যবহার করে ট্রানজিষ্টরের মান উন্নত করা যায়।

ফাহমিদ মোর্শেদ ফাহিদঃ এ নগরীর সন্তান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এর কম্পিউটার কৌশল বিভাগ থেকে পাশ করে গত ১৮ জুলাই কম্পিউটার সাইন্সে এ পিএসডি করার জন্য স্কলারশীপে(শতভাগ) আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ এপ্রিল মাইক্রোসফ্ট আয়োজিত (মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপ) বিশ্বব্যাপী চলা ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাইক্রোসফ্ট এর বাংলাদেশ কর্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার উপস্থাপন পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এই গৌরব অর্জন করে ফাহিদ ও তার বুয়েট পড়–য়া মেধাবি বন্ধুদের দল। নগরীর গোরস্থান রোড এর লেচুশাহ সড়কের মোর্শেদ ভিলা নিবাসী ফাহিদ এর শৈশব এবং কৈশর কেটেছে নগরীতেই। মা, বাবা, দুই ভাই, এক বোনের পরিবারে ফাহিদ মেঝ। ফাহিদ মল্লিকা কিন্ডার গার্ডেন ও জিলা স্কুলের সাবেক ছাত্র। ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সে সুযোগ করে নেয় দেশ সেরা বুয়েট এর কম্পিউটার কৌশল বিভাগে। এরপর থেকেই শুরু হয় তার গৌরবের পথ চলা। ফাহিদ ও তার বুয়েটের অপর তিন মেধাবি বন্ধুর সমন্বয়ের দল ‘ফাঙ্কশন’ বাংলাদেশ পর্বে দেশ সেরা হয়েছে ইতিমধ্যেই। মাইক্রোসফ্ট এর একটি প্রতিযোগিতায় তাদের অভাবনীয় আবিষ্কারের আইডিয়া তাদের করেছে চ্যাম্পিয়ন। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী অংশ নেয়া সকল প্রতিযোগিদের বলা হয়েছিল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের সার্বজনিন একটি সমস্যার সমাধান করতে। ফাহিদের টিম ‘ফাঙ্কশন’ দিয়েছে এক চমৎকার সমাধানের প্রযুক্তিগত আইডিয়া। তিনটি বিভাগের এই প্রতিযোগিতার একটি ‘ওয়াল্ড সিটিজেনশীপ’। দুই পর্বের প্রতিযোগিতার এই অংশে প্রতিযোগিদের কাছে আইডিয়া আহবান করা হয়। সেখান থেকে সেরা ৫ দলকে ডাকা হয় চূড়ান্ত পর্বে। গত ২৪ এপ্রিল মাইক্রোসফ্ট এর বাংলাদেশ কার্যালয়ে উপস্থাপন পর্বে ফাহিদ এর দল উপস্থাপন করে একটি যন্ত্রের আইডিয়া যার নাম ‘মামি রিং’। এই যন্ত্রটি একটি আংটি। এই আংটি গর্ভাবস্থায় মায়েদের হ্রদস্পন্দন পরিমাপ করে সংরক্ষণ করবে যাবতীয় তথ্য। আর জরুরি অবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারী এমনকি মুঠোফোন ব্যবহার করা স্বজনদের কাছে পৌঁছে যাবে সকল তথ্য। একই সাথে এই যন্ত্রের মাধ্যমে তথ্য পৌঁছানো যাবে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও। এমনই ভিন্নধর্মী আইডিয়া দিয়ে ফাহিদ ও তার দল প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে। এর পর এই দলই সুযোগ পাবে অনলাইন সেমিফাইনালে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার।

প্রত্যাশা জুয়েনা প্রান্তি ঃ মুক্তিযোদ্ধা এমএইচ মন্টু’র ৩য় সন্তান প্রত্যাশা জুয়েনা প্রান্তি। সেও অতান্ত মেধাবী। বর্তমানে প্রত্যাশা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত রয়েছেন। সন্তানদের এমন সাফল্যের বিষয়ে পিতা এমএইচ মন্টু বলেন, নাহিদ, ফাহিদ ও প্রত্যাশা মেধাগত যোগ্যতায় আজ যে স্থান অর্জন করেতে পেরেছে তাতে আমি সত্যিই গর্বিত। পিতা হিসেবে তিনি গর্বিত অবশ্যই। তবে বেশি গর্বিত মানব কল্যাণে এমন একটি আবিস্কারের অংশ হিসেবে তার সন্তান রয়েছে বলে। সন্তানরা যেন তার এই গৌরবান্বিত পথচলায় অনেক দূর এগিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে সকলের কাছে এই দোয়াই চেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মন্টু।