বরিশালের রূপাতলীতে শ্রমিক ইউনিয়নের ২ গ্রুপের সংর্ঘষ আহত-২০

:
: ২ years ago

বরিশাল নগরীর পশ্চিমাংশে রূপাতলী বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নিতে শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি সুলতান মাহমুদের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বেপরোয়া হামলায় সুলতান মাহমুদসহ তার অনুসারী অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

রোববার বেলা ১২টায় রূপাতলী বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন মোল্লা মার্কেটের দ্বিতীয়তলায় সুলতান মাহমুদের কার্যালয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। সুলতান মাহমুদ বরিশাল সদর আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী।

রূপাতলী বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, বরিশাল সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিক উল্লাহ মুনিম, রাজিব খান ও রইজ আহম্মেদ মান্নার নেতৃত্বে শতাধিক সশস্ত্র লোকজন তার কার্যালয়ে হামলা করেছেন। হামলাকারীদের হাতুড়ি ও চাপাতির আঘাতে তিনিসহ ২০ জন শ্রমিক আহত হন।

রূপাতলী বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ পেতে বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের আওতায় পৃথক দুটি কমিটি গত ১৫ মার্চ থেকে মরিয়া হয়ে আছে। এতদিন তারা টার্মিনালে প্রতিদিন মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে থাকত। শনিবার দুপুরের পর থেকে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রূপাতলী টার্মিনাল এলাকা।

শ্রমিক ইউনিয়নের এই দুই পক্ষই ক্ষমতাসীন দলের আশ্বির্বাদপুষ্ট। সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটিকে সমর্থন দিচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এবং পরিমল চন্দ্র দাসের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটিকে সমর্থন দিচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

রোববারের হামলায় আহত শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক গাজী মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ২০-২৫ জন শ্রমিক সুলতান ভাইয়ের অফিসে বসে গল্প করছিলাম। বেলা ১২টার দিকে শতাধিক যুবক হাতুড়ি ও চাপাতি নিয়ে অফিসে ঢুকে আমাদের ওপর চড়াও হয়। ওদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। হামলাকারীরা সুলতান ভাইসহ আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আগ্নেয়াস্ত্রের ভয়ে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি।

তিনি জানান, হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন সুলতান মোল্লা, মানিক, নাসির, শামিম হাওলাদার, রিজন, বিপ্লব, সালাম হাওলাদার, সোহাগ, ফারুক হাওলাদার ও রুবেল মোল্লা। নিরাপত্তার অভাবে আমরা কেউ হাসপাতালে ভর্তি হইনি। নিরাপদ স্থানে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি।

মিজানুর রহমান আরও জানান, হামলার সময় টার্মিনাল এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ছিল। কিন্তু তারা (পুলিশ) হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশের নীরব ভূমিকার কারণে শতাধিক হামলাকারী নিরাপদে পালিয়ে গেছে।

হামলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বরিশাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. এনামুল হক বলেন, একটি অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। ফলে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। হামলাকারীদের নাম-পরিচয় জেনেছি।

এদিকে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি, নগর শ্রমিক লীগের সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, আমরা হামলার ব্যাপারে কিছুই জানি না। ওরা নিজেরা নিজেদের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে নাটক সাজিয়েছেন। উল্টো আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

পরিমল চন্দ্র দাস পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, তাদের দু’জন সমর্থক কাউন্টার কেরানি বিপু সিকদার ও কলম্যান কালামকে রোববার বেলা ১১টায় মারধর করেছেন সুলতান মাহমুদের লোকেরা। বিপু ও কালামকে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রোববার দুপুর ১টায় রূপাতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনাল ভবনের নিচ তলায় অবস্থান করছে মেয়র অনুসারী পরিমল চন্দ্র দাস ও আহম্মদ শাহরিয়ার বাবুর নেতৃত্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়নের সমর্থকরা। দফায় দফায় টার্মিনাল এলাকায় মহড়া দিয়েছেন তারা।

অপরদিকে হামলার পরে প্রতিপক্ষ প্রতিমন্ত্রী অনুসারী সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়নের সমর্থকরা ছিলেন না টার্মিনালে। টার্মিনালের একাধিক সাধারণ শ্রমিক বলেন, এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে নিরীহ শ্রমিকরা সংকটে পড়েছেন। অনেক শ্রমিক নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না।

উল্লেখ্য, বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলার প্রায় ৩০ রুটে প্রতিদিন ১১১ বাস যাত্রী পরিবহন করে। দিনে ট্রিপ হয় ৬০০টি। শ্রমিক ইউনিয়নের নামে প্রতিটি ট্রিপ থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এ হিসাবে প্রতিদিন আদায় হয় ১৮ হাজার টাকা। এছাড়া রূপাতলী টার্মিনালের ওপর দিয়ে যাওয়া প্রতিটি দূরপাল্লার পরিবহন থেকে আদায় করা হয় ১০০ টাকা করে। শ্রমিকের কল্যাণের নামে নেওয়া হয় আরও চাঁদা। এ জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ক্ষমতাসীন দলের দু’পক্ষই টার্মিনালটির কর্তৃত্ব পেতে মরিয়া।