বরিশালের মীরগঞ্জ ফেরিঘাটে আটকা পরে নবজাতক সন্তানের মৃত্যু!

:
: ২ years ago

বরিশাল সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে আনন্দে পুরো পরিবার ছিল উদ্বেলিত। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পরে এ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে ফিরছিলেন তারা। মাঝপথে আঁড়িয়াল খা নদী পার হতে ফেরিঘাট।

ফেরিঘাট তত্বাবধায়নের লোকদের স্বেচ্ছাচারীতায় টানা দুই ঘন্টা আটকা থেকে শেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে ৮দিন বয়সী শিশুটি। মারা যাওয়া ওই শিশুর পিতা বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন লিমন। সন্তান হারানোর শোকাহত লিমন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না ফেরিঘাটে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক স্বেচ্ছাচারিতার ঘটনা।

রোববার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ ফেরিঘাটে এই ঘটনা ঘটে।

লিমন বলেন, ১৪ আগস্ট বরিশালের একটি হাসপাতালে আমাদের ছেলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। হাসপাতাল থেকে ২১ আগস্ট ছাড়পত্র দিলে এ্যাম্বুলেন্স যোগে গ্রামের বাড়ি মুলাদীতে রওয়ানা দেই।

ওই এ্যাম্বুলেন্সে আমার পরিবার, শ্বশুড় বাড়ির আত্মীয়-স্বজন সকলেই ছিলেন। আগে থেকেই জানতাম মীরগঞ্জ ফেরিঘাটে সন্ধ্যার ফেরি ছেড়ে যায় ৬টা ৪০ মিনিটে। আমরা নির্ধারিত সময়ের দুই একমিনিট আগে পৌঁছে দেখি ফেরি আসেনি।

কিছুক্ষণ পরে ফেরি এলে এ্যাম্বুলেন্সসহ ফেরিতে উঠি। কিন্তু ফেরিটি ছাড়ছিল না। বারবার অনুরোধ করা সত্যেও ফেরিঘাটে থাকা ইজারাদারের লোক সাইফুল ইসলাম আমাদের শাসিয়ে যাচ্ছিলেন। ফেরিটি ৮টা ২০ মিনিটে ঘাট ত্যাগ করে।

সাব্বির হোসেন লিমন বলেন, দীর্ঘক্ষণ ফেরিতে গাড়ি থাকায় অস্বাভাবিক গরমে চোখের সামনে আমার সন্তান মারা গেছে। তখন অসহায় হয়ে পরেছিলাম।

পিতার চোখের সামনে সন্তান মারা গেছে, এর থেকে মর্মান্তিক কিছু হতে পারে না। আমি কিছু করতে পারিনি। এ নিয়ে ওই ফেরির দেখভাল যে করে সাইফুলকে ফেরি দুই ঘন্টার অধিক সময় আটকে রাখার কারন জানতে চাইলে আমাকে সে তার দলবল নিয়ে এসে মারধর করতে আসেন। শেষে উপস্থিত লোকজন আমাকে এম্বুলেন্স উঠিয়ে দেন। তখনো সে আমাকে মারতে আসেন।

লিমন বলেন, ফেরিঘাট ইজারা নিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী। স্ত্রীর নামে ইজারা থাকলেও লোকদিয়ে নিজেই দেখভাল করেন তিনি। আমি তার সাথেও দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। তার তত্ত্ববধায়নে থাকা একটি জনসেবামূলক ফেরিঘাটে অবহেলায় আর স্বেচ্ছাবারিতায় মানুষের মৃত্যু হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।

আমি বর্তমানে খুবই মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছি। একটু স্বাভাবিক হতে পারলে অবশ্যই আইনের আশ্রয় নিব। আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচার আমি চাই।

তিনি আরো বলেন, আমি ছাত্রলীগ নেতা-আমার সাথে এই আচরণ হয়েছে। সাধারণ মানুষ ওখানে কি ভোগান্তির শিকার হন তা অনুমান করে দেখুন। এসময়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, যে কারো মৃত্যু দুঃখজনক। একটি বিষয় হলো যার মারা যায় তিনি অনেকের বিরুদ্ধেই বলতে পারেন। তাপরপরও ঘাটে কারো কোন গাফিলতি থাকলে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ফেরিঘাটে অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু এমন কোন তথ্য আপনার (প্রতিবেদক) আগে কেউ আমাকে জানায়নি।

বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিব। তাছাড়া প্রকৃতপক্ষে ফেরিঘাট দেখার দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের। আপনি (প্রতিবেদেক) সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করবেন আশা করি। এর বাইরে কেউ যদি আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন আমি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রকৌশলীর সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ না করায় বক্তব্য সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি।