বরিশালের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

ঈদের আগে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বরিশালের কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক ব্যবসায়ী বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই ব্যবসায়ীরা বঙ্গবাজার থেকে পাইকারি দামে পোশাক কিনতেন। ঈদের আগে চালানের জন্য বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি তাঁরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বরিশালের সবচেয়ে বড় পোশাকের বাজার গির্জা মহল্লা, চকবাজার, হাজী মুহাম্মদ মহসিন মার্কেট (ডিসি মার্কেট) এবং সিটি মার্কেট। এ ছাড়া শহরের আশপাশে রয়েছে আরও একাধিক পোশাকের বাজার। বরিশালের ছোট–বড় অধিকাংশ দোকানের ব্যবসায়ীরা রাজধানীর বঙ্গবাজার থেকে পোশাক কিনে নিজেদের দোকানে বিক্রি করেন। শুধু বরিশাল নগর নয়, বরিশাল বিভাগের সব জেলা, উপজেলার পোশাক ব্যবসায়ীদেরও পোশাকের বড় জোগানদাতা ছিল রাজধানীর বঙ্গবাজার।

বরিশালের ব্যবসায়ীরা জানান, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে পোশাকের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা বঙ্গবাজার মার্কেটটি পুড়ে যাওয়ায় বিভাগের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ঈদের আগে এই ব্যবসায়ীরা পোশাকের বড় চালান আনার জন্য অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছিলেন। এখন সেই টাকার অনুকূলে মালামাল পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই আর নেই। ফলে এবার ঈদে ব্যবসায়ীদের পোশাকের জোগান দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাইরে থেকে যেসব মালামাল সংগ্রহ করা যাচ্ছে, সেগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি। এরপর ঢাকা থেকে বরিশালে আনা এবং তা বিক্রি করে লাভ করা কঠিন। অন্যদিকে দামও ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। ফলে ঈদ মৌসুমের ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়েছে।

আগুনে পুড়ে বঙ্গবাজার একটি বিধ্বস্ত স্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী এখনো ধ্বংসস্তূপে নিজেদের মালামাল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বঙ্গবাজার, ঢাকা, ৬ এপ্রিল

নগরের পাইকারি পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে বঙ্গবাজার থেকে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পোশাকের প্রথম চালান এনে মজুত করেছেন। তবে বঙ্গবাজারে আগুন লাগায় পরবর্তী চালান কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।

নগরের বান্দরোডের সিটি মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী স্মার্ট জোনের মালিক মো. সেলিম বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে বঙ্গবাজার থেকে আমাদের পোশাকের চালান আসত। গত সপ্তাহে ঈদের পোশাকের একটি চালান আনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ঈদের বড় চালান আসার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই বঙ্গবাজারে আগুন লেগে সব পুড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পোশাক পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে আমাদের।’

নগরের রূপাতলী এলাকার নায়লা শেফা নামের এক তরুণী অনলাইনে মেয়েদের থ্রিপিস ও অন্যান্য পোশাক বিক্রি করেন। ঈদ সামনে রেখে পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আগেই অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছেন মালামালের জন্য। প্রথম চালান গত সপ্তাহে এসেছে। দ্বিতীয় চালান আসার কথা ছিল চলতি সপ্তাহে। কিন্তু বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ায় এখন বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখন পণ্য তো পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই, অগ্রিম টাকা কবে পাব কিংবা আদৌ পাব কি না, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।’

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ায় ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন নগরের গির্জা মহল্লা এলাকার ইসলামিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী বেল্লাল হোসেনও। এই মার্কেটে তাঁর দুটি দোকান। সেখানে নারীদের হিজাব, বোরকা, নিকাবসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি করেন। ঈদে এগুলোর বেশ চাহিদা থাকে। বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমরা বঙ্গবাজার এবং ইসলামপুর থেকেই মূলত এসব পণ্য সংগ্রহ করি। বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ায় এখন ইসরামপুরের ওপরই একমাত্র নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের। বিকল্প উৎস না থাকায় এখন পণ্যের পাইকারি দামও বাড়তি।’

বরিশাল নদীবন্দর এলাকার হাজী মুহাম্মদ মহসিন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখর দাস বলেন, এ মার্কেটে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত আড়াই শ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই বঙ্গবাজার থেকে পাইকারিতে পোশাক কিনে এখানে বিক্রি করতেন। প্রতি ঈদে একেকটি দোকানে অন্তত ১০ লাখ টাকার বেচাবিক্রি হতো। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ নতুন পোশাক মজুত আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ ব্যবসা করা যাবে। তাতে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করা যাবে না। তাই পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সাধ্যের বাইরে চলে যেতে পারে পোশাকের দাম।

গত মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। টানা ছয় ঘণ্টার আগুনে পুড়ে যায় বাজারের কয়েক হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে পুড়ে যায় এসব প্রতিষ্ঠানে থাকা নগদ টাকা এবং কোটি কোটি টাকার পোশাক।