বরিশালের বাবুগঞ্জের ঐতিহাসিক দূর্গাসাগরে অষ্টমীর পূণ্যস্নান

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউনিয়নের ঐতিহাসিক দূর্গাসাগর দীঘিতে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম স্নানোৎসব অশোকা অষ্টমীর পূণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। সনাতন হিন্দুধর্মের রীতি অনুযায়ী প্রতিবছর চৈত্র মাসের অশোকা অষ্টমী তিথিতে সংকীর্ণতা ও পঙ্কিলতা ঘেরা জীবন থেকে পাপমুক্তি এবং মনোবাসনা পূরণের আশায় হাজার হাজার হিন্দু পূণ্যার্থীরা ধর্মীয় বিশ্বাস মতে স্নান করতে আসেন এ দূর্গাসাগর দীঘিতে। লগ্ন অনুসারে এবছর ১২ এপ্রিল শুক্রবার বেলা ১১টা ৮মিনিট থেকে শনিবার সকাল ৮টা ৫৮মিনিট পর্যন্ত দু’দিনব্যাপী ওই অশোকা অষ্টমী তিথিতে স্নানোৎসব চলবে। এসময় হাজার হাজার ভক্ত-পূণ্যার্থীরা স্নান করেন ওই দূর্গাসাগর দীঘিতে। স্নান উপলক্ষে দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীসহ লাখো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা মাধবপাশা এলাকা।

প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এ ঐতিহ্যবাহী স্নানোৎসব উপলক্ষে দূর্গাসাগরের পাড়ে অবস্থিত মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল ও কলেজ মাঠে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় গ্রামীণ লোকমেলার। সেখানে মুড়ি-মুড়কি, খেলনা, আসবাবপত্র ও রাধাচক্কর থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্রও পাওয়া যায়। ওই লোকজ মেলায় বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন শত শত দোকানিরা। আয়োজক কমিটির সভাপতি মাধবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন হাওলাদার ও সম্পাদক রাজা দিলীপ চন্দ্র রায় জানান, প্রশাসন ও আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে এবার যৌথভাবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পূণ্যার্থীদের স্নান শেষে মহিলাদের কাপড় পাল্টানো সুব্যবস্থাসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন স্নানোৎসবে আসা সনাতন ভক্ত-পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা।

১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগনার তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ রায় এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনে স্ত্রী দূর্গাবর্তীর নামানুসারে এই দূর্গাসাগর দীঘি খনন করেন। দীঘি খননের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, চৈত্রের শুকনা মৌসুমে চন্দ্রদ্বীপ এলাকায় পানির সংকট দেখা দিতো। ফলে তৎকালীন রাণী দূর্গাবতী তার প্রজা ও এলাকাবাসীর স্বার্থে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের রাজা শিব নারায়ণ রায়কে একটি বৃহৎ দীঘি খনন করার পরামর্শ দেন। ওই পরামর্শটি রাজা শিব নারায়ণের পছন্দ হলে তিনি স্ত্রী দূর্গাবতীকে জানান, তিনি (দূর্গাবতী) যতদূর হেঁটে আসতে পারবেন ততদূর নিয়ে একটি দীঘি খনন করা হবে। নির্ধারিত দিনে রাণী দূর্গাবর্তী রাজার সঙ্গে হাঁটা শুরু করলে রাজ কর্মচারিরা দীঘির সীমানা চিহ্নিত করেন এবং রাজার নির্দেশে সেখানে খনন কাজ শুরু হয়। পরে রাণী দূর্গাবতীর নামানুসারেই বৃহৎ ওই দীঘির নাম দূর্গাসাগর রাখা হয়।

কালের বিবর্তনে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের রাজত্ব বিলুপ্ত হলে ঐতিহাসিক ওই দীঘিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরিচর্যার অভাবে ঝোপ-জঙ্গলে ভরে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়বারের মতো ঐতিহাসিক এ দূর্গাসাগর দীঘিটি খনন করেন এবং দীঘির মাঝখানে মাটির একটি দৃষ্টিনন্দন দ্বীপ তৈরি করেন। দূর্গাসাগর দীঘির মোট আয়তন ৪৫.৫৫ একর। এরমধ্যে দ্বীপসহ জলভাগের পরিমান ২৭.৩৮ একর এবং দীঘির পাড়সহ স্থলভাগের পরিমান ১৮.১৭ একর। দীঘির চারপাশে ও মাঝখানে অবস্থিত দ্বীপটিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ এবং ঔষধি বৃক্ষ রয়েছে। এছাড়াও দীঘির চারপাশ দিয়ে হাঁটার জন্য ১.৬ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে রয়েছে। তিনটি ঘাট ও মাঝখানে দ্বীপবিশিষ্ট এ দৃষ্টিনন্দন দীঘিটির সর্বশেষ ১৯৯৭ এবং ১৯৯৯ সালে সংস্কার করা হয়। প্রায় ২৪০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এ দূর্গাসাগর দীঘিটি বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বরিশাল জেলা পরিষদ।