জন্ম হলে মৃত হবে এটাই প্রকৃতির চিরা চড়িত নিয়ম। তবে পিতার কাঁধে কয়েক বছরের ব্যবধানে দুটি ছেলে সন্তানের লাশ বহন করা কতটা কষ্টের আর যত্রনার সেটা বলাই বাহুল্য।
পিতার কাঁধে সন্তানের লাশের চেয়ে ভারী বিচিত্র এ জগতে আর কিছু হতে পারে বলে জানা নেই। সেরকমেরই একজন অভাগা পিতা বরিশালের বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের মহিষাপোতা গ্রামের রাজমিস্ত্রি মো. ইয়াকুব আলী।
দুটি মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় তিনি তার টকবগে যুবক বয়সের দুই ছেলেকে হারিয়েছেন। যারা তার সঙ্গে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে কেবল শুরু করেছিল। ইয়াকুব রাজের বড় ছেলে ইমরান হোসেন (১৬) বানারীপাড়া পৌর শহরের বন্দর বাজারের কাপড় পট্টিতে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান গণির নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত দো’তলা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। দু’মাস পরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাীধন অবস্থায়
২০১৬ সালের ৭ মে শনিবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটের সময় ইমরান মারা যায়। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পরে ছোট ভাই সায়েম বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিল।
বাবা-মা বড় ছেলেকে হারানোর শোক ছোট ছেলেকে ঘিরে যখন কিছুটা কাটিয়ে উঠছিলেন, ঠিক তখনি আরেক দূর্ঘটনা তাদের সব স্বপ্ন-সুখ ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। ৯ জুলাই রাতে বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের গুয়াচিত্রা বাজার সংলগ্ন মসজিদের সামনে মাহিন্দ্রা-আলফা ও মটরসাইকেলের মুখোমুখি
সংঘর্ষে বন্ধু রাব্বীসহ মটরসাইকেল আরোহী মো. সায়েম (২০) গুরুতর আহত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে অবশেষে ১৫ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটের সময় বাবা-মা, দুই অবুঝ বোন আর স্বজনদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে সায়েম চির
অচেনার দেশে পাড়ি জমান।
১৬ জুলাই শনিবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে উপজেলার মহিষাপোতা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বড় ভাই ইমরানের কবরের পাশে সায়েমকে চির নিন্দ্রায় শায়িত করা হয়। দুই ভাইয়ের পাশাপাশি এ কবর শুধু স্বজনদেরই নয় কাঁদাচ্ছে প্রতিবেশীসহ সবাইকে। বুকের ধন দুই ছেলে ইমরান-সায়েমকে মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় অকালে হারিয়ে তাদের বাবা-মা পাগলপ্রায়। পরিবারসহ গোটা এলাকায় বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ।
গভীর শোকাহত এ পরিবারকে শান্তনা জানানোর ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন সবাই।