বরিশালের নদ এখন ‘পয়োনিষ্কাশন’ নালা

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া একসময়ের খরস্রোতা শ্রীমন্ত নদের এখন আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। এলাকাবাসী এটিকে মরা খাল ধরে নিয়েছেন। বিলীন হওয়া শ্রীমন্ত দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা আর বাসাবাড়ির পয়োনিষ্কাশনের একটি নালায় পরিণত হয়েছে।

বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে কালীগঞ্জ বাজার হয়ে নিয়ামতি পর্যন্ত বিষখালী নদীতে মিশেছে এই অঞ্চলের নৌপথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম শ্রীমন্ত নদ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদটির দখল ও দূষণ রোধ করে সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় ধীরে ধীরে মরে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছেন বাকেরগঞ্জ পৌরবাসী।

বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড ঘেঁষে বয়ে গেছে শ্রীমন্ত নদ। দুই যুগ আগেও এটি খরস্রোতা ছিল। তবে সেটি এখন মরা খাল। পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসস্ট্যান্ড ব্রিজের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে দুই শতাধিক অবৈধ দোকানপাট ও পাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের আফসার উদ্দিন মার্কেট থেকে থানা ব্রিজ পর্যন্ত আধা কিলোমিটারে গড়ে উঠেছে অর্ধশত অবৈধ বাড়িঘর। নদীর প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা এই পৌর এলাকার মধ্যে পড়েছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও ব্যাংকাররা খালের দুই পাশ দখল করে রেখেছেন। পৌর এলাকার বাড়িঘরের পয়োনিষ্কাশন নালা খালের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এর পানি বর্ষাতেও দূষিত থাকে। যে কারণে এ পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগেই।

পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ আমিরুজ্জামান রিপন বলেন, ‘এটি শ্রীমন্ত নদ ছিল। এখন দখল আর দূষণে খাল হয়ে গেছে। আমার বাড়ির পাশ দিয়েই নদটি একসময় বয়ে গিয়েছিল।’

পৌর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জিলন ডাকুয়া বলেন, ‘শ্রীমন্ত; সে তো অনেক আগের কথা। এখন যেটি আছে, সেটি খাল। এর আকার আগে যা ছিল, তাঁর চেয়ে হয়তো কিছুটা ছোট হয়েছে। মেয়র পৌর এলাকার অংশে খালের দুই পাশে ব্লক ফেলে সৌন্দর্য বর্ধন করেছেন। শোনা যায় এটি সংস্কারও করা হবে।’

স্থানীয়দের তথ্যমতে, এই অঞ্চলে বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান নদীপথ ছিল এটি। শ্রীমন্ত থেকে পশ্চিমাঞ্চলে মোল্লারহাট, পাথরঘাটা, চান্দুখালী, মির্জাগঞ্জ, সুবিতখালী, বেতাগীসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচল করত নৌকা।

এদিকে খালে পরিণত হওয়া সেই শ্রীমন্ততে পানি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন আশপাশের গরিব বাসিন্দারা। যাঁদের গভীর নলকূপ নেই, তাঁদের এখানকার পানির ওপরই ভরসা। বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসসংলগ্ন একাধিক বাসিন্দা জানান, তাঁদের গোসলসহ বাসার যাবতীয় কাজ এ নদের পানি দিয়ে চলত। কিন্তু জোয়ারের সময় পানি নিতে না পারলে বাসার কাজকর্ম বন্ধ থাকে। ভাটার সময় নদের পানি শুকিয়ে যায়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এখন যে যাঁর মতো দখল করে বসতবাড়ি, দোকানঘর নির্মাণ করায় নদ নালায় পরিণত হয়েছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুজর ইজাজুল হক বলেন, ‘নদটি সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। এটি কোন অবস্থায় আছে, তা দেখতে হবে। এরপর কার্যকর ব্যবস্থা নেব।’

বাকেরগঞ্জ পৌরসভার সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীমন্ত নদ সংস্কার, খনন বা উদ্ধার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, তা মেয়র কিংবা প্রকৌশল শাখা বলতে পারবে। আমার এ বিষয়ে জানা নেই।’

পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া জানান, একটি কর্মসূচিতে থাকায় তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না এখন।