বরিশালের জেলখালে যৌবন ফিরবে কবে ?

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

* ফের দখলদারদের থাবা

* ময়লার ভাগাড়ে বাড়ছে মশার সংক্রমন
* পানি প্রবাহ না হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা
* মাঝপথে থেমে যায় খন্ড খন্ড অভিযান


সীমানা পিলার স্থাপন, দখলদার চিহ্নিতকরণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সর্বশেষ ময়লা আবর্জনা অপসারণ করা হলেও প্রাণ ফিরে পায়নি বরিশালের জেলখালসহ ২২টি খাল। ময়লা ভাগাড়ই থেকে যায়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী জেলখাল উদ্ধারে নানা পদক্ষেপ নিলেও দখল, দূষণ ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে খালটি। সর্বশেষ পরিচালিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা অভিযানে পলিথিন আর ময়লার স্তুপ ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। মূলত খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা খালটিকে ময়লার ভাগাড় বানিয়ে রেখেছেন। কোথাও আবার খালপাড় পুনরায় দখল করে স্থাপণা গড়ে তুলছেন অনেকে। এদিকে নগরীর সচেতন মহল কেবলমাত্র বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেই বিভিন্ন বুলি আওরিয়ে বেড়ান। ঠিক তখনই দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেন, অবশ্য গৃহীত কর্মসূচী মাঝপথেই থমকে যায়। সংশ্লিষ্টদের দাবী, মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়া আছে, যা পাস হলেই কেবল জেলখাল সহ নগরীর সবগুলো খাল প্রাণ ফিরে পাবে। তবে নগরবাসীর প্রশ্ন, আদৌ কি জেল খাল ফিরে পাবে হারানো যৌবন? তারা মনে করেন খন্ড খন্ড পরিকল্পনা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র স্থায়ী ও টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে যৌবন ফিরে পেতে পারে জেলখাল সহ নগরীর ২২টি খাল।

সূত্রমতে, ১৯৯১-৯৬-এর বিএনপির শাসনামলে তৎকালীন সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার জেলখাল উদ্ধারে অভিযান চালান। ২০০১ সালে তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ হয়ে এসে ফের অবৈধ উচ্ছেদ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চালান। এরপর তিনিই বরিশালের সিটি মেয়র হয়ে আবারও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকার আমলে সেনাবাহিনী ফের উদ্ধার ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ শাসনামলে তৎকালীন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরণ অবৈধ উচ্ছেদ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চালানোর লক্ষ্যে নৌ শোভাযাত্রা করে কার্যক্রম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে জরিপকার্য পরিচালনা করে ৩১১ জন দখলদার চিহ্নিত করা হয়। তবে এরপর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৭ সালে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের অনুদানে জেলখাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান। সেই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নগরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে খালের ময়লা আবর্জনা পরিচ্ছন্ন অভিযানে অংশ নেন। এর আগে ২০১৬ সালে জেলখাল অপদখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে ২০১৮ সালেও জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বরিশাল নগরের ঐতিহ্যবাহী জেলখাল পুনঃসংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাশ।

সর্বশেষ বরিশাল জেলখাল উদ্ধার, পুনঃসংস্কার, পাড় সংস্কার নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ১৪শ’ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠান। যদিও এখন পর্যন্ত সেই প্রকল্প পাস হয়নি। তারপরও সিটি কর্পোরেশন নিজ উদ্যোগে ৮ দিন ধরে এ খালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। ওই অভিযানে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ ট্রাক ময়লা বা বর্জ্য অপসারণ করা হয়। তবে প্রকল্প পাস না হওয়ায় খালের পুনঃখনন বা সংস্কার কোনটিই করা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েক দফা অভিযান চালালেও দৃশ্যত কোন উন্নয়ন কর্মসূচি না হওয়ায় সম্প্রতি জেলখালসহ নগরীর ২২টি খালের পাড়েই পুনরায় গড়ে উঠছে ছোট বড় স্থাপনা। আর খালের মধ্যে ফের ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমা হয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন জানান, সিএস ও আরএস মানচিত্র অনুযায়ী জেল খালের দুই পাড়ের অনেকাংশ দখলদারদের কবলে গেছে। জেলখালসহ নগরীর ২২টি খাল পুনঃখনন বা সংস্কারে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সকল অভিযানই বৃথা যাবে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া খালপাড়ের বাসিন্দারা সচেতন না হলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ হওয়া সম্ভব নয় বলেন তিনি।