বরিশাল ব্যুরো ॥ খান বাহাদুরের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, জীবনে বেঁচে থাকা অবস্থায় মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। যাতে মৃত্যুর পর মানুষরা তাকে স্মরণ করে। যেমন বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালে ঢুকতে দুইটি কবর দেখা যায়। বরিশালের অনেকেই জানে না এই কবর দুইটি কার? কবর দুইটি হলো- ঢাকা নবাব পরিবারের মেয়ে ও তার স্বামীর। তাদের ভগ্নিপতির সাথে সুসম্পর্ক ছিল মরহুম খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিনের। তিনি ওই পরিবারকে ম্যানেজ করে তার সহযোগিতায় জনকল্যাণে নির্মিত হয়েছিল এই হাসপাতাল। শুধু হাসপাতালই নয় বরিশালে শিক্ষা, চিকিৎসা, রাজনীতি ও সমবায় আন্দোলনের অন্যতম দিশারি, বরিশাল বেল ইসলামিয়া ছাত্রাবাস, এ.কে স্কুল, আনজুমান হেমায়েত ইসলাম, হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদ গাহ ময়দান এবং 'দি বরিশাল ইসলামিয়া আরবান সমবায় সমিতি' এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সহ মুসলিম জাগরণী একজন নেতা ছিল এবং বাকেরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়েছিলেন মরহুম খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আসরবাদ 'দি-বরিশাল ইসলামিয়া আরবান সমবায় সমিতি লিঃ' এর আয়োজনে অফিস কার্যালয়ে নগরীর সদর রোডে হোটেল কিং ফিশারে এ খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন এর ৮৪তম মৃত্যু বার্ষিকী ও সকল মৃত সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এবায়েদুল হক চাঁন উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। স্মরণ সভায় দোয়া-মোনাজাত করেন- বরিশাল জামে এবাদুল্লাহ মসজিদের সম্মানিত খতিব আলহাজ হজরত মওলানা মীর্জা নুরুর রহমান বেগ।
এবায়েদুল হক চাঁন আরো বলেন, খান বাহাদুর গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হলেও লেখাপড়া করেছিলেন বরিশালে। তাই বরিশালের মানুষের কল্যাণে অনেক কার্যক্রম করে গেছেন। পর্যায়ক্রমে জনকল্যাণে খান বাহাদুরের কার্যক্রমগুলোর আংশিক বর্ণনা তুলে ধরেন। তার কার্যক্রম বরিশালবাসীর হৃদয় গহিনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
স্মরণ সভায় এবায়েদুল হক চাঁনের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন 'দি-বরিশাল ইসলামিয়া আরবান সমবায় সমিতি লিঃ' এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. জাফরউল্লাহ, বরিশাল সদর উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন, মো. মাইনুল হোসেন ও মো. ফকরুল আলম।
বক্তারা খানবাহাদুর সম্পর্কে বলেন- ১৮৬০ সালে ১৯ নভেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বরিশাল জিলা স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ঢাকা অ্যালোপেসিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে সর্ব প্রথম কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। ১৮৮৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিএ ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। ১৮৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্র পাশ করে, বরিশাল বারে ওকালতি শুরু করেন।
তিনি মুসলমানদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য ১৯১০ সালে দি- ইসলামীয়া আরবান ইসলামিয়া কো-অপারেটিভ ব্যাংক এবং ১৯১৩ সালে সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এ.কে স্কুল ও হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদ গাহ ময়দান। নারী শিক্ষা প্রসারে লক্ষ্যে জমিদার ইসমাইল চৌধুরীর আর্থিক সহায়তায় ১৯২৮ সালে হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার ছিল অগ্রণী ভূমিকা। ১৮৯৫ সালে ২২ ডিসেম্বর বরিশাল বেল ইসলামিয়া ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রাবাসের সূচনা লগ্ন থেকে খানবাহাদুরের কর্মময় জীবনের রাজনীতি সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবাসহ সব কর্মকাণ্ড শুরু হয় এই বেল ইসলামিয়া হোস্টেল থেকে। খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ আর্তমানবতা ও চিকিৎসা সেবার প্রত্যয় নিয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল এবং বরিশাল সদর হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠা লগ্নে থেকে সক্রিয় ভাবে এর সাথে জড়িত ছিল।
বরিশাল বিএম স্কুল সংলগ্ন প্রথম বরিশাল মুসলিম গোরস্তান প্রতিষ্ঠায় খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন এর ছিল বিশেষ অবদান। তিনি ১৮৮৩ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত আনজুমান-ই-হেমায়েত ইসলাম নামের সংগঠনটি আজকের আনজুমান হেমায়েত-ই-ইসলাম নামে পরিচিত। তিনি ১৯২০ সালে খেলাফত আন্দোলন ও ১৯২৭ সালে কুলকাঠী হত্যা কাণ্ডের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯১১ সালে করনেশন দরবারে হেমায়েত উদ্দিন আহমেদকে "খানবাহাদুর" উপাধি প্রদান করা হয়। খান বাহাদুর উপাধি পেয়ে তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও ছিলেন আত্মপ্রচার বিমুখ। তাঁর চেষ্টায় ১৯২৭ সালে বরিশাল হতে "নকিব" নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
তিনি ১৯২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম জুডিসিয়াল সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে অশ্বীনি কুমার দত্তকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন। ১৯৪১ সালে ২২ সেপ্টেম্বর বরিশালে দক্ষিণ বঙ্গের অবিসংবাদিত নেতা খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ ইন্তেকাল করেন। তাকে বরিশাল মুসলিম কবর স্থানে দাফন করা হয়। ১৯৬২ সালে বরিশাল পৌর সভা কীর্তিমান এই পুরুষের নামানুসারে গির্জা মহল্লা নাম "খানবাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন সড়ক" নামে নামকরণ করে। তিনি শিক্ষা আন্দোলন, সমবায় আন্দোলন, জনস্বাস্থ্য আন্দোলন, ধর্মীয় আন্দোলনসহ আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষা প্রসারে খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ এর অবদান স্বল্প পরিসরে লিখে শেষ করা যাবেনা।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com