বরিশালের গৌরনদীতে সংবাদ প্রকাশ না করেও মামলার আসামী সাংবাদিক জহির

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির এক নেতা ও ইউপি সদস্য কর্তৃক এক স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ ও ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি দিয়ে আটকে রাখার খবর এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বত্র আলোচিত হয়। এ ঘটনা ধর্ষক ছাত্রলীগ নেতার প্রতিপক্ষ লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়। স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশিত হয়। গৌরনদীর সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি সরেজমিন পরিদর্শন করলেও প্রমানের অভাবে সংবাদটি প্রকাশ করেনি। পরবর্তিতে স্থাণীয় ও রাজনৈতিক চাপে ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীকে দশ লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করে ধর্ষক ছাত্রলীগ নেতা। সিনিয়ন সাংবাদিক জহিরকে মামলা দিয়ে হয়রানি করার শর্তে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতা ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে সম্পন্ন করে দেন। নেতার কথা রাখতেই ধর্ষিতার পরিবার জহিরের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা করেছে বলে ধর্ষিতার একাধিক স্বজন জানান।

স্থানীয় লোকজন, সাংবাদিক ও পুলিশ জানান, গত জুন মাসে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটির এক নেতা ও ইউপি সদস্য কর্তৃক এক স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ ও পরিবারকে হুমকি দিয়ে আটকে রাখার খবর এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বত্র আলোচিত হয়। ধর্ষক ছাত্রলীগ নেতার প্রতিপক্ষ লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি জানার পরে গৌরনদীতে কর্মরত স্থানীয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে ওই বাড়িতে ভিড় করেন। পরের দিন স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশ করেন। প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহির অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে আমি ২৯ জুন ভিকটিমের বাড়িতে যাই। ভিকটিম ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। ফলে ভিকটিম ও তার পরিবার ঘটনার সত্যতা স্বীকার না করায় আমি কোন সংবাদ প্রকাশ করি নাই। অথচ আমার নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়।

ঘটনার অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা অসহায় ধর্ষিতার পরিবারকে ডেকে এনে তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে ধর্ষিতার বাবাসহ পরিবারকে শর্ত দেন যে, সাংবাদিক জহিরের বিরুদ্ধে মামলা করলে সে উদ্যোগ নিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দিয়ে দিবেন। ভবিষ্যতে যাতে ধর্ষক কোনভাবে ধর্ষিতাকে অবজ্ঞা না করে সেজন্য ১০ লক্ষ টাকা কাবিন করে দেয়ারও প্রলোভন দেখান। অসহায় ধর্ষিতার পরিবার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জহিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতে রাজি হন এবং থানায় মামলা করেন।

বিয়ের কাবিন ও বয়স পরির্তনের হলফনামায় দেখা গেছে, ধর্ষিতার বিয়ের বয়স না হওয়ায় কোন কাজি বিয়ে পড়াতে রাজি হননি। পরবর্তিতে ধর্ষিতার বাবা বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেড/নোটারীর মাধ্যমে গত বছর ২৭ জুন হলফনামা দিয়ে ধর্ষিতার বয়স সংশোধন করে ১৫ বছর থেকে ১৯ বছর করেন। বয়সের এভিটএভিটের কপি জমা দিয়ে গত ৯ আগষ্ট ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে সম্পন্ন করেন গৌরনদী এক কাজী। বিয়ের কাবিনে নেতার ওয়াদা অনুযায়ি দশ লক্ষ টাকা কাবিন লিখে দুই লক্ষ টাকা ওয়াশিল দেয়া হয়। বিয়ে অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন কমিটির আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন এবং বিয়ের স্বাক্ষী হিসেবে তারা স্বাক্ষর করেন।

গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে জহিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দেন। প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহির বলেন, আমি কোন সংবাদ প্রকাশ করি নাই। অথচ মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করেছে। যারা ফেইসবুক ও পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের আসামি করা হয়নি। নেতার দেয়া শর্ত পুরনে আমাকে মামলায় আসামি করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনায় জড়িতদের মামলা থেকে অব্যহতি দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ওই প্রভাবশালীর নেতার চাপে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার আগে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে তার অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন।

গৌরনদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিয়া ও গৌরনদী রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি বেলাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গৌরনদীর সিনিয়র সাংবাদিক জহিরের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমরা অনতিবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। ইতিমেধ্য মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে গৌরনদীসহ আশপাশ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশে সহ নানান কর্মসূচী পালন করেছেন।