বরিশালের কীর্তনখোলা নদী দূষণ করছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

এইচ আর হীরা॥ বরিশালে ক্রমেই বাড়ছে নদী দূষন।নদীর তল দেশে তোরী হইয়েছে ময়াল আবর্জনার স্তুপ। নাব্য সঙ্কট কাটাতে পলি অপসরণ করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে ড্রেজিং সংশ্লিষ্টরা। বালুর পরিবর্অতে ড্রেজার মেশিনের সাথে উঠে আসছে পলিথিন,বস্তা,গাড়ির টায়ারসহ নানা আবর্জনা।দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম নদীবন্দর বরিশালে অবস্থিত।

 

যে নদীবন্দর দিয়ে অভ্যন্তরীন ও দূরপাল্লার রুটে প্রতিদিন ছোট-বড় অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। এসব লঞ্চের বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাও সরসরি নদীতে হওয়ায় ধীরে ধীরে দূষিত হচ্ছে কীর্তনখোলার পানি। বরিশাল নদীবন্দর এলাকা ঘিরে বিপুল সংখ্যক মানুষের আনোগোনা ও ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পল্টুন সংলগ্ন এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।জানা গেছে, প্রতিদিন বরিশাল থেকে ঢাকা নৌরুটে প্রায় ২০টি লঞ্চ চলাচল করে।

 

উৎসব মৌসুমে এগুলোর যাত্রী সংখ্যাও থাকে প্রায় ৫০ হাজারের অধিক।সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রীরা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত পলিথিন ও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন সামগ্রী লঞ্চে কিংবা পল্টুনে বসেই সরাসরি নদীতে ফেলছে। এমনকি লঞ্চগুলোকে পরিস্কারের নামে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সরাসরি নদীতে ময়লা-আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে ফেলছে। ফলে সেসব ময়লা আবর্জনা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে এবং নদীবন্দর সংলগ্ন এলাকায় আলাদা একটি স্তর তৈরি করছে। ময়লা-আবর্জনায় রয়েছে প্লাস্টিক-পলিথিন জাতীয় অপচনশীল দ্রব্য যা ৫০০ বছরেও নষ্ট হবে না। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে অপর দিকে নদীর নাব্যতা হ্রাসে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সেই সাথে মাছ ও জলজ জীব বৈচিত্রও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

 

 

যাত্রীদের মাধ্যমে সৃষ্ট ময়লা-বর্জ্য নদীতে ফেলার কথা অস্বীকার করে এম ভি এ্যাডভেঞ্চার – ৯ লঞ্চের কর্মচারী সুমন বলেন,লঞ্চের ডেকের সকল প্রকার ময়লা- আবর্জনা ড্রামে ভর্তি করা আছে।আর পাশের ময়লা ঝাড়ু দিয়ে এখন ড্রামে ভরে পরবর্তীতে সেগুলো নির্ধারিত স্থানে ফেলা হবে। বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, একটি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা খনন কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। বরিশাল নদীবন্দর এলাকাতে সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিট এক নাগারে ড্রেজিং করেছি। কিন্তু সস্প্রতি নদীবন্দরে অহেতুক লঞ্চগুলোকে নোঙর করে রাখা এবং ড্রেজিং মেশিনের কাটারের সাথে বার বার পলিথিনসহ প্লাস্টিক সামগ্রী আটকে যাওয়ায় ৫-৬ ঘণ্টার বেশি খনন কাজ চালানো সম্ভব হয়না।

 

 

স্থানীয় একাধিক ট্রলার মাঝিরা বলেন, প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় লঞ্চগুলো পরিস্কারের নামে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা নদীর বুকে ফেলা হচ্ছে। যা কেউ নিষেধও করছে না। শীতের সময় নদীবন্দর ও আশপাশের এলাকায় পানি কমে গেলে দেখা যায় কীভাবে মাটিতে পলিথিন আটকে রয়েছে। আর তাতে পানি ও ময়লা আটকে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

 

 

বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ‘কীর্তনখোলা নদীর পানি দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি নদীর পানি দূষণকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কীর্তনখোলা নদীর যৌবন ফিরিয়ে আনতে বরিশালবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করবে জেলা প্রশাসন।

 

 

’এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, নদীতে পলিথিন, প্লাষ্টিকসহ ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য লঞ্চ কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।

 

 

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে দেশের নদী ভাঙন রোধ, নদীর সীমানা নির্ধারণ, নদীর তীর সংরক্ষণ আর নদীর নাব্যতা সংকট নিরসনে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি নদীগুলোকে দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কীর্তনখোলা নদী দখল বন্ধ ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলাসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।