বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিল এলাকা এখন লাল আর সাদা শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলা ভূমি।সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে এ বিলের পানিতে লতাপাতা গুল্মে ভরা শত সহস্র লাল ও সাদা শাপলা। এযেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশি কাঁথা । এ বিলে বর্ষার শুরুতেই ফুটতে শুরু করে শাপলা ফুল । প্রতিবছর মার্চ মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে শাপলার সিজন।
প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমির মধ্যে জন্ম নেয়া লাল,নীল ও সাদা রঙের কোটি কোটি শাপলাগুলো (waterlilly) এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সের হাজারো মানুষের ভিড় লেগে থাকে। পর্যটকদের আনাগোনায় দিনদিন মুখরিত হচ্ছে শাপলার রাজ্যখ্যাত সাতলা এলাকা। শাপলার মাঝে বাংলার চিরন্তন রূপ খুজে পাওয়া যায়। তাই শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল।
শুধু সৌন্দর্যই নয় সুস্বাদু খাবার হিসেবেও শাপলার বেশ কদর রয়েছে। শাপলা ফুলের অপরূপ শোভা সৌন্দর্য পিয়াসি মানুষকে বিমোহিত করে। শাপলার অপরূপ শোভা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় মানুষ। হাজারো ফুলের ভিড়ে শাপলা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। শাপলার মতো সরল অতচ নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মন্ডিত বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো ফুলে নেই। বাংলাদেশের সকল জায়গায় শাপলা পাওয়া যায়। তাই শাপলাকে জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মুদ্রায়ও শাপলার প্রতিচ্ছবি রয়েছে। দীঘি-নালা-খাল-বিলে পরিপূর্ণ বাংলাদেশর শাপলা ফুলের সৌন্দর্যে মুখরিত করেছে বলে শাপলাকে জাতীয় ফুল হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিলের লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটক আসে বহু দূর দূরান্ত থেকে ।
এ বিলে ভ্রমনের জন্য রয়েছে টাকার বিনিময় ছোট আকারের নৌকা। সূর্য উদয় ক্ষনে সূর্য রশ্মি পড়া মাত্রই যেন মন পাগলকরা এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভূমিতে পরিণত হয় সাতলা বিল। এ ছাড়া সন্ধ্যার সূর্য অস্তমিত মুহূর্তে মনে হয় যেন মেঘ মালায় ঢেকে যাওয়া এক অপরূপ দৃশ্য। সাতলা বিলের লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করে ক্ষনিকের জ্বালা যন্ত্রনা দূর করা যায়। এখানে এলে মন কেড়ে নেয়া দৃশ্য রেখে কারোরই মন চায় না আর ফিরে যেতে। ওই এলাকার গ্রামা লের সহজ সরল মানুষগুলো বিলের পানিতে জীবন সংগ্রামের আয়ের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছে শাপলা তোলাকে। তারা সকালের সূর্যের আলো ফোটার আগেই ছোট ছোট নৌকা নিয়ে নেমে পড়ে শাপলা বিলে শাপলা তোলার জন্য। পানির মধ্য থেকে শাপলাগুলো তুলে এনে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে শতশত পরিবার।
প্রায় দু’শত বছর ধরে সাতলার বিল গুলোতে শাপলা জন্ম হচ্ছে। ওই এলাকার প্রায় ৫০ভাগ অদিবাসী শাপলার চাষ ও বিপনন কাজের সাথে জড়িত রয়েছে। স্থানীয়রা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে সাতলা এলাকায় আবাসন ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছেন। সরকার এ শাপলা বিলকে পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত করতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। গত ১৭ আগষ্ট উজিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু সাতলার শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের জন্য কালবিলা এলাকায় একটি ছোট্র পরিসরে আবাসন নির্মানের স্থান নির্ধারন করেছেন। তিনি বলেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলা ভূমি সাতলা বিল দিনেদিনে পর্যটন এলাকায় পরিনত হওয়ায় তারা সাতলার এ শাপলা বিলকে পরিপূর্ণতায় রূপদিতে নানা মূখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
সাতলার ইউপি চেয়ারম্যান ও উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল খালেক আজাদ জানিয়েছেন, এক সময় শাপলার তেমন কোন চাহিদা না থাকায় পানিতে জন্মে পানিতেই মরে পচে যেতো। দিনে দিনে শাপলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করতে শুরু করে দিনমজুররা। এখন প্রায় সারা বছর ধরেই শাপলা পাওয়া যাওয়ায়। বিশেষ করে এ অ লের মানুষ খাদ্যের তালিকায় শাপলাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। সাতলার বুক জুড়ে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সব শ্রেনী পেশার না বয়সের মানুষ ভিড় করছে। শাপলা তোলার কাজে জড়িত দিনমজুর বেলায়েত হোসেন জানান শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে চলছে তার সংসার।
প্রতিদিন ৩/৪ শত টাকা আয় হয় তাদের । এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিনোদন ও প্রকৃতি প্রেমী মানুষের কাছে নানা সামগ্রী বিক্রী করে সে আর্থিক লাভবান হচ্ছেন। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক সুমান্ত জানান তিনি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এতদূর ছুঁটে এসেছেন ।
বরগুনার আমতলীর সুমন জানান শাপলা বিলের সৌন্দর্য অবগাহনে তিনি পুলকিত ও মুগ্ধ। একই অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন অনেকে। গত বছর তৎকালীণ বরিশাল জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান সাতলার এ শাপলা বিলের অপার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে এখানে পর্যটন কেন্দ্র করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এদিকে এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহে আলম বলেন, পর্যটকরা যাতে প্রকৃতির এ অপরূপ অপার সৌন্দর্যকে অবলিলায় অবগাহন করে দেহ-মনে প্রশান্তি পেতে পারে সেজন্য সাতলার এ শাপলা বিলা লকে পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।